০৬ জুলাই ২০১২, শনিবার, ৬:৪৪:২৭ অপরাহ্ন


ইউরোপের পর ভারতীয় পণ্য পরীক্ষা করতে যাচ্ছে আমেরিকা
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৫-২০২৪
ইউরোপের পর ভারতীয় পণ্য পরীক্ষা করতে যাচ্ছে আমেরিকা ১২ দলীয় জোটের পুলিশি বাধা


নীরবেই প্রচারণা চলছে ‘ইন্ডিয়া আউট’ কর্মসূচির। সরাসরি ইন্ডিয়া আউট বলা হচ্ছে না, তবে প্রকারান্তে এটাকে ইন্ডিয়া আউটই বলা চলে। ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন ও আগ্রাসন প্রতিরোধে রুখে দাঁড়ান’ স্লোগান সামনে রেখে এগোচ্ছে কতিপয় দল। এর মধ্যে ১২ দলীয় জোট ওই স্লোগান সংবলিত লিফলেট বিতরণ ও প্রচার করছে। ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃত্ব বলছেন, শুধু ভারতীয় পণ্য বর্জন নয়, বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধিকারের দাবিতে দেশের জনগণ নীরবে ঘরে ঘরে প্রস্তুত হচ্ছেন। 

১২ দলীয় জোট কারা?

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ভেঙে গঠিত হয় ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বিএনপি, জামায়াত ও এলডিপি আলাদা থেকে যায়। তবে এরা সবাই মিলেই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন করেছিল। নির্বাচনের পর এরা আবার সরব। কিন্তু যে যার অবস্থানে থেকেই। তবে এখনো এ দলসমূহ বিএনপি ছেড়ে যায়নি। কার্যক্রম তেমন সক্রিয় না হলেও এখনো তারা বিএনপি নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনের অধীনেই কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছেন। 

ময়মনসিংহে লিফলেট বিতরণ 

গত সোমবার (২৯ এপ্রিল) ময়মনসিংহ মহানগরীর চরপাড়া ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন ও আগ্রাসন প্রতিরোধে রুখে দাঁড়ান’ শীর্ষক লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি করে এই ১২ দলীয় জোট। এ সময় জোটের শীর্ষনেতারা মার্কেটের দোকানি, পথচারী ও সাধারণ মানুষের হাতে লিফলেট তুলে দেন। এ সময় ভারতীয় পণ্য বর্জনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে ভারতের ৫২৭টি পণ্যে বিষক্রিয়া পাওয়া গেছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেই পণ্যগুলো নিষিদ্ধ করেছে। আরেকটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, ভারতীয় দুটি ওষুধে ক্যানসারের মিশ্র উপাদান পাওয়ায় হংকং ও সিঙ্গাপুর সেটা নিষিদ্ধ করেছে।’ এদিকে আমেরিকাতেও ভারতীয় পণ্য পরীক্ষা করা হবে।

১২ দলীয় জোটের শীর্ষনেতারা এ সময় বলেছেন, ‘শুধু পণ্য বর্জন নয়, ভারতের কবল থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচি বাস্তবায়নে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। শুধু ভারতীয় পণ্য বর্জন নয়, বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধিকারের দাবিতে দেশের জনগণ নীরবে ঘরে ঘরে প্রস্তুত হচ্ছেন।’ 

১২ দলীয় জোটের শীর্ষনেতারা বলেছেন, সীমান্তে প্রতিদিন পাখির মতো গুলি করে বাংলাদেশিদের হত্যা করা হচ্ছে। যদি বন্ধু হও, প্রতিবেশী হও, তাহলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ দেশের গণতন্ত্র হত্যার বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। 

এ সময় তারা আরো বলেন, আমরা ভারতের জনগণের বিরুদ্ধে নই, আমরা সমতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব চাই। কিন্তু যে বন্ধু আমাদের হত্যা করবে শোষণ করবে, নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করবে, তার সঙ্গে কখনোই বন্ধুত্ব হতে পারে না। তাই আমরা ভারতীয় পণ্য বর্জন করে বলতে চাই সীমান্তে হত্যা বন্ধ করো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নগ্ন হস্তক্ষেপ বন্ধ করুন। আপনার দেশে গণতন্ত্র থাকবে, কিন্তু আমার দেশের গণতন্ত্র থাকবে না। সেটি বাংলার জনগণ কখনো মেনে নেবে না। 

নেতৃবৃন্দ আক্ষেপ করে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার পরও তাদের আগ্রাসন ও দাদাগিরির বিরুদ্ধে আজকে বাংলাদেশের জনগণ ফুঁসে উঠেছে। দেশের জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে একটি দলের পক্ষে অবস্থান, বাংলাদেশের গণতন্ত্র হত্যা এবং আগ্রাসনের প্রতিবাদে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের মানুষ তার রক্তাক্ত সীমান্ত, অধিকৃত স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আবারও একটি মুক্তিযুদ্ধ করতে প্রস্তুত। তারা বলেন, আধিপত্যবাদ আগ্রাসন ও গণতন্ত্র হত্যার জন্য ভারতের বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষ সামাজিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ১৯৭১ সালে লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল পিন্ডির শৃঙ্খল মুক্ত হয়েছিল দিল্লির দাসত্ব করার জন্য নয়।

লিফলেটে যা রয়েছে- 

১২ দলীয় জোটের লিফলেটে বলা হয়েছে, ‘দেশি পণ্য, কিনে হই ধন্য। আমাদের শিল্পকলকারখানা ও কৃষক বাঁচান এবং দেশ রক্ষার আন্দোলনে সবাই এগিয়ে আসুন। আমাদের রাজনৈতিক পরিচয় ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু দেশটা সবার আগে। বাংলাদেশের ১৮ কোটি জনগণের সর্বনাশ করে ভারতকে সুবিধা দেওয়া রাজনীতি হতে পারে না। লিফলেটে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার গায়ের জোরে ভোটচুরির মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করে আসছে। তারা লুটপাট করতেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিদ্যুৎ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়িয়েছে। এই সিন্ডিকেট সরকারকে না বলুন। একই সঙ্গে সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা, বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন বিষয়ে হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান জানানো হয়। 

ময়মনসিংহে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, জোটের সমন্বয়ক বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, বাংলাদেশ এলডিপির সিনিয়র সহসভাপতি সৈয়দ রওনক ইব্রাহিম, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন প্রধান, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, বাংলাদেশ এলডিপির অতিরিক্ত মহাসচিব তমিজউদ্দিন টিটু, বাংলাদেশ জাতীয় দলের ভাইস চেয়ারম্যান সারোয়ার আলম ও লেবার পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব শরিফুল ইসলাম।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি, ঢাকা প্রেসক্লাবের সামনে ১২ দলীয় জোটের উদ্যোগে ‘ইন্ডিয়া আউট বয়কট ইন্ডিয়া’ শীর্ষক বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। কিন্তু পুলিশ ওই মিছিল বেশিক্ষন চলতে দেয়নি। ব্যানার কেড়ে নিয়ে মিছিল প- করে দেয়। 

এছাড়াও বিভিন্ন ব্যানারে দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন প্রচারণা বিদ্যমান। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন প্রচারণা শুরু হয়, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পরপরই। সেটা অব্যাহত রয়েছে। দোকানিরা জানাচ্ছেন, ক্রেতারা ভারতীয় ও ইসরায়েলি পৃষ্ঠপোষকতায় থাকা পণ্যসমূহ ক্রয়ে বিকল্প খুঁজছেন। 

এসব ওই প্রচারণার ফসল বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। তবে একই সঙ্গে ভারতে পর্যটক যাওয়া ও ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য ব্যবহার একেবারে কমে গেছে তা নয়। তবে ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে এমনটাই জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে ইউরোপে ও এশিয়া অঞ্চলেও কয়েকটি দেশে ভারতীয় পণ্যে বিষক্রিয়া প্রাপ্তির পর থেকে।

শেয়ার করুন