১৯ মে ২০১২, রবিবার, ১১:৩৯:১৩ অপরাহ্ন


বাংলাদেশের নির্বাচন এবং মার্কিন ভিসানীতি
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৯-২০২৩
বাংলাদেশের নির্বাচন এবং মার্কিন ভিসানীতি


পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের নতুন ভিসানীতি অনুযায়ী, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে সহিংসতা সৃষ্টি অথবা অবৈধভাবে বাধা প্রদান করতে পারে-এমন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বেসরকারি মানুষ, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, তাদের পরিবারের সদস্যদের সেই দেশের ভিসা প্রদানে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা দিয়েছে। এতে যোগ হয়েছে মিডিয়া ব্যক্তিত্বরাও। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সেটির প্রয়োগ শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এখন নানা সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে।

এদিকে নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে রাজপথে দুটি বিরোধী রাজনৈতিক স্রোতের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে উষ্ণতা বাড়ছে। সংঘাতের পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। একটি দেশের নির্বাচন নিতান্তই সেই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেটি নিয়ে একটি বিদেশি রাষ্ট্র হোক না, সেটি পরাশক্তি তার মাতামাতি কেন? কেনই বা সরকার এবং বিরোধী দল এই বিষয়ে এতো উদগ্রীব বা শঙ্কিত? 

সবাই জানে বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দুর্নীতিপরায়ণ গোষ্ঠী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে অবৈধ অর্থ পাচার করে সম্পদ অর্জন করেছে। অনেক দুর্নীতিপরায়ণ মানুষের স্ত্রী, পরিবার-পরিজন বিভিন্ন দেশে বসবাস করছে। যদি কোনো জনগোষ্ঠীর মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে শঙ্কা থেকে তাকে এরাই সেই গোষ্ঠী।  এর বাইরে সাধারণ জনগণের কোনো দুশ্চিন্তার কোনো কারণ আছে বলে মনে করি না। তবে সরকারি দল বা বিরোধী দলের দুর্নীতিপরায়ণ অংশের ভীতসন্ত্রস্ত হওয়ার কারণ আছে। একই সঙ্গে দুর্নীতিগ্রস্ত সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের ভয়ের কারণ আছে। 

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। সেই দেশে একটি দেশ পরিচালনার জন্য সংবিধান আছে। সংবিধান অনুযায়ী, নির্দিষ্ট বিরতিতে নির্বাচন হওয়ার সংস্থা আছে। দেশের সর্বসাধারণের স্বার্থে সংবিধান সংশোধনের সুযোগ আছে। ২০২৩ শেষ অথবা ২০২৪ সূচনায় অনুষ্ঠিত হবে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন। এর আগের দুটি নির্বাচন হয়েছে ২০১৪ এবং ২০১৮। নির্বাচন দুটি নিয়ে দেশ-বিদেশে নানা বিতর্ক আছে। ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত তিন টার্মে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে বর্তমান শাসক দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আছে। অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তাদের জোটভুক্ত কিছু দল সরকারি দলের অধীনে সাধারণ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ না হওয়ার অভিযোগ তুলে সরকার পতনের আন্দোলন করছে। ওদের দাবি সরকার পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। অন্যদিকে সরকার বলছে কনস্টিটিউশন অনুযায়ী, নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে। নির্বাচন অবাধ এবং নিরপেক্ষ করার জন্য সরকার বারবার অঙ্গীকার করছে। 

আমরা মনে করি, বন্ধু রাষ্ট্রগুলো সরকারকে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে পরামর্শ এবং কারিগরি সুবিধা প্রদান করতে পারে। নির্বাচনকালে পর্যবেক্ষক পাঠিয়ে নির্বাচন বিষয়ে নিরপেক্ষ তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। কিন্তু এর বাইরে প্রভাব বিস্তার বা চাপ প্রয়োগ করার কোনো অবকাশ আছে বলে মনে করি না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ভারত, চীন, রাশিয়া, জাপান, কোরিয়া, পশ্চিম ইউরোপীয় দেশ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া,  মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে। সেসব দেশ কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো এতো সক্রিয় বা সম্পৃক্ত না। 

যে কোনো দেশ তাদের জাতীয় স্বার্থে ভিসানীতি পরিবর্তন, সংশোধন করতেই পারে। সেটি নিয়ে এতো উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। এই বিষয়ে প্রতিদিন সরকারের মন্ত্রী সংবাদমাধ্যম বা সাংসদের কথা বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।

শেয়ার করুন