জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, এখন সময় আছে তরুণ প্রজন্মকে সৌর শক্তি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে তারাই পারবে পরবর্তী নীতি তৈরি করতে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নবায়নযোগ্য শক্তিতে দ্রুত রূপান্তরের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনায় তিনি একথা বলেন।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, আমাদের দ্রুত নবায়ণযোগ্য জ্বালানি স্থানান্তর এ বিশ্বে মডেল হওয়ার সুযোগ ছিল। আমাদের কয়লার উৎপাদন নেই সেক্ষেত্রে আমাদের খুব সহজে জ্বীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বের হয়ে নবায়ণযোগ্য জ্বালানির দিকে আসতে পারতাম। জাপান, রাশিয়া, চীন, আমেরিকা নিজেদের জ্বীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন থেকে বের হতে পারছে না। কিন্তু আমরা সে সুযোগ হারিয়েছি।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত হল “নবায়নযোগ্য শক্তির রূপান্তর: চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ” শীর্ষক সেমিনার। ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ-এর যৌথ আয়োজনে সিরডাপ (CIRDAP)-এর এটিএম শামসুল হক অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ ও তরুণ জলবায়ু কর্মীরা অংশ নেন।
সেমিনারের বক্তারা একমত হন যে, জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা কমাতে এবং একটি সবুজ ও ন্যায্য ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও দ্রুত রূপান্তর কৌশল প্রণয়ন অপরিহার্য। তবে, এই ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সক্ষমতার অভাব, অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা এবং সমন্বিত নীতির অনুপস্থিতি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
ধরা’র উপদেষ্টা ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন এর সাবেক চেয়ারম্যান ড. মজিবুর রহমান হাওলাদার-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে মূল বক্তব্য পেশ করেন নবায়ণযোগ্য শক্তি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. সাজেদ কামাল, ব্রান্ডাইস ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, মো. আশিকুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ড. শাকিলা আজিজ, সহকারি অধ্যাপক, স্কুল অফ বিজনেস এন্ড ইকোনমিকস, ইউনাইটেড ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটি, শফিকুল আলম, লিড এনার্জি অ্যানালিস্ট ফর বাংলাদেশ, ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (IEEFA), ড. শওকত আরা বেগম, বাংলাদেশ প্রোগ্রাম ডিরেক্টর, তারা ক্লাইমেট ফাউন্ডেশন, শরীফ জামিল, সদস্য সচিব, ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)।
ড. মজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন দেশের আইন ও নীতিগত পরিস্থিতির কারনে জ্বীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে এসে নবায়ণযোগ্য জ্বালানিতে রুপান্তর সম্ভব হচ্ছে না। নবায়ণযোগ্য জ্বালানিতে দ্রুত রুপান্তরের জন্য সরকারি-বেসরকারি ও সকল শ্রেনী পেশার মানুষকে একযোগে কাজ করতে হবে।
ড. সাজেদ কামাল সেমিনারের মূল বক্তব্যে নবায়ণযোগ্য শক্তির বিভিন্ন উদ্ভাবনী নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন জ্বীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়ণযোগ্য শক্তিতে রুপান্তরের জন্য লাগবে নতুন নতুন উদ্ভাবন। বিশ্বের নানা অঞ্চলের মানুষ সেখানকার প্রয়োজনীয়তা বা স্থানীয় চাহিদার উপর নির্ভর করে সৌর শক্তি বা নবায়ণযোগ্য শক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবন তৈরি করেছে। বাংলাদেশের চাহিদা এবং ভৌগলিক অবস্থান এর উপর নির্ভর করেও উদ্ভাবনে যেতে হবে।
মো. আশিকুর রহমান বাংলাদেশের সৌর শক্তির বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন এবং গবেষণা প্রতিবেদন পেশ করেন। তিনি তার গবেষণার তথ্যে বলেন বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ চাহিদার ৫.২২% নবায়ণযোগ্য শক্তির মাধ্যমে পূরণ হচ্ছে। যা আগামী ২০৩০ এ ১১% এ উন্নিত করা হবে। কিন্তু বাংলাদেশে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল ব্যবহারে তিনি অনেক জমির ব্যবহার, মানুষের অভ্যাস এবং কৃষি জমির ব্যবহারকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
ড. শাকিলা আজিজ বাংলাদেশের নবায়ণযোগ্য শক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে সূর্যের রেডিয়েশন বেশি সেখানে সৌর শক্তি উৎপাদন বেশি হবে, আমাদের উপকুলে অঞ্চলে বাতাস, বাসার ছাদ, সরকারি খাস জমি ব্যবহার বাড়াতে পারলে আমাদের দেশে নবায়ণযোগ্য শক্তির উৎপাদন সম্ভব। আমাদের বক্সের বাইরে চিন্তা করতে হবে।
শফিকুল আলম বলেন এখনও আমরা বিদ্যুতের জন্য আমদানির উপর নির্ভরশীল। আমাদের নবায়ণযোগ্য শক্তি উৎপাদনকে জাতীয় গ্রীডে যুক্ত করা জরুরী।
ড. শওকত আরা বেগম বলেন পৃথিবীর তাপমাত্রা কমানোর জন্য আমরা কাজ করি। আমাদের জ্বীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বের হয়ে নবায়ণযোগ্য জ্বালানিতে যাওয়া জরুরী।
শরীফ জামিল বলেন যত দ্রুত সম্ভব আমাদেরকে নবায়ণযোগ্য শক্তির রুপান্তরের দিকে যেতে হবে। কারন বর্তমানে বাংলাদেশের যেসকল জায়গায় জ্বীবাশ্ম জ্বালানির প্ল্যান্ট হয়েছে সেখানে পরিবেশ ও মানবিক বিপর্যয়ের চরমমাত্রায় পৌছিয়েছে। এদেশের মানুষকে এবং পরিবেশকে বাঁচাতে এখনি দ্রুত রুপান্তরের দিকে যেতে হবে।
এছাড়া তরুণ জলবায়ু সংগঠনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন সোহানুর রহমান, পরিচালক, ব্রাইটারস, যুবায়ের প্রতিম, লিড সেইফগার্ড এন্ড পলিসি মেকিং, ক্লাইমেট ফ্রন্টিয়ার, শামস খান, নির্বাহী পরিচালক, গ্লোবাল ল’ থিংকার্স সোসাইটি, আহসান রনি, নির্বাহী পরিচালক, মিশন গ্রীন বাংলাদেশ, আসাদুজ্জামান তুহিন, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ওএবি ফাউন্ডেশন, মাস্তুরা খাতুন, ফোকাল পয়েন্ট জেন্ডার জাস্টিস এন্ড ইকুইটি, ইয়োথ এনভায়রণমেন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন।
সেমিনারে মুক্ত আলোচনায় বক্তারা একমত হন যে, এই রূপান্তর প্রক্রিয়াকে সফল করতে সরকার, সুশীল সমাজ, শিক্ষাবিদ এবং বেসরকারি খাতকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। আয়োজক সংস্থা ধরা এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ আশা করে এই আলোচনা নীতিনির্ধারক মহলে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে এবং টেকসই সবুজ জ্বালানি ভবিষ্যৎ নির্মাণে সহায়ক হবে।