০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৩:০১:৪৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


সংসদ ভবন প্লাজায় জানাজা না হওয়া ও সড়কপথে সিলেট লাশ নেয়া
প্রয়াত গুণীজন মুহিতকে অবহেলা করা হলো?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৫-২০২২
প্রয়াত গুণীজন মুহিতকে  অবহেলা করা হলো? শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন গুনিজনরা/ছবি সংগৃহীত


বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের রূপকার, সদ্য প্রয়াত প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী, ভাষাসৈনিক, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম প্রধান সহায়ক পরম শ্রদ্ধেয় আবুল মাল আব্দুল মুহিতের জানাজা জাতীয় সংসদ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হলো না।

দেশবরেণ্য মানুষটির মরদেহ ঈদ সময়ের যানজটের মাঝে সড়কপথে ঢাকা থেকে সিলেট নিতে হলো। বিষয়টি যে কোনো সচেতন দেশপ্রেমী মানুষের জন্য লজ্জা, ক্ষোভ আর হতাশার। সৎ,সাদা মনের,সদা হাস্যময়ী মানুষটি কিন্তু বরাবরই শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি, অর্থপাচার, ব্যাংক কেলেঙ্কারি নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন। 

অনুমান করি, সরকারঘনিষ্ঠ কোনো মহল হয়তো বিরাগভাজন ছিল। কিন্তু যতদূর জানি মরহুম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আস্থা এবং শ্রদ্ধাভাজন ছিলেন। সংসদ ভবন প্লাজায় প্রয়াত মন্ত্রী সাংসদদের জানাজা প্রথাসিদ্ধ। এখন করোনা সময়ের কথা বলে অজুহাত দেয়া যাবে না। কারণ বাংলাদেশে এখন কোনো করোনা বিধিনিষেধ নেই, সবই চলছে। তাহলে এমন অজুহাত চলবে না। 

এখন প্রশ্ন কেন সংসদ সচিবালয়,যথাযথ উদ্যোগ নিলো না? দায়িত্বটা তাহলে কার? সাবেক মন্ত্রীর মৃত্যুর পরও সংবাদমাধ্যমে যে খবর পরিবেশিত হয় পারিবারিক সূত্রের বরাত দিয়ে- তাতে সংসদ প্লাজায় নামাজে জানাজা ছিল। কিন্তু হঠাৎ ওই শিডিউল উধাও। 

সংসদে একটি বাজেট পেশ করতে যাবার প্রক্কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে /ফাইল ছবি 

মরহুমের অনুজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজাদ মসজিদে প্রথম জানাজার সময় ও জাতীয় সংসদ দক্ষিণ প্লাজায় জানাজার কথা জানিয়েছিলেন। পরে শোনা গেল অনিবার্য কারণে সেখানে জানাজার পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। কি সেই অনিবার্য কারণ জাতির জানার অধিকার আছে। যে মানুষটি জাতীয় সংসদে সর্বাধিকবার ব্যতিক্রমধর্মী বাজেট পেশ করেছেন। ইন্তেকালের পর তার মরদেহ সেখানে না নেয়ার কী অনিবার্য কারণ দেখা দিলো, এটা এখন জনমনে ব্যাপক প্রশ্নের উদ্রেক ঘটেছে।  

হেলিকপ্টারযোগে মরদেহ বহনের জন্য বাংলাদেশে কি বিধিবদ্ধ নিয়ম আছে? কেন একজন স্বাধীনতা পুরস্কারধারী, দেশবরেণ্য রাজনীতিবিদের মৃতদেহ হেলিকপটারযোগে নিজবাড়ি সিলেটে নেয়া গেল না? তাহলে কী ধরে নেয়া যায়, তাঁর মতো গুণীজনকে কি অবজ্ঞা,অবহেলা করা হলো না? 

এখন অনেক মন্ত্রী, সাংসদ থেকে শুরু করে চুনোপুঁটিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহিত মহোদয়ের জন্য মায়াকান্না করছেন। টিভিতে মুখ রাখলেও এসবের কান্নাজড়িত চেহারা বা দুঃখভরাক্রান্ত বাতচিৎ বেশ দেখা গেছে। আলোকিত মানুষের আলোয় আলোকিত হতে প্রয়াসী হচ্ছেন। কিন্তু এতো প্রভাবশালী ব্যক্তি তার গুণমুগ্ধ হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আস্থা এবং বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে থাকলে দুটি বিষয়ে আমার কাছে সমীকরণ মিলছে না। আশা করি দায়িত্বশীল মহল বিষয়টির যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিবেন। 

আমি একজন নগণ্য বাংলাদেশি হিসেবে মরহুমের বিদেহী আত্মার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

যেমন ছিলেন মুহিত

আসলে আবুল মাল আব্দুল মুহিত ছিলেন একজন সাদা মনের বিজ্ঞ আলোকিত মানুষ। সদ্য প্রয়াত বাংলাদেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। আমলা থেকে রাজনীতিবিদ আবুল মাল আব্দুল মুহিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে অনেক অবদান আছে। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক উন্নয়নে নীরবে-সরবে অনেক অবদান রেখেছেন। মহান এই দেশপ্রেমী মানুষটির মহাপ্রয়াণে আমি গভীরভাবে শোকাভিভূত। পবিত্র রমজান মাসের শেষলগ্নে মৃত্যুবরণ করা এই দেশপ্রেমিক নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহতায়ালার বিশেষ অনুগ্রহপ্রাপ্ত। আমি করুণাময়ের কাছে তাঁর আত্মার শান্তি প্রদানের কামনা করছি। মহান আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস বরাদ্দ করুন। 

মুহিত ছিলেন একজন ডাকসাইটে আমলা 

সিলেটের একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণকারী মুহিত সাহেব ছিলেন ডাকসাইটে আমলা, কূটনীতিক। ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতি করতেন। পাকিস্তান সুপিরিয়র সার্ভিসের অর্থনীতি কাদের অফিসার ছিলেন। ১৯৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় ছিলেন ওয়াশিংটন পাকিস্তান দূতাবাসে ইকোনমিক মিনিস্টার। যুদ্ধ শুরু হলে পদত্যাগ করে প্রবাসী সরকারের প্রতিনিধি  হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক জনমত গড়ে  তোলেন। স্বাধীনতার পর প্ল্যানিং কমিশন, বৈদেশিক সম্পদ বিভাগ সচিবের পদে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

সিলেটের কৃতীসন্তান 

সিলেটের কৃতীসন্তান এরশাদ সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। আওয়ামী সরকারে দীর্ঘদিন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতীয় সংসদে একাধারে দীর্ঘদিন  বাজেট পেশ করেছেন। বিদেশনির্ভর অর্থনীতি থেকে স্বনির্ভর অর্থনীতির রূপরেখা প্রণয়ন করেছেন তিনি। তবে কিছু কিছু বিষয়ে তার প্রচণ্ড দ্বিমত থাকায় স্বেচ্ছায় চলে যেতে চেয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধাভরে তাকে ধরে রেখেছেন। কিন্তু বয়সের ভারে রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন। লিখেছেন, কিছু সুলিখিত রচনামূলক গ্রন্থ। 

প্রধানমন্ত্রী হারিয়েছেন একজন অভিভাবক 

সাবেক এ অর্থমন্ত্রীর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী হারালেন আরেকজন অভিভাবক। করোনা আক্রান্ত হয়েও সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। অবশেষে বিধাতার ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের ক্রান্তিলগ্নে চলে গেলেন পরপারে। জীবদ্দশায় দেখে গেছেন অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি। 

সম্পর্কে আমার বোন প্রয়াত মোস্তারী জামানের মামা-শ^শুর মুহিত মামার সাথে আমার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ হয়েছিল সিলেট অঞ্চলে কিছু গ্যাস অবকাঠামো নির্মাণ কাজের সমস্যা সংকট নিরসনের জন্য। উনি সম্পৃক্ত থাকুন আর নাই থাকুন, অনেক সহায়তা করেছেন। অত্যন্ত সরল মনের সাদা মানুষটি সরাসরি কথা বলতেন। কোথাও কোনো গরমিল দেখলে বলে উঠতেন ‘রাবিশ’।

ক্রমান্বয়ে বহুবছর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর নিজ থেকে বয়সের কারণে রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছিলেন। তার স্থলে রাজনীতিতে এসেছেন তার অনুজ আব্দুল মোমেন, যিনি এখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।


শেয়ার করুন