১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, বুধবার, ১১:৩৩:০১ অপরাহ্ন


নির্বাচনের সূচি ঘোষিত হলো
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-১২-২০২৫
নির্বাচনের সূচি ঘোষিত হলো নির্বাচন কমিশন ভবন


দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ঘোষিত হলো জাতীয় নির্বাচন এবং যুগপৎভাবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বিষয়ে গণভোটের সময়সূচি। সবকিছু পরিকল্পনা মত বাস্তবায়িত হলে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। কিন্তু নানাবিধ কারণে জনমনে সংশয়, সন্দেহ জাতীয় নির্বাচন, গণভোট প্রকৃতপক্ষে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা? নির্বাচনে থাকবে না দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং সমমনা কয়েকটি রাজনৈতিক দল। যে কোন বিবেচনায় দেশে এখনো ২০-৩০ শতাংশ ভোটারের সুযোগ থাকবে না, তাদের পছন্দের দল বা প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ।

সংগত কারণেই বলা যায় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না। উল্লেখ্য, ১৯৯০-এর গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও প্রেসিডেন্ট এরশাদ নেতৃত্বের জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়নি। যে নির্বাচনে ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের অংশীদার  জামায়াতে ইসলামী অংশগ্রহণ করবে সেই নির্বাচনে মেটিকুলাস ডিজাইনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে বিতর্কিত সিদ্ধান্তে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা কতটা আইনসিদ্ধ বা বাস্তব সম্মত সেটি ভবিষ্যৎ বলে দেবে। 

একটি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করতে হলে সেই সিদ্ধান্ত একটি নির্বাচিত সরকারকে পার্লিয়ামেন্টে বৈধ কারণ দেখিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ কোনো আন্তর্জাতিক মানের বিচার ব্যবস্থায় প্রমাণিত হয়নি। এমনি অবস্থায় ২০-৩০ শতাংশ ভোটারকে নিজেদের পছন্দের প্রার্থী বেছে নেওয়ার সুযোগবঞ্চিত রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠান গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হবে না। এমন অবস্থায় বঞ্চিত রাজনৈতিক শক্তি বয়কটের ঘোষণা দিলে নির্বাচনকালে ব্যাপক সংঘর্ষ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে।

এরপর আসুন গণভোট প্রসঙ্গে। দেশে এখনো সংবিধান বহাল আছে। বর্তমান সরকার সংবিধানের অধীনে বিতর্কিত উপায়ে রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সংবিধান অনুযায়ী শপথ নিয়েছে। সংবিধানে কিন্তু গণভোটের সংস্থান নেই। উপরন্তু গণভোটে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন বিষয়ে অধিকাংশ সাধারণ ভোটার দূরের কথা, অধিকাংশ নির্বাচন প্রার্থীর ধারণা আছে বলে মনে হয় না। একই সময়ে জাতীয় নির্বাচন এবং গণভোট জটিলতার সৃষ্টি করলে অবাক হবো না।

যে কোনো নির্বাচনের সাফল্য নির্ভর করে নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় থাকা বিপুল জনগোষ্ঠীর নিরপেক্ষতা এবং দক্ষতার ওপর। সরকার বিভিন্ন জেলায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ওসিদের কোনো কোনো ক্ষেত্রে লটারির মাধ্যমে নিয়োগ করেছে। মাঠপর্যায়ে প্রশাসন কতটা নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা করতে পারবে সংশয় আছে। দেশে বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক। নানা দাবি দাওয়া নিয়ে প্রতিদিন খোদ রাজধানীর রাজপথে অরাজকতা সৃষ্টি হচ্ছে। দেশব্যাপী মব সন্ত্রাসের আতঙ্ক আছে। টার্গেট কিলিং শঙ্কা আছে। এমতাবস্থায় নির্বাচনকালে আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখা হবে বিশাল চ্যালেঞ্জ।

তারপরও দেশের বর্তমান অবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন। নির্বাচন হবে মূলত বিএনপি এবং  জামায়াতে ইসলামী দুটি প্রধান দলের মধ্যে। বাকি দলগুলোর মধ্যে ছাত্র যুবকদের দল এনসিপি ভোটের মাঠে কতটা সফল হবে নিশ্চিত নই। বিভিন্ন স্যাটেলাইট দলগুলো বড় দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনী জোট গড়েছে। তবে সব দলকে নিজেদের নির্বাচনী মার্কা ব্যবহার করতে হবে। জানি না আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ ঘরনার ভোটাররা নির্বাচনে আসবে কিনা। এই ভোটারদের ভোট আকর্ষণে নেপথ্যে কাজ চলছে। এখন দেখতে হবে ভোট অনুষ্ঠান পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয় কিনা।

শেয়ার করুন