০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:২৫:৪১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


আওয়ামী লীগে এমপি প্রার্থীদের কপালে ভাঁজ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৫-২০২২
আওয়ামী লীগে এমপি প্রার্থীদের কপালে ভাঁজ


 দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের নিজগুণে জিতে আসতে হবে। যাকে দিয়ে বিজয়ী হওয়া সম্ভব তাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যে কপালে ভাঁজ পড়েছে দলের টিকেটে এমপি হবার স্বপ্নে বিভোর নেতাদের। গভীর হতাশায় তারা। এলাকায় এলাকায় নেতাদের হা-হুতাশ নানান ধরনের গুঞ্জন। একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কাদের এবার নৌকার টিকেট দেয়া হবে, কারাইবা বিজয়ী হবে। 

কি বললেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী 

মে মাসের প্রথম সপ্তাহে নিজের সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হয়। এতে ওপরের কথাগুলি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাকালের দীর্ঘ আড়াই বছর পর অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পূর্ণাঙ্গ ওই বৈঠকে প্রায় সব কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সভাপতির সূচনা বক্তব্যের পর রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। যদিও রুদ্ধদ্বার বৈঠকের সব খবর মিডিয়ায় চলে এসেছে। বৈঠকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে দলটির নেতা এবং দলীয় এমপিদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা কিছু কথা বলেন। তিনি  বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ইভিএম পদ্ধতিতে। এ নির্বাচনে আমরা সব দলের অংশগ্রহণ চাই। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোটে যাকেই নৌকা দেয়া হবে তাকে নিজগুণে জিতে আসতে হবে। কোনো ঝুঁকি নিতে চাই না। তিনি সবাইকে চমকে দিয়ে জানান, প্রতিটি নির্বাচনী আসন ধরে জরিপ চলছে। জরিপের আলোকে প্রার্থী বাছাই করা হবে। যাকে দিয়ে বিজয়ী হওয়া সম্ভব তাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে।

শুরু হয়ে যায় তোলপাড়

গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যের পর থেকেই দলের মধ্যে নানাধরনের কানাঘুষা শুরু হয়ে গেছে। চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কারা পাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকেট? কারণ অতীতে দেখা গেছে, যারাই নৌকার টিকেট হাতে পেয়েছে তাদেরই জয়ের মুকুট পড়েছেন। তবে এবারের অওয়ামীর লীগের এমপি প্রার্থী হতে চান এমন বেশ কয়েকজনের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, তাদের শঙ্কা অন্যখানে। তাদের মনে এবারে দলের সভানেত্রীর বক্তব্যে তারা অন্য ধরনের শঙ্কা দেখতে পান। কেননা গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন জরিপ চলছে।

 তাছাড়া বলেছেন যাকে দিয়ে বিজয়ী হওয়া সম্ভব তাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। এ-ও বলেছেন যে, নিজগুণে জিততে হবে। এলাকায় কর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক না থাকলে নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, ভর্তি ও বদলিবাণিজ্য কিংবা টিআর-কাবিখার টাকা মেরে খাওয়া কাউকে এবার মনোনয়ন দেয়া হবে না শোনা যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অওয়ামী লীগ নেতা এই প্রতিনিধি বলেন, তারা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনের বিজয়ী করে আনার ব্যাপারে অতীতের মতো ঝুঁকি নেবেন না বা নেয়া সম্ভব না-ও হতে পারে বলে আগাম জানিয়ে দিয়েছেন।

কেননা এবার রাজনৈতিক অঙ্গনে একথা প্রতিষ্ঠা পেয়ে যাচ্ছে যে, এবার কোনোভাবেই ২০১৪ বা ২০১৮-এর মতো জাতীয় নির্বাচন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে আয়োজন করা সম্ভব না-ও হতে পারে। এটা করা হলে সারা দেশ কাটিয়ে বাইরেও এর প্রভাব পড়বে,যার দখল সরকার সামলে উঠতে পারবে না। দেশে একটা অন্যরকম পরিস্থিতি তৈরি হবে। আর এজন্য দলীয় প্রার্থীদের নিজগুণে জিতে আসতে হবে, যাকে দিয়ে বিজয়ী হওয়া সম্ভব তাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন বক্তব্য দিয়েছেন বলে অনেকে মনে করেন। 

আর অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর বেশ কয়েকবার তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাত করতে চায়। আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী? আওয়ামী লীগ কোথায় ব্যর্থ হয়েছে? তার এমন বক্তব্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে রেখাপাত করেছে। তাদের কারো কারো মতে,এর আগে কখনো প্রধানমন্ত্রী এমনভাবে কথা বলেননি। ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যে ২০১৪ বা ২০১৮-এর মতো হতে পারবে না তা অনেক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধীরে ধীরে বদ্ধমূল হচ্ছে।

 আর এতে করে তাদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে অনেক কষ্ট করে কোটি কোটি কামিয়ে, দলের নানান ধরনের গ্রুপিং-লবি করে এখন যদি এমপি না হওয়া যায়, তাহলে তাদের ভবিষ্যৎইবা কি? আবার তাদের মধ্যে প্রশ্ন কাদের হাতে এবার তুলে দেয়া হবে নৌকার প্রতীক বা এমপি হবার টিকেট? কারা এটা কীভাবে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করছেন যে, এরা বিজয়ী হচ্ছেন। এসব নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে দলের ভেতরে-বাইরে এর পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনে। 

হতাশ তৃণমূলে নজর আওয়ামী লীগের

আওয়ামী লীগের তৃণমূল এখন সবচেয়ে বেশি দুর্বল অবস্থানে আছে বলে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকেও অভিযোগ আছে। আর দলের তৃণমূলে সকল প্রকার কোন্দল যে স্থানীয় এমপির পাশাপাশি দলের শীর্ষ বেশ কয়েকজন দায়ী তা উঠে আসে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে। এতে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, তৃণমূলে সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে গিয়ে ত্যাগী-পরীক্ষিতদের বাদ দেয়ার কথা। বলেছেন হাইব্রিড, নব্যলিগার ও টাকার কুমিরদের দলে পদ দেয়া হচ্ছে। অনেকে বলেছেন, দল বেশি আমলানির্ভর। 

এতে তৃণমূল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বলা হয় আমলারা এখন এতো বেশি প্রভাবশালী হয়ে পড়েছে যে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পাত্তা পাচ্ছে না। আর এজন্য আওয়ামী লীগ এখন তৃণমূলে নজর দিয়ে দলকে সামনের দিকে এগোতে চায়। আর এজন্য আগামী অক্টোবর ও নভেম্বরের মধ্যে আওয়ামী লীগের সব সাংগঠনিক জেলা-উপজেলা সম্মেলন শেষ করার আভাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনিও গণমাধ্যমে জানিয়েছেন তৃণমূল সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে আওয়ামী লীগের। 

আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় দলের জাতীয় কাউন্সিলের আগেই সব জেলা-উপজেলা সম্মেলন শেষ করে দলকে গুছিয়ে নিতে চায় সংগঠনটি। লক্ষ্য দলে স্বচ্ছ ও নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতিও এগিয়ে রাখা। কিন্তু তার এবং তাদের এমন বক্তব্যে কেউ ভরসা পাচ্ছেন না আসলে আগামীতে কারা এমপি হচ্ছেন। সবাই রয়েছেন অন্ধকারে। বাড়ছে এলাকায় হতাশা উদ্বেগ। কারা হবেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী।


শেয়ার করুন