০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:১৩:১৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি হুমকির মুখে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০২-২০২৩
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি হুমকির মুখে


বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের নামীদামি ব্র্যান্ডের নকল তৈরি  পোশাক পাঠানোর অভিযোগ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এতে বাংলাদেশের একক বৃহত্তম বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রের মার্কেটে নজরদারিতে পড়েছে বাংলাদেশের পোশাক পণ্য। যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ (ইউএসটিআর) ১০ ফেব্রুয়ারি  ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের দূতাবাসের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের নামে নকল তৈরি পোশাক রপ্তানির অভিযোগ করেছে। চিঠিতে ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অভিযোগের জবাব দিতে বলা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া উদ্যোগের বিষয়ে ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য সময় চাওয়া হয়েছে ইউএসটিআরের কাছে। চলতি মাসের মধ্যে অভিযোগের জবাব দেবে বলে যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করেছে বাংলাদেশ। এই নকলের দায়ে শাস্তির খড়গ নেমে আসতে পারে, এমন আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক উদ্যোক্তারা।

এ ঘটনায় রপ্তানিকারকদের পাশাপাশি অর্থনীতিবিদরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।  দূতাবাসের মাধ্যমে পাঠানো চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নকল পণ্য সরবরাহের অভিযোগ করেছে আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ) এবং প্যারিসভিত্তিক ইউনিয়ন ডেস ফেব্রিকস (ইউনিফ্যাব)। অভিযোগে এএএফএ বলেছে, তৈরি পোশাক সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ উৎস হওয়ার পরও মেধাস্বত্ব রক্ষায় প্রতিষ্ঠিত নীতিমালার অনুপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।

এ ছাড়া উচ্চ পর্যায়ে চরম দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ থেকে অব্যাহত হারে নকল পণ্যের বৈশ্বিক বিস্তার ও উৎপাদন বাড়ছে। চিঠিতে উল্লেখ্য করা হয়েছে, তাদের দেশের ক্রেতাদের দেয়া ক্রয়াদেশে তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক হুবহু নকল করে ভিন্ন দেশ ও ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা, যা মেধাস্বত্ব আইনের পরিপন্থী। গত বছরের জানুয়ারিতে ওই অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরে (ইউএসটিআর) জমা দেয় সংগঠন দুইটি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পর্যালোচনা শুরুর বিষয়টি বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে ইউএসটিআর।

এএএফএ-এর অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশে প্রস্তুত করা ৫৬টি নকল পণ্যের চালান জব্দ করা হয়েছে, ২০২১ সালের চেয়ে যা ৫০ শতাংশ বেশি। এএএফএ জানিয়েছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশে প্রস্তুত করা ৫৬টি নকল পণ্যের চালান জব্দ করা হয়েছে, ২০২১ সালের চেয়ে যা ৫০ শতাংশ বেশি। নকল পণ্য সরবরাহের অভিযোগ আছে অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, মালয়েশিয়া, ত্রিনিদাদ ও টোবোগো, জাপান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, রোমানিয়া, সৌদি আরব, জার্মানি ও ফিলিপিন্সের বিরুদ্ধে। মালয়েশিয়ায় ২০২২ সালে ১৭টি অভিযানে প্রায় পৌনে দুই লাখ পোশাক জব্দ করা হয়েছে, যার সবই বাংলাদেশে উৎপাদিত নকল পণ্য। রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর কোটা আরোপ, যে পণ্য নকল করা হয়েছে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং বাড়তি শুল্কারোপ করতে পারে। তাদের মতে, নকল পণ্য সরবরাহ করার অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে রপ্তানি আয়ে ধস নামবে। যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযোগ যদি সত্যি প্রমাণ হয়, তাহলে বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনা অন্য দেশগুলোও ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিতে পারে। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, অভিযোগটি আমাদের কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের চিঠিতে সুনির্দিষ্ট করে কারা এই নকল পণ্য সরবরাহের সঙ্গে জড়িত এই রকম কিছু নেই। চিঠিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড নকল করে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি করা হয়েছে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানতে চেয়েছি, কারা এই নকল পণ্য সরবরাহের সঙ্গে জড়িত। তিনি আরো বলেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখার ক্ষেত্রে সরকারকে সহযোগিতা করবেন ব্যবসায়ীরা। অভিযোগের কোনো সত্যতা পেলে সরকারের দেয়া সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, নকল পণ্য সরবরাহের অভিযোগ বাংলাদেশকে গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি হুমকির মুখে পড়বে। বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি শহীদউল্লাহ আজিম বলেন, আমাদের কোনো সদস্য এই নকল পণ্য সরবরাহের সঙ্গে জড়িত নয়। 

আমার মনে হয় যারা তৃতীয়পক্ষের হয়ে কাজ করে, তারা এ ধরনের পণ্য কারসাজির সঙ্গে জড়িত। এদিকে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের দুইটি বাণিজ্য সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর বাংলাদেশি পণ্যের ক্ষেত্রবিশেষ পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর ইউএসটিআর। এই প্রতিষ্ঠানটি মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ ও কার্যকরের দিকটিও দেখভাল করে। এই পর্যালোচনাকে বলা হচ্ছে ‘স্পেশাল ৩০১ রিভিউ অন আইপিআর (ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস) প্রটেকশন অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট’। পর্যালোচনা শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে বাড়তি শুল্কারোপ, কোটা বেঁধে দেয়া, এমনকি নিষেধাজ্ঞার মতো ব্যবস্থা নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে দুই লাখ ৮২ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকার। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে গেছে ৫৯ হাজার ৬২৪ কোটি ১০ লাখ টাকার পোশাক, যা মোট পোশাক রপ্তানির ২১ শতাংশের মতো। অভিযোগের বিষয়ে এএএফএ’র প্রেসিডেন্ট ও সিইও স্টিভ ল্যামার এক ই-মেইল বার্তায় গণমাধ্যমকে বলেন, পোশাক আমদানির উৎস হিসেবে বাংলাদেশ আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাংলাদেশে নকল পণ্য তৈরির প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশে তৈরি এসব নকল পণ্য ধরা পড়ার ঘটনাও ক্রমশ বাড়ছে। 

পোশাক ও পাদুকা শিল্পের উৎপাদন প্রক্রিয়া অবশ্যই বৈধ হতে হবে। মেধাস্বত্ব যাতে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়, নকলকারীদের বিরুদ্ধে যাতে ব্যবস্থা নেয়া হয়, আমেরিকায় মানুষের কাজের সুযোগ এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সব ক্ষেত্রকে যেন সুরক্ষা দেয়া যায়, তা সব সময়ই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এএএফএ’র অভিযোগে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি নকল পণ্য রপ্তানিককারক পাঁচ দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে রেখেছে ওইসিডি। নকল জুতা, হাতব্যাগ ও গয়নার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ রয়েছে শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশের তালিকায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অফিসের বিচারে চীন ও তুরস্কের পর বাংলাদেশ হলো নকল তৈরি পোশাকের বৃহত্তম উৎস। তাদের মতামতে বলা হয়েছে, আমরা জানি, এলসিডি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ উন্নয়ন ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহায়তা পায়। কিন্তু নকল পণ্যের উৎপাদক হিসেবে বাংলাদেশকে বাড়তে দিলে তার যে প্রভাব আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পড়বে, সেটা সংশোধন করার উপায় থাকবে না। এদিকে ইউএসটিআর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পর্যালোচনা শুরুর বিষয়টি জানিয়ে বলেছিল, এ বিষয়ে উন্মুক্ত শুনানির আয়োজন করা হবে। অভিযোগের বিষয়ে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে ইউএসটিআরের উন্মুক্ত শুনানি হবে। 

শেয়ার করুন