১
আওয়ামী লীগ শাষনের ২য় মেয়াদের শেষের দিকে বাংলা দেশে বেড়াতে গেছি । বাংলাদেশ ভ্রমণ মুলত নিজ শহর সিলেটে আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা করা , পাড়া মহল্লায় ছোটবেলার বন্ধু-বান্ধবের আড্ডা দিয়ে আনন্দময় সময় কাটানো ই ত্যাদি । আমার বন্ধু এক সময়ের তোখর বাম পন্থী ছাত্রনেতা এবং পরে বাম সংগঠন করেন
কিন্তু জীবন ও জীবিকার তাগিদে পৈতৃক ব্যবসা দেখাশোনা এবং স্হানীয় সামাজিক কার্য ক্রমে যুক্ত থেকে কাল অতিবাহীত করছেন । দলের পুরানো কমরেডদের তার বাড়ীতে আশ্রয় ও ক্ষেত্র বিষেশে এখনও চাঁদা টাদা ও দেন । সিলেট গেলে তার অফিসে বসে বেশ আড্ডা হয় । আমি ওর রুমের দরজার সামনে দাড়াতেই বন্ধুর মুখ থেকে আওয়াজ এলো , “বান্দীর পোয়া ( বাঁদীর ছেলে)“ এটি সিলেটের এক সাধারন গালি । এ গালির পশ্চাদপদ ও উৎপত্তির ব্যাপারে পরের গল্পে হবে । আপাদত থতমত খেয়ে দাড়িয়ে পড়লাম । “ তোমাকে না , বস সব বলছি “ । ভালো করে দেখলাম বন্ধু সেল ফোনে কার সাথে কথা বলছিল । ব্যাপারটা সরকারের শেষ শেখ হাসিনা বাম ঘরনার দল থেকে দু তিন জনকে মন্ত্রী সভায় অন্তরভুক্ত করেছেন । মন্ত্রীদের কার্য ক্রম মুলত আমলারা করেন কিন্তু মন্ত্রী চাইলে রাজনৈতিক বিবেচনায় একজনকে এপিএস বা সহকারী হিসাবে নিতে পারেন । ছোট দল থেকে এক জন মন্ত্রী হলে কি হবে, মন্ত্রী ত মন্ত্রী তার এ পি এস ত দাপুটে হবেন । সারা জীবন সে রাস্তা, গ্রামে গন্জে রাজনীতি । দলের সহকর্মীদের দয়ায় আহার বাসস্থান ।ছোট ছোট চাঁদার টাকায় জীবন । সেখান থেকে মন্ত্রলালয় । কোন সময় কম খেয়ে অভ্যাস থাকলে , হঠাৎ বেশী খেলে পেট খারাপ হয়ে বদহজম হয়ে যায় । আমাদের এ পি এস মোহোদয়ের এ অবস্হা হয়েছিল । তিনি কোনো কারনে সিলেট এসেছেন এবং উঠেছেন সার্কিট হাউসে, যেখানে সরকারের ভি আই পি রা উঠেন । যার বদান্যতায় অর্থাৎ আমার বন্ধু, মহোদয়ের পূর্ববরতী জীবনে সিলেটে যাবতীয় কর্ম কান্ড, চলাফেরা ও খাওয়া- দাওয়া , এমনকি যাওয়ার সময় গাড়ীর ভাড়া ও চলত , তাকেই তার অবস্হান দেখাতে লাগলেন । ভাবখানা এই , এখন আগের মধুসুদন নই যে তোমার টঙ্গী ঘরের চকিতে ঘুমাবো, এখন সার্কিট হাউসের ভি আই পি রুমে থাকি । মোহদয় সার্কিট হাউসের ভি আই পি রুম থেকে কল দিয়ে বন্ধুকে বললেন যে, তিনি সরকারী কাজে সিলেট এসেছেন এবং সরকারী ভি আই পি মেহমানখানায় উঠেছেন । আমার বন্ধু যেন কয়েক ঝুড়ি কমলা এবং ১০ কেজি চা নিয়ে তার সরকারি মেহমান খানায় হাজির হন । আমি সে কলের শেষের দিকে তার অফিসে উপস্হিত হই । গল্পের শুরুটা এখানে । বলা বাহুল্য সিলেট চা এবং কমলা লেবুর জন্য বিখ্যাত । বন্ধু শ্রেনী বিন্যাসের রাজনীতি করলেও পারিবারিক ভাবে উচ্চ শ্রেনীর লোক এবং সে শ্রেনীর ইগোটা পুরোই আছে । ফোন টা তার সে ইগোতে পুরোপুরি আঘাত হেনেছে । ফোন রেখেই , আমার ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা না করে , মেসিনগানের মত গালি দিতে লাগল । বান্দীর পোয়া, নটীর পোয়া দিয়ে শুরু তারপর মা মাসি যাবতীয় অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তুলে কয়েক লাইন গালি দিতে লাগল । শেষ কথা হল, বান্দীর পোয়া রে জীবনের জন্য চা খওয়া ছাড়ামু । সিলেটে আসলেই চা এর ব্যাপারটা আসে এবং আমরা সিলেটিরাও চা এর উৎপাদন ও গৌরবে একত্রীভূত । সিলেট কি চা এর আদি নিবাস ?
২
চা এর বোটানিকেল নাম হল Camellia Sinensis. কেমেলিয়া সিনেনসিস . এবং আরেক প্রজাতিকে Camellia assamica বলা হয় । তা ছাড়াও বোটানিষ্টরা Thea viridis, Thea sinensis,Thea bohea, Camellia Theo feta, Camellia Thea এবং Camellia bohea প্রবৃতি নামে ডেকে থাকেন । কিন্তু প্রথম দুটি নামই স্বতসিদ্ধ ।প্রথম চা পান করার অস্তিত্ব পাওয়া যায় পাঁচ শত হাজার বছর পূর্বে । প্যালিওলিথিক (Paleolithic )যুগে চীন দেশে । উপকথা বলে খ্রীষ্ট পূর্ব ৩০০০ অব্দে চা পান শুরু হয় । কিংবদন্তীর চীনা সম্রাট সেন নাং (Shen Nung) হচ্ছেন প্রথম মানব যিনি মানবজাতির মধ্যে চা য়ের স্বাধ নেন । চীনা রূপকথা অনুযায়ী সেন নাং হচ্ছেন চীনা জাতির তিন জন আগস্ট এর এক জন শাষক । প্রথম জন হচ্ছেন সাম্রাজ্ঞী নূ ওয়া (Nu Wa) । তিনি চীনা জাতির মা হিসাবে কথিত । সেন নাং এর সময় থেকে চা কে চীনে ঔষুধি গন্য করা হয় । ১৫০০ শতাব্দীতে চীনা নৌ বাহিনী বিশ্বের সর্ব শ্রেষ্ট নৌ বাহীনি ছিল । এডমিরাল ঝেং (Zheng) এর নেতৃত্বে চীনা নৌ বাহীনি ভিয়েতনাম, জাভা, সুমাত্রা, শ্রীলঙ্কা এবং আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে দাপটের সাথে ঘুরে বেড়াত । জাহাজের ভ্রমনের সাথে চীনে উৎপাদিত চা কে মুলত বানিজ্যিক পন্য হিসাবে প্রমট করা হত । শতাব্দীর মধ্যভাগে চীনের জাহাজ নির্মাণ হঠাৎ করে কমে যায় এবং তাদের জাহাজ বানানো আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায় । চীনা সম্রাটরা বাহিরের সাথে তাদের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় । ১৬০০ শতাব্দীর শেষের দিকে ইউরোপিয়ানদের উদ্যোগে সমুদ্র বানিজ্যের ব্যাপক বিস্তার ঘটে । ১৪৯৭ সালে পূর্তগীজ নাবিক ভাস্কো ডা গামা দক্ষিন আফ্রিকার উত্তম আশা অন্তরীপ (Cape of Good hope) হয়ে ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষের সমুদ্র পথ আবিষ্কার করেন । যা ইউরোপের সাথে ভারতবর্ষের ব্যবসা পুরোপুরি খুলে দেয় । ১৫৫৭ সালে পূর্তগাল বরতমান চীনের ম্যাকাও দ্বীপে চীনা সম্রাটের কাছ থেকে বানিজ্য কুটি স্হাপনের অনুমতি পায় । যাকে ফ্যাক্টরী বলা হত । ম্যাকাও দ্বীপে ফ্যাক্টরী খুলার অনুমতির জন্য পূর্তগীজ বনিকরা বছরের পর বছর ধরে চীনা সম্রাটদের কাছে ধরনা দিয়েছে । খ্রীষ্টান পূর্তগীজ পাদ্রীরা চায়ের স্বাধ ইউরোপে নিয়ে যান । জেসুট পাদ্রী জাসপার ডি ক্রজ প্রথমে চীনের সাথে ব্যবসা করার বানিজ্যিক লাইসেন্স পান এবং ব্যাপকভাবে চা এর স্বাধ ইউরোপে নিয়ে আসেন । একই সময় বৃটিশ রা ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী করে ভারতবর্ষে ব্যবসা শুরু করে । ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর বনিকের মানদন্ড ভারতবর্ষে শাষকের রাজদন্ডে রূপান্তর ঘটে । ১৬৫৭ সালে ওলন্দাজরা বৃটেনে চা নিয়ে আসে ।বৃটিশ রা ক্রমে চা পছন্দ করতে শুরু করে । ১৬৬২ সালে ইংল্যান্ডের রাজা চারলস দুই (Charles II) এর সাথে পূর্তগীজ রাজকুমারী ক্যাথরীন অফ বারগানজার (Catherine of Braganza) বিয়ে হয় । ক্যাথরীন ওলন্দাজ রাজধানীতে বড় হোন । ওলন্দাজ রাজধানীতে চায়ের কদর খুব বেশী ছিল এবং চা নিয়ে সমাজের উচ্চ মহলে আভিজ্যাত্য ছিল । ক্যাথরীন একজন ভাল চা পানকারী ছিলেন । তিনি বৃটেনের রাজকীয় অভিজাত মহলে চা পানের প্রবর্তন করেন । বৃটেনে চা আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা লাভ করে । বৃটেনের রাজা চা থেকে সবচেয়ে বেশী শুল্ক লাভ করতে থাকেন । সাথে সাথে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী চায়ের বড় এবং প্রধান বানিজ্যকারী হয়ে উঠে । তারা ভারতবর্ষে জোর করে কৃষকদের জমি কেড়ে নিয়ে জোর করে আফিম উৎপাদন শুরু করে এবং তা চীনে রফতানী করে বিনিময়ে চা নিয়ে ইংল্যান্ডে প্রচুর মুনাফা লাভ করতে থাকে । ব্যবসা এ ভাবে ভালই চলছিল , কিন্তু চীনা জাতি আফিমের আসক্ত হয়ে যেতে থাকে । আফিম আসক্তী চীনে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করিতেছিল । এমনকি এক চীনা রাজকুমার আফিম আসক্তিতে মৃত্যু বর্ন করেন । এক পর পরই চীনা সরকার ১৮৩৯ সালে কেনটন বর্তমান গোয়াংজো (Guangzhou) বৃটিশ বানিজ্যিক ওয়ারহাউস থেক ২০,০০০ চেষ্টা
বা ১৪০০ টনের মত আফিম নষ্ট করে ফেলে । একই সময় এক বৃটিশ সৈন্য মাতাল অবস্হায় চীনা গ্রাম বাসীকে হত্যা করে । চীনা সরকার আফিম আমদানী বন্ধ করে দেয় । ফলে চীন এবং বৃটেনের মধ্যে উত্তেজনা যুদ্ধে রূপ নেয় । ইতিহাসে তা প্রথম আফিম যুদ্ধ নামে পরিচিত । যুদ্ধে চীন হেরে যায় । ফলে ১৮৪২ সালে নানকিং চুক্তি সাক্ষরিত হয় , এ চুক্তির ফলে হংকং দ্বীপ ৯৯ বৎসরের জন্য বৃটেনকে দিয়ে দিতে হয় এবং চীনের অভ্যন্তরে ঢোকার অনুমতি পায় । এ অনুমতি ভারতবর্ষে চা আসার ভূমিকা পালন করে । ২ য় আফিম যুদ্ধের পর বৃটিশরা নিজেরা চা উৎপাদনের চিন্তা করতে থাকে । বৃটিশরা চীন থেকে গাছ চুরি করার পরিকল্পনা করতে থাকে । ১৮৮৩ সালে রবার্ট ফরচুন নামক এক বোটানিষ্ট কে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর চা গাছ চোর হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয় এবং চীনে পাঠানো হয় । ইতিহাসে তা ম্যানডারীন গ্রাব (Mandarin Garb) নামে পরিচিত । রবার্ট ফরচুন প্রথম সফরে চুরি করা গাছ বেশীর অজ্ঞাত চত্রাকে নষ্ট হয়ে যায় , বেঁচে যাওয়া গাছগুলোকে শ্রীলঙ্কায় রোপন করা , শুরুহয় চীনের বাইরে প্রথম চা বাগানের যাত্রা । দ্বিতীয় বার আটঘাট বেঁধে ভালবাবে চুরির চা গাছ ভারতবর্ষে নিয়ে আসেন । দার্জিলিং এর মকাইবাড়ী চাবাগানের মাধ্যমে পুরোদমে বানিজ্যিক চা উৎপাদন শুরু হয় । একই সময় উপমহাদেশের আসামে চা এর এক প্রজাতীর চা এর সন্ধান পাওয়া যায় । আসামে ও ব্যাপক উৎপাদন শুরু হয় । সিলেটের মানলীছড়া আসামের প্রথম দিক কার চা বাগানগুলির একটি । প্রশ্ন আসতে পারে সিলেটের চা কি চীনের চুরি করা চা না মাটির আসল গাছ । উদ্ভিদবিদরা মনে করেন সিলেট বা আসামের গানগুলি Camellia Assamica or camellia sinensis var,assmica প্রজাতীর । এ প্রজাতীর জন্ম আসাম অন্চলে সুতরাং সিলেটের চা হচ্ছে তার মাটির চা । সুতরাং সিলেট বাসী এ নিয়ে গর্ব করতেই পারেন । চা এর অবশ্যই সস্তা শ্রম এবং শ্রম দাসত্বের যোগ আছে । বৃটিশরা কৃতিম দুরভিক্ষ তৈরী করে সমাজের প্রান্তিক শ্রেনীর মানুষদের ভুলিয়ে চা বাগানে কাজ করার জন্য নিয়ে আসা হয়। আমেরিকার নর্থ কেরলিনায় ও একই সময় চা চাষের চেষ্টা করা হয় , কিন্তু দাস প্রথা অবলুপ্তির পর সে প্রকল্প আগায়নি । চা এর ইতিহাস আরেকটি কথা উল্লেখযোগ্য , আমেরিকার বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয় বোষ্টন টি পার্টির মাধ্যমে । এ পার্টির মুল ব্যাপার ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর জাহাজ মুনাফার জন্য আনা সব চা সাগরে ফেলে দেয়া । কে জানে হয়ত এ ফেলে দেয়া চা এর মধ্যে কয়েক বাক্স সিলেটের চা হয়ত ছিল । দেখা চা এর সাথে আফিম , যুদ্ধ, রক্ত , শ্রম সোশন সর্ব পরি ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী সব একাকার হয়ে আছে । চা সুবাসের সাথে অঘটন ও কম না ।
৩
এবার আমার বন্ধুর গল্পে আসা যাক । দেখা যাক এখানে চা কি ধরনের অঘটন ঘটায় । আমার বন্ধু সোজা বলল আগে ঐ শালাকে সাইজ করি তার পর তোর সাথে কেচ আপ করব । ইতিমধ্যেই তার এক কর্ম চারি আমাদেরকে চা বিস্কুট পরিবেশন করল । আমি চায়ে চুমুক দিচ্ছি এক দৃষ্টিতে তার দোঁয়া উড়া কাপের দিকে তাকিয়ে থাকল । হঠাৎ তার ঠোঁটে চিকন হাসি ফুঠে উঠল বলল সাইজ করার আইডিয়া পেয়েছি । ফোন লাগালো এ পি এস কে । স্যার কি , বিশ্রাম নিচ্ছেন ? ও পাস থেকে কি বলা হচ্ছে শুনতে পারলাম না । কিন্তু এ পাশ্বে বলল আগে আমাকে ভাই ডাকছেন ত কি হয়েছে । আপনার পজিশনে আমাদের সবার স্যার ডাকা উচিত । তা স্যার চা এর ব্যাপার টা হল বাগানের ভালো চা ত কলিকাতা ,চিটাগাং এ নিলাম হয়ে লন্ডন ইউরোপে চলে যায় । বাইরে যা আসে চা বাগানের কুলিরা নিজেরা ঘরে বানিয়ে বাজারে বিক্রী করে এগুলি তৃতীয় কেটাগরির , তাছাড়া আরেকটা ব্যাপার আমরা সিলেটিরা জানি যদিও হুমায়ুন আহমদ সাহেব তার দুই উপন্যাসে লিখে ফেলেছেন , কিন্তু আপনাকে এ চা নিয়ে বলা ঠিক হবে কি না ! আমি নিশ্চিত বলতে পারি পাস থেকে কি ভাই প্লিজ বলেন না বলে অনুরোদ আসবে , সে ব্যবসায়ী মানুষের মনস্তত্ত্ব জানে । তার কথা শুনে আমারই অবস্হা খারাপ এ কৌতুকের সাথে পরিচিতি না হলে জীবনে আমার ও হয়ত চা পান করা হত না । ব্যাপারটা ভালো করে ব্যাখ্যা কর বলি । আমাদের ছোট বেলাত ৬০ এবং ৭০ দশকের সময় এয়ার কন্ডিশন গাড়ী বলে কোন কিছু ছিল না । আমার মনে কোন বাড়ী বা অফিসে এয়ার কন্ডিসন রুমে বলেছি বলে । রাস্তা ঘাটের অবস্হা খুব খারাপ । সিলেট থেকে ঢাকা আসতে চারটি ফেরী পার হতে হত । যদি বিয়ানীবাজার থানায় যেতে হলে আরও দুটি ফেরী । এক জন লোক যদি উত্তর বঙ্গের কোন জেলায় মৃত্যু বরন করত এবং তাকে যদি সিলেটে দাফন করতে নিয়ে আসতে হত , তাহলে সময় এবং দুরত্ব চিন্তা করুন । সেটা যদি গ্রীষ্ম কালে হত তাহলেত কথাই নাই । মৃতদেহ বহনকারি বাহন হল খোলা ট্রাক । মৃতদেহ থেকে যাতে গন্ধ না ছরায় সে জন্য করপুর, আতর, লোবানের সাথে কফিন চা দিয়ে ভরে দেয়া হত । বংলাদেশ হল রিসাইকেলের দেশ , কেউ একজন কৌতুক ছড়াত কাজ শেষ হয়ে গেলে এসব চা আবার খোলা বাজারে চলে আসে । হুমায়ুন আহমদ সাহেব প্রথম জীবনে সিলেট ছিলেন , তিনি তার উপন্যাসে এ ব্যাপারটি ব্যবহার করেন । আমার বন্ধু ও এ পি এস মোহোদয়কে সাইজ করার জন্য এ ব্যাপারটা ব্যবহার করেন । সে বলে বসল চা কয়েক প্যাকেট সে কিনে দিতে পারে । হয় সেটা চা শ্রমিকের বাড়ীতে বানানো অথবা কফিন থেকে রিসাইকেল মাল । টং এর দোকানের চা সবাই পছন্দ করে কারন লোবানের ফ্লেবারটা নাকি দারুন । বিকালের দিকে মোহদয়ের জন্য কয়েক কেজি চা পাঠিয়ে দিবে কারন ভাবী হয়ত পছন্দ করবেন । ও হ্যা কমলার ব্যাপারটা হল সিলেট শহরে কমলার কোন গাছ নাই , সব কমলা আসে ভূটান থেকে এবং তা ঢাকা হয়ে আসে । ঢাকায় আসার পর ফরমালীনে চুবিয়ে সিলেট সহ অন্য জায়গায় পাঠানো হয় । ঢাকায় কমলা কিনলে বিশুদ্ধ কমলা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশী । সে চায়ের সাথে এক ঝুড়ি কমলা ও পাঠাবে বলল। বিষয়টা মোটেই সত্য নয় আমার সিলেট শহরের বাসায় কমলা গাছ আছে এবং একই সময়ে তার অফিসে বসে দুজনেই সিলেটি কমলা খাচ্ছিলাম । কিন্তু মোহদয়ের বারটা বেজে গেছে আধা ঘন্টা পরে ফোন আসল তার আর চা বা কমলার কোন প্রয়োজন নেই । কিন্তু আমার বন্ধু নাছোড় বান্ধা, এ পি এস মোহদয়ের জীবনের জন্য চা খাওয়ার বারটা বাজাবেই । পরের দিন তাকে নাস্তার দাওয়াত দিল কারন আমার মত কয়েকজন শীতের পাখী লন্ডন এবং আমেরিকা থেকে এসেছে তাদের সাথে সারকে পরিচয় করিয়ে দেয়া । পরেরদিন জিন্দাবাজারের মার্কেটের সাথে একটি স্নাকসের দোকানে বেশ কয়েকজন বন্ধু বান্ধব বসে আড্ডা দিচ্ছি , এমন সময় মোহদয়কে নিয়ে বন্ধু হাজির । কয়েকজনের চোক টেপাটেপি দেখে মনে হল কিছু ঘটবে । আমি ফুচকা, চটপটি , সিঙ্গারা গো গ্রাসে গিলতে ছিলাম । আমার খাবার দেখে বন্ধুরা টিপ্পনী দিচ্ছিল, শালা তোরে দেখে ত মনে হচ্ছে দুরভিক্ষের দেশ থেকে আসচছ , আস্তে আস্তে খা বাপ । আমি বললাম আমাদের ওখানে এসব খাবারের দুরভিক্ষ আছে । এর মধ্যে মালাই চা আসল, খাবার মুখে নিয়ে চাতে চুমুক দিলাম ।আরেক বন্ধু জিজ্ঞাসা করল ফ্লেভারটা কেমন ? মুখে খাবার তাই মাথা নাড়লাম । আবার বলে উঠল লোবানের গন্ধ আর ফ্লেবারটাই আলাদা, সবাই মুচকী হাসছে । আমি হাসি চেপে রাখতে পারি না, জোরে হাসতেগিয়ে চা সহ সব খাবার আমার বুকে শার্টে চলে আসল । মোহদয়ের মনে হল আমি বমি করছি , তিনিও বমি করতে শুরু করলেন । দোকানের মালিক ত মারতে আসে । যাইহোক পরিস্কার হয়ে রাত্রে ডিনারে দাওয়াত দিলাম । উনি আমার হাতে তার মন্ত্রলালয়ের কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ঢাকায় আসেন ডিনার এ শহরে আর খাওয়া দাওয়া না । আসার সময় বন্ধু আমায় বলল, কইছিলামনু বান্দীর পোয়ারে জীবনের লাগি চা খাওয়া ছাড়াইমু । (বলছিলাম না বাদির ছেলেকে জীবনের জন্য চা পান করা ছাড়াবো )