২০ মে ২০১২, সোমবার, ৬:৪৯:২৮ পূর্বাহ্ন


দেশকে ফেরদৌস ওয়াহিদ
আমি গান করি মনের খোরাক জোগাতে
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৫-২০২৪
আমি গান করি মনের খোরাক জোগাতে ফেরদৌস ওয়াহিদ


ফেরদৌস ওয়াহিদ। বাংলাদেশে পপ সঙ্গীত ইতিহাসে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত একটি নাম। পপ সঙ্গীতকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে পরিচিত এবং জনপ্রিয় করায় রেখেছেন অনবদ্য অবদান। চার দশকের সঙ্গীত ক্যারিয়ারে গেয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। গত মার্চে মুক্তি পেয়েছে তার নতুন গান। এসব নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির

প্রশ্ন: দীর্ঘ বছর ধরে আপনি গান করছেন। ছোট বেলা থেকেই কি আপনার এই ইচ্ছে ছিল?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: ছোটবেলায় আমি পাইলট হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হয়ে গেছি গায়ক।

প্রশ্ন: এত কিছু থাকতে গানে এলেন কেন?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: ছোটবেলায় আমি রবীন্দ্রসংগীত গাইতাম। তবে কোনো শিক্ষকের কাছে না শিখেই গান গাইতাম। এরপর ক্লাস এইটে ওঠার পর ‘আরমান’ নামে একটি হিন্দি ছবি দেখি। ছবিতে একটি ছোট্ট শিশু গান গায়। গানটি শোনার পর আমার মধ্যে গায়ক হবার জেদ চাপে। ১৯৬৫ সালে ৯ টাকা ৪ আনা দিয়ে আমি একটি গ্রামোফোন কিনি। এটা দিয়ে গান শুনতাম আর শেখার কাজটি করতাম। এরপর গানের প্রতি আমার আগ্রহ দেখে বাবা আমাকে গানের শিক্ষকের কাছে পাঠান। এভাবেই শুরু হয় আমার গান শেখা।

প্রশ্ন: জীবনের মোড় ঘরিয়ে দেয় কোন গানটি?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: ১৯৭৭ সালে আলম খানের সংগীত পরিচালনায় জীবনের প্রথম প্লে­ব্যাক করলাম। গানটি ছিল ‘ওই দুটি চোখ’। আমি আর সাবিনা ইয়াসমিন গেয়েছিলাম। ছবির নাম ‘অন্তরালে’। ছবিতে লিপসিং করেন সোহেল রানা ও ববিতা। এই গানটি আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

প্রশ্ন: গত মার্চে আপনার নতুন গান প্রকাশ হয়েছে। কতদিন পর এলো এই গান?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: তা প্রায় বছর চার-পাঁচ তো হবেই। অনেক দিন পর শ্রোতাদের নতুন গান উপহার দিতে পারলাম। ভালো লাগছে।

প্রশ্ন: এ রকম কতটি গান প্রকাশের অপেক্ষায়?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: সব মিলিয়ে ২২টি গান তৈরি আছে। কিছু গানের ভিডিও তৈরি হয়েছে, কিছু গানের হয়নি। ঈদের পর বাকি গানগুলোর ভিডিও তৈরি করে প্রকাশ করব।

প্রশ্ন: গানগুলোর গীতিকার, সুরকার কারা?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: বেশির ভাগ গানই হয়েছে নতুনদের সঙ্গে। আমি তো সব সময়ই চেষ্টা করি নতুনদের প্রমোট করতে। নাটক, সিনেমাতেও যেমন করি, গানেও সেই চেষ্টাটা করি। এবারের গানগুলো তাই নতুনদের দখলেই থাকছে বেশি। তবে গানগুলো ভালো হয়েছে। ভালো না হলে আমি গান করি না। এই যেমন ‘জীবনগল্প’ গানটি। সবাই প্রশংসা করছে। আমারও ভীষণ ভালো লেগেছে।

প্রশ্ন: মিউজিক ভিডিওর শুটিং করেছেন কোথায়?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: আমাদের গ্রামের বাড়িতে। বিক্রমপুরে। আমাদের বাড়িরই একটা অংশে হয়েছে শুটিং।

প্রশ্ন: আপনি তো সাধারণত রিদমিক গান গাইতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এই গানটা তো তেমন নয়। আবার ভিডিওতেও আপনাকে কেমন একটু বয়সে ভারাক্রান্ত মনে হলো। এগুলো কি পরিকল্পনা করেই করা?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: আসলেই তাই। আমি যে ধরনের নাচাগানার গান গাই, এটা আমার সেসব গানের চেয়ে একেবারে আলাদা। আসলে আমি চাইছি এমন কিছু গান করতে, যেগুলো জীবনের অর্থ বহন করে, গুরুত্ব বহন করে। এটা তেমনই একটা গান। তবে এই গানটাতেও কিন্তু ভীষণ রিদম আছে, অদ্ভুত এক ছন্দ আছে। গানটি লিখেছে শেখ নজরুল। সুর করেছে পিজিত মহাজন। সংগীত আয়োজন করেছে ওয়াহেদ শাহীন।

প্রশ্ন: নতুনদের সঙ্গে কেন? চাইলেই তো সিনিয়র কারও সঙ্গে গানটি করতে পারতেন?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: সেটা তো পারতামই। এটা সবাই করে। আমি তো চাই নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে। নতুন একটা ছেলে আমাকে নিয়ে গান করতে চাইছে, এত সুন্দর একটা গান! তাই করলাম। আমি তো নতুনদের নিয়ে কাজ করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। তাছাড়া, আমি কিন্তু জনপ্রিয়তার পেছনে ছুটি না। আমি গান করি মনের খোরাক জোগাতে। সিনেমাটাও তাই। কে দেখল, কে শুনল, কতটা জনপ্রিয় হলো-এসব নিয়ে আমি চিন্তিত নই। আমি কাজটা কতটা আনন্দ নিয়ে করতে পারলাম, সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন: নতুন কোনো সিনেমা বানাচ্ছেন?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: বানাচ্ছি তো। মোটামুটি এক ধরনের প্রস্তুতিও নিয়ে নিয়েছি। সব হবে ঈদের পরে। সিনেমার কাজটা আগে ধরতে চাই।

প্রশ্ন: কী নাম সিনেমার?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: সিনেমার নাম ‘সন্ধ্যা মায়া’। তবে গল্পটা এখনই বলতে চাইছি না। কিছু বিষয়ে চমক থাকুক। আগে সব বলে দিলে তো মজাটাই ফুরিয়ে গেল।

প্রশ্ন: আপনি অভিনয় করছেন?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: আমি সময় সুযোগ করতে পারলে কোনো একটা চরিত্রে অভিনয় করতেও পারি। তবে এবার পরিচালনাতেই পুরোপুরি মনোযোগ দিতে চাই। আগের সিনেমাটা করে অভিজ্ঞতা হয়েছে। এবার সেই অভিজ্ঞতাটা কাজে আসবে।

প্রশ্ন: সিনেমার নায়ক-নায়িকা কারা?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: সাজ্জাদ ও সোনিয়া। দু’জনেই নতুন। 

প্রশ্ন: সন্ধ্যা মায়ার গানে কারা থাকছে?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: সিনেমায় গান থাকছে তিনটি। সব গানে আমি কণ্ঠ দিয়েছি। একটি ডুয়েট আছে। আমার সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছে ন্যান্সি। সংগীত করেছে বাপন। খুব ভালো মিউজিক করেছে।

প্রশ্ন: আপনার ছেলে হাবিব ওয়াহিদের কোনো গান থাকছে না?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: হাবিবের সঙ্গে তো করেছি আগে। তাছাড়া, হাবিব এখন যে পরিমাণ ব্যস্ত থাকে, ওর পক্ষে সময় বের করাটাও মুশকিল। তবে, যেকোনো কাজেই ওর পরামর্শ থাকে। আলোচনা করে সে তার পরামর্শ জানায়, মিউজিশিয়ানদের দিকনির্দেশনা দিয়ে দেয়।

প্রশ্ন: ছেলের সঙ্গে গান করতে গিয়ে একবার নাকি ফাপড়ে পড়েছিলেন?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: সে কথা আর কী বলব? ‘অবশেষে’ নামে আমাদের দ্বৈত একটা অ্যালবাম বের হয়েছিল। সেখানে একটা গান ছিল ‘ভালোবাসব প্রতিদিন’। সেই গানটা আমার কোনোমতেই হচ্ছিল না। হাবিব তখন আমাকে দিয়ে এই গানটা ১২৩ বার গাওয়ায়। এরকম আরো অনেক ঘটনা আছে। যেমন প্রাণআপ বিজ্ঞাপনের তিনটা জিঙ্গেল আমি আর ন্যান্সি করি। প্রাণআপের শেষ জিঙ্গেলটা যখন করতে যাই তখন হাবিব সরাসরি বলল, তোমার ভেতরে আজকে কোনো প্রেম নেই। তুমি গাইছো সব ঠিক আছে। কিন্তু তোমার ভেতরে প্রেম পাচ্ছি না। তুমি এক সপ্তাহ পরে প্রেম নিয়ে এসো। আমি আর ছেলেকে কি বলব? এক সপ্তাহ পর আবার গেলাম। ছেলে ঐদিন আড়াইঘণ্টা চেষ্টা করল তারপরেও গানটা হলো না। আবার এক সপ্তাহ পরে গেলাম। ২০ মিনিটে গানটা হয়ে গেল। ছেলে আমাকে বলল, আজকে তোমার প্রেমটা কোথা থেকে আসল?

শেয়ার করুন