গনতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি এবার বিশ্বজুড়ে শ্রম অধিকার রক্ষায় নতুন নীতি ও দিক নির্দেশনা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বজুড়ে শ্রমিদের স্বার্থ আদায়ের সংগঠনের নেতা, শ্রমিক অধিকারের পক্ষের কর্মী, শ্রমিক সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে যে বা যারা হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করবে সরাসরি তাদের পাশে দাড়িয়ে যাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এবং ওই সকল ভীতি প্রদর্শনকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনবে যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে বাণিজ্য, ভিসা নিষেধাজ্ঞাসহ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যত ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে, সেগুলোও প্রয়োগ হতে পারে বলে জানান দিয়েছে দেশটি। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন দেন এ ঘোষণ।
বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো একটি মেমোরেন্ডামে স্বাক্ষর করেছেন। বিষয়টিকে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছে হোয়াইট হাউস। এ মেমোরেন্ডাম সইয়ের পরে সানফ্রান্সিসকোর একটি হোটেলে শ্রমিক নেতাদের সামনে এর বিস্তারিত তুলে ধরেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের অধিকার কর্মী কল্পনা আক্তারের নামও তুলে ধরেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনের দেয়া বক্তব্যে বলেন, শ্রমিকরা আমাদের অবকাঠামো তৈরি, পণ্য উৎপাদন এবং রপ্তানি করে আমাদের প্রিয়জনদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি নতুন শিল্প গড়ে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং পুরো বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং প্রবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনায় এসব শ্রমিকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, বিশ্বের অনেক স্থানে শ্রমিকদের এ সুযোগ দেওয়া হয় না। শুধু তাই নয়, কিছু স্থানে শ্রমিকদের মানসম্পন্ন জীবনযাপনকেও অস্বীকার করা হয়, তাদের হয়রানি করা হয় এবং ক্ষতি করা হয়। এমনকি তাদের অধিকার চাইতে গেলে হত্যার শিকার হতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীর্ঘ বক্তব্যে বলেন, শ্রমিক ইউনিয়ন গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে, তারা বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বস্ত বন্ধু। আর এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র তাদের রক্ষায় এগিয়ে এসেছে, শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে নয়, বিশ্বব্যাপী। শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষা এবং শ্রম মান উন্নয়নে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতির অন্যমত অগ্রাধিকার। এ কারণে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন, অধিকার রক্ষা এবং উচ্চ শ্রম মান নিয়ে নতুন ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরেন্ডাম’ সই করেছেন। এর মাধ্যমে শ্রম অধিকারকে আমরা জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকার হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত করছি। এটি শুধুই অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, এটি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা এবং পররাষ্ট্রনীতির বিষয়।
এ নীতি বাস্তবায়নে পাঁচটি দিকনির্দেশনা সামনে এনেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলোতে আন্তর্জাতিক শ্রম অধিকার অনুযায়ী শ্রম সুরক্ষায় সরকার, শ্রমিক, শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, নাগরিক সমাজ এবং বেসরকারি খাতের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াবে। তার মানে, আমাদের সব রাষ্ট্রদূতসহ সব মিশনপ্রধানরা শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াবে।
দ্বিতীয়ত, শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা, শ্রমিক অধিকারের পক্ষের কর্মী, শ্রমিক সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে যে বা যারা হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করবে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনবে যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্যিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও ভিসা নিষেধাজ্ঞাসহ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যত ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে, তা প্রয়োগ করা হবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশি গার্মেন্ট ও অধিকারকর্মী কল্পনা আক্তারের মতো মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। কল্পনা আক্তার জানিয়েছেন, শুধু যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কারণে তিনি জীবিত আছেন। কারণ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তাঁর পক্ষে দাঁড়িয়েছে।
শ্রম অধিকার উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র ফেডারেল সরকারগুলোকে শক্তিশালী করবে। চতুর্থত, জাতিসংঘ, জি২০সহ বহুপক্ষীয় ফোরামগুলোসহ বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে শ্রম অধিকার ও মান উন্নয়ন নিয়ে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র, যাতে নীতি গ্রহণে শ্রম অধিকার অগ্রাধিকার পায়।
আর সর্বশেষ শ্রমিক সুরক্ষা ও জোরপূর্বক শ্রম বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র নিজস্ব বাণিজ্য চুক্তিতে বিষয়গুলো নিশ্চিত করে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।