০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১১:০৩:১৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে বিশাল চ্যালেঞ্জ
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৫-২০২৩
স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে বিশাল চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশে হুন্দাই গাড়ির শোরুম। এখন বাংলাদেশেই এ ব্রান্ডের গাড়ীর সংযোজন হচ্ছে/ছবি সংগৃহীত


অনেকের দ্বিমত থাকলেও বাংলাদেশ সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সাধারণ মানুষ সুফল পাবে সন্দেহ নেই। ইতিমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সারা দেশকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা, দেশব্যাপী ইন্টারনেট সুবিধা সম্প্রসারণ করে টেলিমার্কেটিং, টেলি ব্যাংকিং, টেলিমেডিসিন ইতিমধ্যে শহরের সুবিধাগুলো গ্রামাঞ্চলে সম্প্রসারিত করেছে। সরকারি পর্যায়ে সব কাজ ডিজিটালি করা সম্ভব হলে অনেক ক্ষেত্রেই বর্তমানে বিদ্যমান অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচার দূর হবে। সরকারপ্রধান বহু আগেই সরকারি দপ্তরসমূহে  ই-ফাইলিং নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিছু ক্ষেত্রে কাজ হয়েছে। অনেক জায়গায় হয়নি।


বিশেষত সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানসমূহ এক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে আছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পানি সরবরাহ ডিজিটাল ব্যাবস্থার আওতায় না আসায় অহরহ দুর্ঘটনা হচ্ছে। সেবামূলক প্রতিষ্ঠাসমূহে অকুপেশন, হেলথ, সেফটি (ওএইচএস) গুরুত্ব না পাওয়ায় গ্যাস বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা মৃত্যুফাঁদে পরিণত। অচিরেই হয়তো এই কাজে গুরুত্ব দিয়ে দায় বদ্ধতা নিশ্চিত করা হবে। এখন যেভাবে গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় সেটি নিঃসন্দেহে ডিজিটাল বাংলাদেশের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এমনি অবস্থায় সরকার স্মার্ট বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছে। এটি সরকারি দলের হয়তো নির্বাচনী অঙ্গীকার হতে পারে। 

আমরা কয়েকটি স্মার্ট সিটি পরিদর্শন করেছি। স্মার্ট সুবিধাদি ব্যবহার করেছি। সিটিগুলোতে পরিষেবা, পরিবহন সুবিধাদি, ক্রয়-বিক্রয়, ব্যাঙ্কিং সব কিছুই স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত হয়। বর্তমান বাংলাদেশ বাস্তবতা থেকে ব্যবধান বিস্তর। বর্তমান অবস্থা থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার প্রধান চ্যালেঞ্জ ঢাকা মহানগর এবং বড় শহরগুলোর ঘন বসতি, অবিন্যস্ত গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, পয়ো নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি জনসচেতনতার অভাব। 

১৮ কোটি  জনগণের বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ করতে হলে শিক্ষাব্যবস্থাকে উপযোগী করে প্রশিক্ষিত জনবলে পরিণত করতে হবে। কাজটি প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ঢেলে সাজাতে হবে। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় উপযোগী প্রশিক্ষণমূলক প্রোগ্রাম করে জনগণকে ন্যূনতম শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। দুই একটি সড়ক, দুই একটি ব্যবস্থা স্মার্ট হলেই দেশ স্মার্ট হবে না। আশা করি সরকার সমন্বিত পরিকল্পনা, সঠিক পেশাদার নির্ভর বাস্তবায়ন কৌশল, মনিটরিং ইভালুয়েশন ব্যবস্থা অবলম্বন করে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল গড়ে তুলবে। যত দেশ স্মার্ট হবে, তত সাইবার ঝুঁকি বাড়বে। প্রতিটি ক্ষেত্রে তাই সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্টস থাকতে হবে। 

বাংলাদেশে এখন বেশকিছু কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। যারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনো এ সেক্টরে অভিবাবকদের আগ্রহ কম। শিক্ষার্থীকে বিদেশে পাঠিয়ে একই শিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্টা করলেও দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে তারা উদাসীন। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মান সম্পন্ন শিক্ষক প্রয়োজনে বিদেশ থেকে ট্রেইনার নিয়ে এসে শিক্ষা প্রদান-একইভাবে বিদেশে ক্রেডিট ট্রান্সফারের মতো সুযোগ করে দিলে আরো বেশি আগ্রহ তৈরি হবে। এটাতে এ প্রশিক্ষিত জনবল এক সময় দেশে কাজ করতেই আগ্রহী হয়ে উঠবে। এরাও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ব্যাপক সহযোগিতা করতে সক্ষম হবেন। 

বর্তমান প্রজন্ম অনেক বিজ্ঞান মনস্ক। এ যুগের তরুণ সমাজ অনেক উদ্ভাবনী মেধা সম্পন্ন। কিন্তু এদের একটি বিশাল অংশ দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমায়।  এদের কিভাবে তাদের চাহিদা পূরণ করে দেশে ধরে রাখা যায়, সেটি সবাইকে গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে। এজন্য শিক্ষাখাতের দুর্নীতি, বেকার সমস্যা হ্রাস ও সরকারি বেসসরকারি ও বৈদেশিক বন্ধুভাবাপন্নদের ইনভেস্ট করার ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়ে বিশাল কর্মক্ষেত্রর উদ্যোগ। দলবাজি ও পেশিশক্তির চর্চাকারীদের কঠোর নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলায় কঠোরতাসহ বিভিন্নভাবে সুন্দর ও সোনার বাংলার হওয়ার যে আদর্শ সে পরিবেশ তৈরি করা বাঞ্ছনীয়। তবুও কিছু কিছু মেধাসম্পন্ন স্ব-উদ্যোগে কিছু কিছু কাজ করছেন সেটাও অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যে গিয়ে।  কিন্তু নানা চ্যালেঞ্জে তাদের সমর্থও সীমিত। এই বিষয়ে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিতভাবে কাজ করা প্রয়োজন। 

জানি, ডিজিটাল বাংলাদেশের সব সুবিধাদি সর্বস্তরের জনগণ এখনো পাচ্ছে না। সেগুলো যত শিগগির সম্ভব নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দিয়ে সর্বস্তরের কাজ (সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি) প্রতিষ্ঠানসমূহে কর্মাদি যত দ্রুত সম্ভব ডিজিটালাইজড করণ এবং এর পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টি করণ। সঙ্গে সঙ্গে দেশের মেধাসম্পন্ন নতুন প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করা হলে বাংলাদেশ ২০৪১ না হলেও ২০৫০ স্মার্ট বাংলাদেশ হতে পারবে বলে আশা করি। প্রধান শহরের সুবিধাগুলো গ্রামপর্যায়ে সম্প্রসারিত হলে আরবান রুরাল রিভার্স মাইগ্রেশন হবে। যেটি দেশ স্মার্ট হওয়ার অনুত্তম প্রধান নিয়ামক হতে পারে।

শেয়ার করুন