০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:৫৮:৩৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


অসহনীয় ঢাকা সম্ভাবনাময় ঢাকা
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৮-২০২২
অসহনীয় ঢাকা সম্ভাবনাময় ঢাকা


জাকার্তা, নয়াদিল্লি, ব্যাংকক, কুয়ালামপুরের যানজট দেখেছি। এমনকি কাবুল শহরের যান জটের তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু প্রতিবার নির্দিষ্ট বিরতিতে অনেক পরিকল্পনা করে অস্ট্রেলিয়া থেকে ঢাকায় এসে অনেকভাবেই পরিকল্পনা ঢেলে সাজাতে হয় ঢাকার পরিকল্পনাহীন,নিয়ন্ত্রণহীন যান জটের কারণে। ভুক্তাভোগী মাত্রই জানেন, প্রতিদিন কর্মসময়ে যানজটে স্থবির হয়ে থাকে জনজীবন। মূল্যবান কর্ম সময় নষ্ট হয়ে শামুকের চেয়েও ধীর গতিতে চলা মহা যানজটে। যানজটে জ্বালানির প্রচুর অপচয় হয়,শব্দ দূষণ ও বায়ু দূষণ হয়। নীরব ঘাতকের মতোই বাতাসে মিশে থাকা কার্বন, সিলিকোন,সালফার ফুস ফুস আর শেষ যন্ত্র দুর্বল করে দেয়। উত্তরা থেকে মতিঝিল বা মীরপুর থেকে মতিঝিল খুব একটা বেশি দূরত্ব বলা যাবে না। দুনিয়ার অনেক দেশে মানুষ এই পথ পায়ে হেঁটে বা বড় জোর সাইকেলে চড়ে পাড়ি দিতে পারে। 

শহরে সড়ক মহাসড়ক প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল, ফুটপাথগুলো বেদখল হয়ে গেছে।  একে সঙ্গে চলছে নগর জুড়ে মেগা প্রজেক্টসসমূহের নামে অগোছালো কর্ম যোগ্য। ঢাকা মহানগরীতে এখন ২ কোটির বেশি মানুষ বাস করে। ক্ষুদ্র এই মহানগরীর জনসংখ্যা এখন গোটা অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের সমান। মহানগরীর জনারণ্য নিয়ে ঢাকা এখন বসবাসের জন্য বিশ্বের নিকৃষ্টতম শহরগুলো অন্যতম। শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণ, পরিবেশ দূষণ আর পানি দূষণের ক্ষেত্রেই নিকৃষ্ট শহর গুলোর তালিকায়। দীর্ঘদিন বসবাসের জন্য বিশ্বের অন্যতম সেরা শহর মেলবোর্ন বাস করে ঢাকার পরিস্থিতি সহজেই অনুভব করতে পারি। নিজের দেশ, সে দেশের ঐতিহাসিক রাজধানী নিয়ে গর্ব আছে। কিন্তু বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে ফোরামে যখন পরিবেশ দূষণ নিয়ে আলোচনা হয়, তখন বিব্রত বোধ করি ঢাকার রেফারেন্স আসলেই।

অথচ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঢাকার অনেক প্রাকৃতিক সুবিধা ছিল। দুনিয়ার অনেক মহানগর একটি যদি কেনেডির করে গড়ে উঠেছে। রাজধানী ঢাকার অভ্যন্তরে চারচারটি নদী। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা,বালু,তুরাগ নদীগুলোই হতে পারতো ঢাকা বাঁশির প্রাণ ভোমরা। কিন্তু আগ্রাসী জনগোষ্ঠীর লালসার শিকার হয়ে নদীগুলো মৃতপ্রায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখান হয়ে, অব্যাহত দূষণে নদীগুলো জলজ প্রাণীর জন্য নিরাপদ নয়। অথচ বহমান নদীগুলো হতে প্রতি ঢাকার যাতায়াত ব্যাবস্থার মূল অবলম্বন, সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট করে নগরবাসীর বিশুদ্ধ জল সরবরাহের মূল সূত্র। একসময় টেমস নদী, রাইন নদী, পোটোম্যাক, ব্রিসবেন, ইয়ারা, দজলা, ফোরাত আর ইউফ্রেটিসের মতো বলা হতো ”বুড়িগঙ্গা পাড়ে ঢাকা”।

যদিও সারা ঢাকা জুড়ে জালের মতো বিস্তারিত ছিল খাল,জলাশয়। দখল ভরাটের কবলে পরে অধিকাংশ অস্তিত্বহীন। কংক্রিটের বস্তির এই শহরে বেঁচে থাকা নদী,খালগুলো ভীষণ মাত্রায় দূষিত। ঢাকাকে বাঁচাতে হলে যুদ্ধ ঘোষণা করে হলে নদী, খাল উদ্ধার করে জলপথে যোগাযোগের সুলভ ব্যবস্থা নিশ্চিত  করতে হবে। সরকারের গৃহীত বহুমুখী প্রচেষ্টা এখন পর্যন্ত খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নিজনজনগণকে সম্পৃক্ত না করার কারণে।সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, পরিবেশ অধিদপ্তর, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসমূহ,নদী  গবেষণা পরিদস্তর, সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান, এনজিও, মিডিয়া,সিভিল সোসাইটিকে সম্পৃক্ত করে অভিলম্বে নদী- খাল উদ্ধার সংস্কার কার্যক্রম জোরদার করা অত্যাবশ্যক।

সিটি সার্কুলার জলপথ, সিটি সার্কুলার সড়ক, রেলপথ মুক্তি দিতে পারে অসননীয় যানজট থেকে। সেই সঙ্গে নদী খনন করে ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হলে বন্যা, জলবদ্ধতা থেকে রক্ষা পেতে পারে ঢাকা। খালগুলো উদ্ধারের কার্যক্রম সুসংহত হলে ৫ বছরের মধ্যে ঢাকা মহানগরীকে আমস্টারডাম বা ভেনিসের আদলে গড়ে তোলা যায়। ঢাকার অন্যতম প্রধান সমস্যা সুপেয় পানি সরবরাহ। ক্রমাগত ডিপ টিউব অয়েল দিয়ে পানি উঠানোর কারণে মাটির নিচের পানির স্তর আশংকাজনকভাবে কমে গেছে। সারফেস ওয়াটার ব্যবহার বৃদ্ধি করার জন্যও নদীগুলো উদ্ধার, ওয়েস্ট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট জরুরি। মহানগরের সুপেয় পানির সংস্থান বৃদ্ধি একান্ত অপরিহার্য। দরকার হলে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করে হলেও কাজ গুলো করা যেতে পারে। এই সব কাজে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ জনসাধারণকে এগিয়ে আসতে হবে হাতে হাত মিলিয়ে। 

মহানগর পরিকল্পনায় ঢাকা  থেকে ৫০% জনগোষ্ঠী ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করার বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নিতে হবে। অনেক দিন ধরেই নাগর কেন্দ্র থেকে তৈরি পোশাক কারখানাসহ অন্যান্য কল কারকারখানা স্থানান্তর করার কথা শুনেছি। শুধুমাত্র তৈরি পোশাক কারখাগুলো পরিকল্পিত উপায়ে গার্মেন্টস পল্লীতে সরানো হলে ৩০-৪০ লক্ষ জনগোষ্ঠীকে ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করা যায়। শুনতে অসম্ভব মনে হলেও পিলখানা বিজিবি হেডকোয়ার্টার, পুরনো এয়ারপোর্টে বিমান বাহিনী স্থাপনা, এমনকি ঢাকা সেনানিবাসের দাপ্তরিক কার্যক্রম ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করার বিষয় বিবেচনার সময় এসেছে। নগর কেন্দ্রে জেঁকে বসে থাকা সচিবালয়, বিদ্যুৎ ভবন, রেল ভবন, আদালত পাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, অসংখ্য স্কুল, কলেজ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ক্লিনিক, হাসপাতাল ঢাকার টুটি চেপে ধরে আছে। এগুলো বর্তমান স্থানে রেখে কোনোভাবেই ঢাকার যানজট মুক্ত হবে না।

ঢাকা মহানগরীর উন্নয়নের মূল দায়িত্ব অর্পিত থাকা উচিৎ দুই সিটি কর্পোরেশন মেয়রের উপর। তাদের সার্বিক সমন্বয়ে অন্যান্য উৎসগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করলে অনেক প্রজেক্ট দ্রুত বাবস্তবায়ন হবে। এই কাজটি করতে হলে সুনির্দিষ্ট কর্ম পরিধি দিয়ে জাতীয় সংসদে অবিলম্বে সিটি গভর্নেন্স এ্যাট পাশ করা যেতে পারে। 

হয়তো সরকার মনে করছে, মেট্রো রেল, এলেভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের সঙ্গে পিটাল রেল সকল সমস্যার সমাধান হবে। আমি ঢাকার বাতাসে এখন সালফার দি অক্সাইড, মিথেন, সিলিকন, কার্বন ডাইঅক্সাইড অনুভব করতে পারি প্রতিদিন এগুলো নীরব ঘাতক হয়ে ঢাকাবাসীর ফুসফুস, হৃদপিন্ড কলুষিত করছে। শিশুদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে সবচেয়ে বেশি। সময়ের চাহিদা বিবেচনায় ঢাকা মহানগর পরিকল্পনা লাগসই করে বলবে- ঢাকাকে রক্ষার যুদ্ধ সূচনা জরুরি। এই পথেই জ্বালানি, জল, স্বাস্থসেবা, শিক্ষা, নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। আধুনিক ঢাকা নান্দনিক, তিলোত্তমা হয়ে উঠবে।


শেয়ার করুন