মুক্তিযুদ্ধের ছবি
কারো কারো ভয়-শঙ্কা জুলাই-আগস্ট ২৪ রাষ্ট্রক্ষমতা বদলের পর কেউ রিসেট বাটন চেপে ৭১ মুছে দিচ্ছে। ধারণাটা অমূলক, প্রাসঙ্গিক হলেও অবাস্তব। ডিসেম্বর বা একাত্তর বাংলাদেশি জাতির অস্তিত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। একাত্তরের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ, ১৬ ডিসেম্বরের মহান বিজয় বাঙালি জাতির গৌরব আর গর্বের অর্জন। কারো ব্যক্তিগত অর্জন নয়। কোনো পরিবর্তনে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কোনো পরাজিত ব্যক্তি বা দলকে সাময়িকভাবে ধ্বংস করতে পারে। কিন্তু একটি জাতির অর্জনকে কখনো মুছে ফেলা যায় না। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত সর্বযুগের অন্যতম সেরা অর্জন। সেই অর্জনে নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন আহমদসহ রাজনৈতিক নেতৃত্ব, যুদ্ধ করেছে জেনারেল ওসমানী, মেজর জিয়া, খালেদ মোশাররফ প্রমুখের নেতৃত্বে সাধারণ জনতার মুক্তিবাহিনী। কিন্তু অর্জনটা ছিল সাড়ে ৭ কোটি বাংলাদেশির।
১৯৭১-২০২৪ নানা ঘটনায় স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতাদের হত্যা করা হয়েছে, অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশ কিন্তু সগৌরবে মাথা তুলে আছে দেদীপ্যমান সূর্যের মতো। তাই ভ্রান্ত নেতৃত্বের অশুভ কর্মকাণ্ডে ৭১-এর ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের স্মারক বা প্রতীক ধ্বংসের যতই অপপ্রয়াস নেওয়া হোক না কেন একসময় বীর বাঙালি ঠিকই রুখে দাঁড়াবে। স্বাধীনতাবিরোধীদের অপচেষ্টা কখনো সফল হবে না। উজ্জ্বল সূর্যকে ঘন কালো মেঘ কিছু সময়ের জন্য ঢেকে দিতে পারে। কিছুক্ষণ বৃষ্টি ঝরে আবারও আসে উজ্জ্বল সূর্যালোক। তাই কিছু স্মারক ধ্বংস করে। কিছু ভবন গুঁড়িয়ে দিয়ে, ৭ মার্চ বা ১৭ এপ্রিল অস্বীকার করে, স্বাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তান জিন্দাবাদ উচ্চারণ করে জনগণকে বেপথু করার চেষ্টা করা হোক না কেন এগুলো নিতান্তই সাময়িক। সত্য কঠিন, মিথ্যার আড়ালে সত্যকে দীর্ঘদিন ঢেকে রাখা যাবে না।
জুলাই-আগস্ট ২০২৪ ছাত্র-জনতার নিরীহ গোছের কোটাবিরোধী আন্দোলন সঠিকভাবে সামাল দেয়নি তৎকালীন সরকার। অদূরদৃষ্টি সম্পন্ন পরামর্শক আর দুর্নীতিপরায়ণ উপদেষ্টাদের পরামর্শে তৎকালীন সরকার প্রধান কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে। এমনিতেই দীর্ঘদিনের গণতন্ত্রহীনতা, দুর্নীতি আর অপশাসনের কারণে জনমনে ক্ষোভ ছিল, একটি স্বাধীনতাবিরোধী চক্র সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। সরকার যখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানে ব্যস্ত সেই সুযোগে অশুভ গোষ্ঠী সড়কে সংঘাত সৃষ্টি করে হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞের রসদ জোগালো। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মাঝে লুকিয়ে থাকা প্রতিক্রিয়াশীল চক্র পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সরকারের পতন ঘটালো। কিছু মানুষের ব্যক্তিগত উচ্চভিলাষ, সীমাহীন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি আর অপশাসনের কারণে করুণ পরিণতি ঘটলো সরকারের।
জুলাই-আগস্ট ২০২৪ পরবর্তী সরকারের কাছে জনগণ আশা করেছিল সুশাসন, সংস্কার, বৈষম্যবিরোধী কার্যক্রম। কিন্তু আগস্ট ২০২৪ থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ কি পেয়েছে দেশ? ভারত জুজুর ভয়, স্বাধীনতার সব অর্জনকে চ্যালেঞ্জ করা, মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা, মব সৃষ্টি করে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ধ্বংস, স্বাধীন বাংলাদেশে পরাজিত শক্তির আস্ফালন। বলা হলো রিসেট বাটন চেপে সবকিছু পাল্টে দেওয়া হবে। সেটি যদি অপশাসন, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, গণতন্ত্রহীনতার পরিবর্তন হত সবাই সাধুবাদ জানাতো। কিন্তু কেউ কি বলতে পারবে দেশ থেকে অপশাসন, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি দূর হয়েছে? দেশ নিখাদ গণতন্ত্রের পথে হেঁটেছে? হয়নি কিছুই। বরং প্রতিশোধ স্পৃহায় ধ্বংসযজ্ঞ চলেছে বাধাহীনভাবে। বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পৈশাচিক উল্লাসে ধ্বংস করা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুসহ স্বাধীনতাযুদ্ধের মহানায়কদের স্মারক ধ্বংস করা হয়েছে, ৭ মার্চ, ১৭ এপ্রিল অস্বীকার করা হয়েছে। ১৯৭১-এর পরাজিত শক্তি বিজয়ী বীরদের অপমান আর অপদস্ত করেছে।
এগুলো সাময়িক। পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সাময়িকভাবে আমজনতা নিস্পৃহ হয়ে আছে। কিন্তু জনমন থেকে দেশপ্রেম আদৌ উবে যায় নি। তাই হামজা বা রিতু পর্ণা গোল করে বাংলাদেশকে জিতিয়ে দিলে গোটা দেশ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে আন্দোলিত হচ্ছে। দেশনেত্রী তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য সংকটপূর্ণ হলে জাতি-ধর্ম-দল-মতনির্বিশেষে সবাই এককাট্টা হয়ে প্রার্থনা করছে।
শেষ কথা হলো দেশ এখন নির্বাচনের ট্রেনে চেপেছে। অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে থাকবে কি না নিশ্চিত নয়, অপর প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারম্যান খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাচ্ছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া অপ্রকাশিত কারণে দেশে আসতে পারছে না। প্রশাসন অনেকের মতে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের নিয়ন্ত্রণে। এমতাবস্থায় নির্বাচন কতটা স্বচ্ছ, অবাধ এবং নিরপেক্ষ হবে সন্দেহ আছে। তবে এটি নিশ্চিত করে বলা যায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জনতা আপস করবে না। বাংলাদেশে কখনো দেশবিরোধী শক্তি স্বাধীনতাকে বিপন্ন করতে পারবে না, অশুভ মহলের সব অপচেষ্টা রুখে দিবে বীর বাংলাদেশিরা।
স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ অবিনশ্বর। একটি সংগ্রামী জাতির মহান অর্জনকে কোন অশুভ মহল ধ্বংস করতে পারবে না।