০৩ অক্টোবর ২০২৫, শুক্রবার, ০৩:০৩:২০ পূর্বাহ্ন


বাংলাদেশ ডে প্যারেড, না পুলিশি প্যারেড
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৫-২০২৪
বাংলাদেশ ডে প্যারেড, না পুলিশি প্যারেড বাংলাদেশ ডে প্যারেডে অংশগ্রহণকারীরা


গত ২৬ মে রোববার নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হলো বহুল প্রত্যাশিত ‘বাংলাদেশ ডে প্যারেড’। তবে আয়োজকরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম না হওয়ায় প্যারেড পূর্ববর্তী শুভেচ্ছা বক্তব্য পর্বটি হযবরল অবস্থায় নিপতিত হয়েছিল। আবার প্যারেড দেখে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন এটি কি আসলে বাংলাদেশ ডে প্যারেড, নাকি পুলিশি প্যারেড (বাপার প্যারেড)। হযবরল অবস্থার কারণে একবার বাংলাদেশ ডে প্যারেডের তারিখ পরিবর্তন করা হয়। তারিখ পরিবর্তন করেও খুব একটা যে লাভ হয়েছে তা বলা যাবে না। যে লাউ সেই কদু। তবে কনভেনর এবং গ্র্যান্ড মার্শাল শাহ নেওয়াজের কারণে সবার মান রক্ষা। বাংলাদেশ ডে প্যারেডে প্রবাসী বাংলাদেশিদের যে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করার কথা ছিল তা লক্ষ করা যায়নি।

ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস ডেভেলপমেন্টের উদ্যোগে নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে ৬৯ স্ট্রিট থেকে ৩৭ অ্যাভিনিউয়ের ওপর দিয়ে ৮৯ স্ট্রিট পর্যন্ত বিস্তৃত এ প্যারেডের মধ্যমণি ছিলেন সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস। মেয়র তার বক্তব্যে বাংলাদেশিদের সততা-কর্মনিষ্ঠা এবং মেধার প্রশংসা করে বলেন, আমি সেই কমিউনিটির সাপোর্ট পাওয়ায় নিজেকে ধন্য মনে করি এবং সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশি আমেরিকানদের কল্যাণে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করছি। বিপুল করতালির মধ্যে প্যারেডের মঞ্চে মেয়র অ্যাডামসকে উপস্থাপন করেন নিউইয়র্ক সিটির সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদে (চিফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার) অধিষ্ঠিত মীর বাশার। এ সময় তিনি মেয়রকে ‘আইকন অব দ্য প্যারেড’-এর ব্যাজ পরিয়ে দেন। 

প্যারেডের পক্ষ থেকে আহ্বায়ক শাহনেওয়াজ মেয়রকে বিশেষ সম্মাননা স্মারক প্রদান করার আগে প্যারেডের মার্শাল বিএনপি নেতা গিয়াস আহমেদ বলেন, এরিক অ্যাডামস নানাবিধ কাজের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশিদের হৃদয় জয় করেছেন। তার মতো মেয়রের সান্নিধ্য পেয়ে আমরা সবাই অভিভূত। এর আগে প্যারেড কমিটির চেয়ারপারসন শাহ শহিদুল হক সাঈদ, ডেমোক্র্যাট ফাহাদ সোলায়মান, ডেমোক্রেটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাট লার্জ অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, আবাসন ব্যবসায়ী নুরুল আজীম, বিএনপি নেতা কাজী আজম, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের একাংশের প্রেসিডেন্ট বদরুল খান, প্রেসিডেন্সিয়াল অ্যান্ড ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার চ্যাম্পিয়ন আব্দুল কাদের শিশির, প্যারেডের সদস্য সচিব তরিকুল হোসাইন বাদল, স্টেট সিনেটর জেসিকা গঞ্জালেস, কুইন্স বরোর ডেপুটি প্রেসিডেন্ট ইবনে ইয়ং এবং বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন। এক সময় প্যারেডের মঞ্চে হযবরল অবস্থার কারণে আয়োজক সংগঠনের সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহানকে মঞ্চ ত্যাগ করতে দেখা যায়। প্যারেডের শুরুতেই কনভেনর সপ্তাহিক আজকাল সম্পাদক, গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারের প্রেসিডেন্ট শাহ নেওয়াজকে গ্র্যান্ড মার্শালের ব্যাজ পরিয়ে দেন শাহ শহীদুল হকসহ অন্য কর্মকর্তারা।

শাহ নেওয়াজ প্যারেড সফল করার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন এবং আগামীতে ভালো কাজের সঙ্গে তার সহযোগিতা থাকবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।

চিত্রনায়িকা মৌসুমি তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে আমরা একত্রিত হয়েছি প্যারেডের এ সুন্দর আয়োজনে। এই নিউইয়র্কে অনেক প্রবাসী দেখি নানা অনুষ্ঠানে। কিন্তু দেশের নামে কোনো আয়োজনে সবাই কেন পিছিয়ে থাকে, সেটা অনেক খারাপ লাগে। আশা করি এর পরের বার যখন আয়োজন হবে সবাই আসবেন, সে আমন্ত্রণ রইলো এবং এটা আমাদের দায়িত্ব। আমরা বাংলাদেশিরা এখানে আছি এবং কমিউনিটি হিসেবে কত বড় তা সবাইকে দেখানো উচিত। 

উল্লেখ্য, প্যারেডের মান বাঁচিয়েছেন নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে বাংলাদেশি অফিসাররা। সিটি পুলিশের চৌকস দুটি ঘোড়াসহ পাঁচ শতাধিক পুলিশ অফিসারের উপস্থিতি ছিল। এবারই প্রথম জ্যাকসন হাইটসের ব্যস্ততম সড়ক বন্ধ করে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা করা হয়েছিল প্যারেডের জন্যে। প্যারেডে অংশগ্রহণকারী প্রবাসীর অর্ধেকই ছিলেন পোশাক পরিহিত পুলিশ অফিসাররা। সিটির বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত বাংলাদেশিরাও নিজ নিজ ব্যানারসহ এসেছিলেন। মৌলভীবাজার ডিস্ট্রিক্ট সোসাইটিও প্যারেডে অংশগ্রহণ করেন। আরো অংশগ্রহণ করেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধারা। যার মধ্যে অন্যতম যুক্তরাষ্ট্র জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ বাবর উদ্দিন, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কমান্ডার, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফিরোজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুবেদার শফিক উল্লাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সেলিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্যাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হোসাইন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত রচি প্রমুখ। 

তবে প্যারেড শুরু হওয়ার আগে মূলমঞ্চে দেশের গান পরিবেশন করেছেন বিন্দু, কনা, রানো নেওয়াজ ও শাহ মাহবুব।

শেয়ার করুন