০১ জুলাই ২০১২, সোমবার, ১১:৫৫:৩৯ অপরাহ্ন


জনজীবনকে আতঙ্কে রেখে নির্বাচন : এমএসএফ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৬-২০২৪
জনজীবনকে আতঙ্কে রেখে নির্বাচন : এমএসএফ


জনজীবনকে আতঙ্কের মধ্যে রেখে সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। নির্বাচনের আগে ও পরে সহিংসতায় হতাহতের সংখ্যা উদ্বেগজনক।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)এর পক্ষ থেকে গত মে’ মাসের রির্পোট তুলে ধরতে গিয়ে ‘মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদন মে, ২০২৪’ এ এসব মন্তব্য করা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।

এমএসএফ’র পক্ষ থেকে বলা হয় , মে মাসে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল ষষ্ঠ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এই মাসে চার ধাপে ৪৮১টি উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও তিন ধাপে ৩৮২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে যা ছিল এক পাক্ষিক এবং যা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ক্ষেত্র বিশেষে বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীদের আটক করার পর মামলা দেওয়া হয়েছে কিংবা পুরোনো মামলায় তাদের যুক্ত করা হয়েছে। বরাবরের মতই বিরোধীদলের উপর নির্বিচার মামলা -গ্রেফতারের কারণে জনজীবনকে আতঙ্কের মধ্যে রেখে সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। নির্বাচনের আগে ও পরে সহিংসতায় হতাহতের সংখ্যা উদ্বেগজনক। সব মিলিয়ে নির্বাচনকে ঘিরে ৯৭টি সহিংস ঘটনা ঘটেছে, ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫১৫ জন মানুষ। যাদের মধ্যে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে নির্বাচনকে বাধাহীন করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আচরণ দৃশ্যতই পক্ষপাতদুষ্ট ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক বন্দুকযুদ্ধ, তাদের পরিচয়ে তুলে নেওয়া, হেফাজতে মৃত্যু, নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে। স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষেত্রে সাংবাদিকেরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও অবিরত হুমকির সম্মুখিন হচ্ছেন। অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার অব্যাহত রয়েছে। সীমান্তে বিএসএফ-এর গুলিতে নিহতের সংখ্যা রেড়েই চলেছে, সংখ্যালঘু সহিংসতা শিকার অনেকাংশে বেড়েছে, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার ও গণপিটুনির মত ঘটনায় হতাহতে সংখ্যা বেড়েই চলেছে যা মানবাধিকারের চরম লংঘন। সামগ্রিক বিবেচনায় এমএসএফ মনে করে, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও আইনি পরিবেশ উন্নয়নে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সব ধরনের সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা ও ভীতিকর পরিবেশ বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ত্বরিত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। 

এদিকে দুই মাসের মানবাধিকার লংঘনের তুলনামূলক পরিসংখ্যান তুলে ধরে দেখা হয় যে, দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী মে মাসে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বা বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ঘটেই চলেছে। বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। পুলিশি বলপ্রয়োগের ঘটনা বন্ধ হয়নি বরং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে অনেক ক্ষেত্রে তা বেড়ে চলেছে। প্রাপ্ত তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, ধর্ষণসহ নারী ও শিশুদের উপর সহিংসতার ঘটনা গতমাসের তুলনায় অনেকাংশে বেড়েছে যা উদ্বেগজনক। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে হুমকি ও হামলা তথা সাংবাদিকতা এবং মত প্রকাশের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার মত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু, কারা হেফাজতে মৃত্যু সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংসতার ধারাবাহিকতা রয়ে গেছে, সীমান্তে হতাহতের মতো ঘটনা বন্ধ হয়নি। অপরদিকে অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে, গণপিটুনির মত আইন হাতে তুলে নেয়ার ঘটনাও বন্ধ করা যায়নি বরং বেড়েই চলেছে। মানবাধিকার লংঘনের এই ঘটনাগুলো ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। মানবাধিকার লংঘনকারীদের বিচার ও ভূক্তভোগীদের সুবিচারের দাবি করছে।

শেয়ার করুন