০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, শনিবার, ৬:২৭:১৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


নিউইয়র্কে হলো লালন উৎসব
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-১১-২০২২
নিউইয়র্কে হলো লালন উৎসব সংগীত পরিবেশন করছেন ফরিদা পারভীন


নিউইয়র্কসহ উত্তর আমেরিকায় কখনো এককভাবে লালন উৎসব করা হয়নি। এবারই প্রথম নিউইয়র্কে লালন উৎসব করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। গঠন করা হয় লালন পরিষদ ইউএসএ এবং একটি আহ্বায়ক কমিটি। কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ, প্রধান উপদেষ্টা নূরুল আমিন বাবু এবং সমন্বয়ক ছিলেন হাসানুজ্জামান সাকি, গোপাল স্যানাল, স্বীকৃতি বড়ুয়া, দীনেশ চন্দ্র ও সুখেন গমেজ। সেই কমিটিই লালন উৎসবের আয়োজন করে। আয়োজনটি ছিলো চমৎকার। সেই সাথে অনুষ্ঠানের মানও ছিলো উঁচুমানের। যারা অনুষ্ঠানে গিয়েছেন প্রত্যেকেই প্রশংসা করেছেন।

গত ৩০ অক্টোবর বেলা তিনটায় জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে খোলা আকাশের নিচে লালন উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। লালনগীতির খ্যাতনামা শিল্পী ফরিদা পারভীন মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে ও বেলুন উড়িয়ে নিউইয়র্কে প্রথমবারের মতো লালন উৎসবের উদ্বোধন করেন।

উৎসবে আরো যোগ দেন বিশিষ্ট বংশীবাদক গাজী আবদুল হাকিম। নিউইয়র্ক ও আশপাশের বাউল সংগীতশিল্পীরাও যুক্ত হয়েছিলেন। পুরো অনুষ্ঠানে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত করেছিলেন প্রবাসী চারুশিল্পীরা। ২১ জন শিল্পীর আঁকা ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছিল ‘অচিন পাখির খোঁজে’ শিরোনামের একটি চিত্রপ্রদর্শনী।

অনুষ্ঠানটি এমনভাবে সাজানো হয়েছিল, যেন সব বয়সের অতিথিরাই লালনের গান এবং তাঁর জীবন ও দর্শনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে পরিচিত হতে পারেন। সুমন মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ও সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ‘ম্যান অব দ্য হার্ট’ নামের একটি ভিডিওর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু। এতে ঊনবিংশ শতকের সুফি সাধক লালনের জীবন ও কর্মকথা, গান ও অভিনয়ের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। ড. জিয়াউদ্দিন আহমদ পরিচালিত একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিওতে লালনের পরিচিতি তুলে ধরা হয়।

পরে একটি সেমিনারে লালনের জীবন ও দর্শন নিয়ে আলোচনা করেন লালন বিশেষজ্ঞরা। মূলবক্তা ছিলেন ফরিদা পারভীন, গাজী আবদুল হাকিম ও গোলাম সারোয়ার হারুন। তাঁরা সমকালীন বিশ্বে লালন কেন গুরুত্বপূর্ণ, তা তুলে ধরেন।

লালন ও তাঁর গান নিয়ে নিরীক্ষার নামে বাড়াবাড়ি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন ফরিদা পারভীন। পরামর্শ দেন এই বাড়াবাড়ি এড়িয়ে চলার। বক্তারা বলেন, লালন ছিলেন অতি সাধারণ মানুষ। সারাজীবন সাধারণ একজন মানুষের মতো জীবনযাপন করেছেন। তাঁকে নিয়ে যে বাড়াবাড়ি, ‘সাঁইজি’ বেঁচে থাকলে তা কখনোই পছন্দ করতেন না। দ্বিতীয় একটি সেমিনারে ক্যাথলিক পাদরি ফাদার মারিনো রিগনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশে অবস্থান করেছিলেন। এ সময় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লালনগীতি ইতালীয় ভাষায় অনুবাদ করেন।

অনুষ্ঠানে সবার দৃষ্টি কেড়ে নেয় নতুন প্রজন্মের ছয় প্রতিনিধির অংশগ্রহণে একটি সেমিনার। এসব কিশোর-তরুণ বলেন, নিজের শিকড়ে ফিরে যেতে লালন তাঁদের বিপুলভাবে সাহায্য করেছেন। নবীন এই প্রজন্মের পরিবেশনায় লালনের গান নিয়ে ছিল আশা জাগানিয়া আরেকটি অনুষ্ঠান। অবিকৃত লালনকে আবিষ্কারে তাঁদের আগ্রহ সবাইকে মুগ্ধ করে।

প্রবাসে যে লালনের গানের চর্চা অব্যাহত রয়েছে, তার প্রমাণ মিলে বিশিষ্ট গায়ক শাহ মাহবুবের পরিচালনায় সংগীতানুষ্ঠান- সাঁইর বারামখানা। নতুন ও প্রবীণ শিল্পীদের সমন্বিত অংশগ্রহণে এই অনুষ্ঠান দর্শকদের মুগ্ধ করে। প্রবাসের খ্যাতিমান শিল্পী তাজুল ইমাম ও পশ্চিমবঙ্গের শিল্পী পার্থ সারথি মুখোপাধ্যায় পরিবেশিত লালনের নির্বাচিত গানের মধ্যে দুটি পরিবেশনাও সবাইকে মুগ্ধ করে।

উৎসবের মূল আকর্ষণ ছিলেন ফরিদা পারভীন ও গাজী আবদুল হাকিম। তাঁদের পরিবেশনা শুনতে দূরদূরান্ত থেকে বিপুলসংখ্যক দর্শক এসে সমবেত হয়েছিলেন অনুষ্ঠানকেন্দ্রে। ভূপালী রাগের ভিত্তিতে একটি পরিবেশনা দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেন বাঁশুরিয়া গাজী আবদুল হাকিম। এরপর নিজের পছন্দের একগুচ্ছ গান গেয়ে শোনান ফরিদা পারভীন। সঙ্গে ছিল লালনের গান ও দর্শন নিয়ে এই প্রবীণ শিল্পীর নিজস্ব পর্যবেক্ষণ।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন- নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম, জাতিসংঘে নিযুক্ত প্রেস মিনিস্টার নূরে এলাহি মিনা, হাসান ফেরদৌস, লুৎফর নাহার লতা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, অভিনেত্রী রেখা আহমেদ, প্রবীন সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্যাহ, একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী রথীন্দ্র নাথ রায়, বিটিভির সাবেক প্রযোজক বেলাল বেগ, ডা. জিয়া উদ্দিন আহমেদ, বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী নূরুল আজিম, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. চৌধুরী সারওয়ারুল হাসান, মূল্যধারার রাজনীতিবিদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, এন মজুমদার, অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান, আলমগীর খান আলম, আব্দুর রহিম বাদশা, ফাহিম রেজা নূর, নাসির আলী খান পল, শুভ রায়, ছদরুন নূর, জাহিদ শরিফ, জেবিবিএ’র সাবেক প্রেসিডেন্ট আবুল ফজল দিদারুল ইসলাম, লায়ন্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট আহসান হাবিব, আকামত উল্যাহ, মিথুন আহমেদ, মোর্শেদ আলম প্রমুখ।

শেয়ার করুন