০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৭:২৬:৩০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


পদ্মা বহুমুখী সেতু নানা কারণেই ব্যতিক্রম
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৬-২০২২
পদ্মা বহুমুখী সেতু নানা কারণেই ব্যতিক্রম


পদ্মা বহুমুখী সেতু বাংলাদেশের একটি পশ্চাৎপদ অংশ (বৃহত্তর খুলনা, বৃহত্তর বরিশাল,ফরিদপুর) ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। মোংলা, পায়রাবন্দর, রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামের সঙ্গে সড়ক এবং রেলপথে সংযুক্ত হবে। বাংলাদেশের শস্যভাণ্ডার সরাসরি দেশের সব অংশের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। দক্ষিণ বাংলায় শিল্পবিপ্লব সৃষ্টি হবে।

সেতুটি বাংলাদেশের জনগণের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হওয়া এক বিশাল মাইলস্টোন। এটি প্রকৃত একটিনয়, দুটি সেতু। দ্বিতল সেতুর ওপর তলায় সড়কপথ, নিচের তলায় রেলপথ, আছে গ্যাসলাইন, ফাইবার অপটিক্স ক্যাবল, পাশে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। 

পদ্মাসেতুর সঙ্গে ঢাকা থেকে যাওয়া এসব লাইনসংযোগ উক্ত অঞ্চলকে আরো সমৃদ্ধি করবে। কারণ রেললাইনটা অবহেলিত বরিশালেও যাচ্ছে। বরিশালবাসীর আজীবন চাওয়া রেল। যারা কোনোদিন রেললাইনটা দেখেনি। রেলের সুবিধা পায়নি। এবার সেটাও তারা ভোগ করবে রেললাইন বাস্তবায়িত হওয়ার পর। এছাড়াও  বিভিন্ন কলকারখানা,শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে এসব অনেক ভূমিকা পালন করবে।

এককথায় বৃহত্তর খুলনা, বৃহত্তর বরিশাল,ফরিদপুর অঞ্চল আরো সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। এটা দেশের জন্য দেশ এগিয়ে নেয়ার জন্য বিশাল বড় সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও রেললাইন চালু হলে ওইসব অঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগটা আরো কম খরচে পণ্য পৌঁছে যাওয়ার একটা মাধ্যম তৈরি হয়ে যাবে, যা উত্তরবঙ্গের মানুষ সুবিধাবঞ্চিত হতো। পণ্য নিয়ে ঘাটে ঘাটে বিড়ম্বনা হতো। সেটা এখন আর বঙ্গবন্ধু সেতুর জন্য হচ্ছেনা। দ্রুতই সব পণ্য চলে যাবে ঢাকাতে। 

তেমনি ওই অঞ্চলের পণ্যও ঢাকা ও দেশের বাইরে পাঠাতে দ্রততম সময় ও কম খরচে ব্যবস্থাকরণ সহজ হয়ে যাবে। এটা সত্যিকার অর্থেই উক্ত এলাকার জন্য একটি যুগান্তকারী মাইলফলক, যা কেবল ওই অঞ্চলের মানুষ ও ভুক্তভোগীরাই অনুভব করতে পারবেন। ফলে আমি বলবো- ঠান্ডা মাথায় কান লাগিয়ে দলমত নির্বিশেষে বৃহত্তর খুলনা, বৃহত্তর বরিশাল,ফরিদপুরের মানুষের প্রাণের কথা শুনুন। তাদের অনুভূতিটা জানুন। এরপর সমালোচনা করুন। দেখবেন চিন্তাধারা,সমালোচনার ধারা বদলে যাবে। বিরোধিতা করার অনেক কিছু আছে। পদ্মাসেতু নিয়ে নয়, এটা অসাধারণ একটা কিছু।  

মিসিসিপি নদীর পর দ্বিতীয় বৃহত্তর পরিসরে সবচেয়ে বেশি পানিপ্রবাহ চ্যানেলে পদ্মাসেতু নির্মাণে বসানো হয়েছে কিছু পাইল, যা মূলত একটি ৩০তলা সমান নদী তলদেশের গভীরে স্থাপন করতে হয়েছে। সেতুটি ৯.৫ রিখটার মাত্রার পর্যন্ত ভূ-কম্পন সহনীয়। সেতুতে অনেক উপকরণ এবং কিছু বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে। দুনিয়ার অন্য কোনো সেতুর সাথে এটি তুলনা করার আগে বিস্তারিত জেনে নিলে ভালো হয়। এখানে সেতুর খরচ নিয়ে কিছু বলছি না। শুধু বলছি, সেতুটির আর্থ-সামাজিক গুরুত্ব এবং ইউনিক নির্মাণশৈলী বিষয়ে। ভাবতে পারেন ৬-৮ মিনিট প্রমত্তা পদ্মা পার হয়ে যাবেন। জেগে উঠবে অবহেলিত বিশাল জনপদ।  

এখন পার্লামেন্টে এবং রাজনীতির ময়দানে নানা কথা বলে বিএনপি গণবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। আমি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার বিষোদগার শুনেছি। এভাবে কথা বলার আগে বিস্তারিত জেনে কথা বলা উচিত। ওনাদের বচন এবং বাচনভঙ্গি দেশের বিশাল অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে আহত করছে। রাজনীতির খাতিরে বিরোধিতা করা এক জিনিস আর দেশের মানুষের সেন্টিমেন্ট নিয়ে হেলাফেলা ভিন্ন জিনিস। সেতুটি বাংলাদেশের জনগণের অর্থে শেষ করার কৃতিত্ব বর্তমান সরকার দাবি করতেই পারে। 

শুধু যে বিএনপি নেতৃবৃন্দ, তাই নয়। সরকারের মন্ত্রীদের আরেকটু সতর্কতার সঙ্গে কথা বলা সমীচীন। সেতুটি বাংলাদেশের গৌরব আর গর্বের প্রতীক। বোঝা উচিত, কেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নদীর নামে নাম দিয়েছেন। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বাংলাদেশের ঠিকানা। 

আমি বিভিন্ন সময়ে সেতু বিষয়ে আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক প্রয়াত ডক্টর জামিলুর রেজা চৌধুরী স্যারের সাথে কথা বলেছি পদ্মা নদীর বৈশিষ্ট, নদী তলদেশের কার্যক্রমের আকার-প্রকৃতি নিয়ে অনেক পড়েছি। সেতুর ব্যয় বিশ্লেষণ দেখেছি, করোনা সময়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নির্মাণযজ্ঞ অব্যাহত থাকার কার্যক্রম দেখেছি। সেতুটির সফল বাস্তবায়ন বিশ্বসভায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল করবে।

ব্যাপক জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। বিএনপির রাজনীতির জন্য বিষোদগার ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।


শেয়ার করুন