০৩ জুলাই ২০১২, বুধবার, ৬:০১:৫৬ পূর্বাহ্ন


‘খালেদা জিয়া সুস্থ হলে দেশ সুস্থ হবে’
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৬-২০২৪
‘খালেদা জিয়া সুস্থ হলে দেশ সুস্থ হবে’


খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে সরকারকে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা ইসলাম আলমগীর। শনিবার বিকালে নয়া পল্টনে এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই হুশিয়ারি দেন।

তিনি বলেন, ‘‘ আজকে এই দেশ এই আওয়ামী লীগের হাতে, এই বর্বরদের হাতে, এই লুটেরাদের হাতে একটুও নিরাপদ নয়। একদিকে তারা আমাদের ভোটের অধিকার হরণ করে্ছে, অন্যদিকে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যিনি গণতন্ত্রের মা, যিনি গণতন্ত্রের সঙ্গে একাত্মতা তাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে প্রায় বছর আটক করে রাখা হয়েছে।”

‘‘আমরা পরিস্কার বলতে চাই, দেশনেত্রীকে মুক্তি দিন। অন্যায় আপনাদের যেকোনো পরিণতির জন্য তৈরি থাকতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ কখনো দেশনেত্রীকে এভাবে অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দি অবস্থায় চলে যেতে দেবে না… এটা আপনাদের মনে রাখতে হবে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই। এই সরকার থাকা মানে হচ্ছে, আমাদের দেশকে ধবংস হওয়া, গণতন্ত্র ধবংস হওয়া, দেশের মানুষ ধবংস হওয়া।”

‘‘ তাই আজকে দেশনেত্রীকে রক্ষা করতে হলে আমাদের নিজেদেরকে রক্ষা করতে হলে আমাদের সামনের দিকে অবশ্যই আরও তীব্র থেকে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এই আন্দেোলনের মাধ্যমেই এদেরকে পরাজিত করতে হবে।”  

‘দুই আন্দোলনকে একত্রীভূত করতে এগুতে হবে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের গণতন্ত্রের প্রতীক, আমাদের আন্দোলনের প্রতীক। তাকে বাঁচাতে হলে তাকে রক্ষা করতে হবে।একই সঙ্গে আমাদের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে, আমাদের অধিকারকে রক্ষা করতে হলে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

‘‘ একই সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আহ্বান জানাতে চাই, আসুন আজকে আমরা যেমন গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবার জন্য সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি, যুগপৎ আন্দোলন করছি। আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে একইভাবে একত্রীভূত করে সোচ্চার আওয়াজ তুলি।”

যুব সমাজের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘ তরুণ-যুবকদের কাছে আমার আহ্বান থাকবে যে, কেউ আছো জোয়ান, হও আগোয়ান, হাকিছে ভবিষ্যৎ…. তোমাদের হাতে কিন্তু নির্ভর করছে এদেশের ভবিষ্যৎ ,পরিবর্তন একটা গণতান্ত্রিক দেশ সত্যিকার অর্থে জনগনের একটি দেশ যেখানে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।”

‘‘ আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আজকে সুদূরে নির্বাসিত হয়ে আছেন… তাকেও মিথ্যা মামলা ও সাজা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। আমি বলতে চাই, বার বার সময় আসে না, সুযোগ আসে না আজকে সমস্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে আমাদেরকে সেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে এই ভয়াবহ দানব যে আমাদের দেশকে ধবংস করছে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে, স্বাধীনতাকে ধ্বংস করছে তাকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে।”

সকল কারাবন্দি নেতা-কর্মীর ‍মুক্তি, মিথ্যা মামলা ও সাজা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সড়কে বিএনপির উদ্যোগে বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এই সমাবেশ হয়। কাকরাইলের নাইটেঙ্গল রেষ্টুরেন্ট মোড় থেকে ফকিরেরপুল মোড় পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।

নেতা-কর্মীদের হাতে হাকে খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড। কারো কারো হাতে ছিলো জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা।

সকাল থেকে মুশুল ধারায় বৃষ্টি হওয়ার নয়া পল্টনের সড়কে কিছুটা পানি জমলেও দুপুর ১টা পর পানি চলে যায়। ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’, ‘জেলের তালা ভাঙব, খালেদা জিয়াকে আনব’, ‘খালেদা জিয়ার ভয় নাই, আমরা আছি তোমার সাথে’, ‘জ্বালাও জ্বালাও, শেখ হাসিনার গদিতে আগুন জ্বালাও এক সাথে’ ইত্যাদি শ্লোগান দিয়ে নেতা-কর্মীরা মিছিল সহকারে এই সমাবেশ যোগ দেয়। নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ মাথা লাল ফিতা ও লাল-সবুজ ক্যাপ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

বেলা ২টা ৫০ মিনিটে কোরআন তেলোয়াতের মধ্য দিয়ে সমাবেশের কার্য্ক্রম শুরু হয়।

গত ২৩ জুন এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রের ‘পেসমেকার’ বসানোর পর বিএনপির খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন নামার সিদ্ধান্ত নেয়। গত ২৬ জুন বিএনপি মহাসচিব তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন যার প্রথমটি ঢাকার এই সমাবেশ।


‘দেশের স্বার্থ ভারতকে বিলিয়ে দিয়েছে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ ভারতে সাথে চুক্তি করেছে। এই চুক্তিকে দেশবিরোধী বলছে দেশের যে আইন বিশেষজ্ঞ আছে, পানি বিশেষজ্ঞ আছেন তারা বলছেন এটা বাংলাদেশ বিরোধী, বাংলাদেশের স্বার্থের বিরোধী। আমরা পানি চাই, আমরা আমাদের ন্যায্য হিৎসা চাই, আমরা সীমান্তে হত্যা বন্ধ চাই, আমার যেসব সমস্যা আছে তার সমাধান চাই।”

‘‘ তা না করে এই সরকার সব কিছু বিলিয়ে দিয়েছে। শেখ হাসিনা এতো গর্ব করে বলছেন, আপনি তো পানি দিয়েছি তাতে কি হয়েছে। আপনি তো সবসময় দিয়েছে। এর আগের বলেছিলেন, আমি সব উজাড় করে দি্য়েছি। আপনি উজাড় করে দিয়েছেন তাহলে বাংলাদেশ কি পেলো। বাংলাদেশের মানুষ পেয়েছে ঘৃণা, বাংলাদেশের মানুষ পেয়েছে তার অধিকার হরণ করা, বাংলাদেশের মানুষ পেয়েছে তার যে সম্পদগুলো আছে সেগুলোকে লুন্ঠনে করার আরও পথ তৈরি করা।”

‘খালেদা জিয়া সুস্থ হলে দেশ সুস্থ হবে’

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘ একটা ব্যানারে দেখলাম, খালেদা জিয়া সুস্থ হলে দেশ সুস্থ থাকবে। কথাটা ঠিক। বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ, আজকে পুরো জাতি অসুস্থ হয়ে গেছে।চোর-ডাকাত-বাটপার-বদমাইস সবাই মুক্তি পেয়ে যায়, আর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আপনি(প্রধানমন্ত্রী) মুক্তি দিতে চান না।”

‘‘ আমরা পরিস্কার বলতে চাই, দেশনেত্রীকে যেকোনো মূল্যে মুক্তি দিতে হবে। তার মুক্তির স্বার্থে কোনো আপোষ কারো সাথে হবে না, তার মুক্তি ইনশাল্লাহ আমরা করে ছাড়ব। দেশনেত্রীর মুক্তির লক্ষ্যে কর্মসূচি দেয়া হয়েছে...এরপর আরও কর্মসূচি আসবে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা বহুদিন পরে প্রথম বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে মুখ খুলেছি, এই মুক্তির আন্দোলন থামবে না… কোথায় গিয়ে থামবে সেটা আল্লাহই বলতে পারেন।”

তিনি বলেন, ‘‘ চোর ডাকাতে ভরে গেছে দেশ… এটা আমার বক্তব্য না, পত্রিকা খুললেই আজকাল দেখা যায়। আমাদের কিছু কিছু সাংবাদিক ভাইয়ের ইদানিং কিছু সাহস হয়েছে বলে মনে হয়। সব তো পত্রিকায় লিখতে চায় না, চুরি-বাটপারির কথা লিখতে চায় না, চোরদের কথা লিখতে চায় না। কিন্তু কিছু কিছু খবর ফাঁস হয়ে যায় বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে।”

আন্দোলনের আরও জোরদার করতে সমর্থকদেরও মাঠে নিয়ে আসার জন্য্ নেতাকর্মীদের আরও তৎপর হাওয়ার আহ্বান জানান মির্জা আব্বাস।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘ দেশনেত্রী এখনো আমাদের মাঝে মুক্ত নন, এখনো তিনি কারাগারে, আবার তিনি চিকিৎসা পান না যেটা মানুষের মৌলিক অধিকার, তিনি জামিন পান না…খুনের আসামী জামিন পায়, মৃত্যুদন্ডের আসামী জামিন পায়…। সকাল বেলা ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে আজকে এরকম আবহাওয়ার মধ্যেও সবাই এসেছেন আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।

‘‘ তাই বলব, আমরা যখন নামছি একবার চেষ্টা করি। আমরা প্রতিদিন বক্তৃতা দেই না, আবার বক্তৃতা না দিতে পারলে মনটা খারাপ লাগে। আর আমার নেত্রী ৭ বছর যাবত মঞ্চে আসেন না, ৭টি বছর যাবত তার কন্ঠ জনগন শুনতে পায় না। তাই আসেন বক্তৃতা থামান, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে ঘরে ফেরেন। তাহলেই দেশ মুক্ত, গণতন্ত্র মুক্ত, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব মুক্ত।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘ বাংলাদেশে আজকে আইনের শাসন বলে কিছু নাই। যেখানে আইনের শাসন নাই, যেখানে অন্যায় আইন হয়ে যায়, যেখানে মানবাধিকার নাই, যেখানে বিরোধী দলসহ ভিন্নমতকে রুদ্ধ করে রাখে, যেখানে জীবনে নিরাপত্তা নেই, যেখানে জেলখানায় মানুষের মৃত্যু হয়, সেই দেশে শুধু মাত্র প্রতিবাদ করে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটনো যাবে না।”

‘‘যেখানে অন্যায় আইনে পরিণত হয়ে যায় সেখানে প্রতিরোধ কর্তব্য হয়ে পড়ে। আজকে প্রতিরোধ অনিবার্য্। দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হলে প্রতিরোধে নামতে হবে।”

প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পরিচালনায় সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, আসাদুজ্জামান রিপন, কেন্দ্রীয় নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক, ফরহাদ হালিম ডোনার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহিদ্ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাইয়েদুল আলম বাবলু, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শিরিন সুলতানা, সালাউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিনের রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের আমিনুল হক, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, ছাত্র দলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

ঢাকা জেলার খন্দকার আবু আশফাক, নারায়নগঞ্জ জেলার গিয়াস উদ্দিন, মহানগর সাখাওয়াত হোসেন খান, টাঙ্গাইলের ফরহাদ ইকবাল, গাজীপুর মহানগরের শওকত হোসেন সরকারও বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশ উপলক্ষে নয়া পল্টন, কাকরাইল,ফকিরের পুল, বিজয়নগর সড়কের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মোতায়ন থাকতে দেখা গেছে।



শেয়ার করুন