২৯ জুন ২০১২, শনিবার, ০৮:৩৬:৩৫ অপরাহ্ন


দুর্নীতিকাণ্ড বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৬-২০২৪
দুর্নীতিকাণ্ড বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা


প্রাক্তন পুলিশ প্রধান, সেনাপ্রধান, সাবেক ডিএমভি কমিশনার, সরকারি কর্মকর্তা, স্বর্ণ চোরাচালানের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিরোধের পরিণতিতে কলকাতায় সরকারি দলের সাংসদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের দায় না চাইলেও সরকারের ভাব মূর্তি ক্ষুণ করেছে। একই সঙ্গে একজন শীর্ষস্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসছে মিডিয়ায়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ছেলের কোরবানির ঈদে আকাশছোঁয়া মূল্যে ছাগল কেনার ঘটনার সূত্রে মুখরোচক আলোচনাও টক অব দ্য কান্ট্রি। 

এরই মধ্যে প্রাক্তন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলছেন, দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাচার দেশে ডলার সংকটের মূল কারণ। এসব ঘটনা যতই বিচ্ছিন্ন বলে দাবি করুক সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা ১৬ বছর একটানা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা সরকার কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারবে না। এসব ঘটনায় একটা বিষয় এখন উঠে এসেছে আলোচনায় আর সেটা হলো তাহলে কী সরকার প্রধানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঘোষিত জেহাদ কি তাহলে মুখ থুবড়ে পড়েছে? থলের বেড়াল দেরিতে হলেও বেরিয়ে আসছে? যদিও সরকারি দল থেকে এ ব্যাপারে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে যে সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বিধায় এসব ঘটনা বের হয়ে আসছে এবং এগুলোকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছে। 

এদিকে মিডিয়ার আরো খবর পরিবেশিত হচ্ছে যে, অন্তত আগামী দুই বছর অর্থ সংকট থেকে বেরোতে পারবে না সরকার। নানা কৌশল নেওয়া সত্ত্বেও মুদ্রাস্ফীতি কমছে না। সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না সরকার। ভুল পরিকল্পনায় দেশের জ্বালানি আহরণ উপেক্ষা করে আমদানির দিকে ঝুঁকে পড়ায় গভীর অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে জ্বালানি বিদ্যুৎ খাতে। পেট্রোবাংলা এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিপুল দেনার দায়ে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে। জ্বালানি কেনার প্রয়োজনীয় ডলার নেই। বিপুল সাবসিডি দেওয়ার সক্ষমতা সরকারের আছে বলে মনে হয় না। ঈদের ছুটির সময়েও দেশ জুড়ে লোডশেডিং হয়েছে। এটা এখনো কন্টিনিউ বলেই খবর পাওয়া যাচ্ছে। যার অর্থ একটা অনাকাক্সিক্ষত সংকট ঘনিয়ে আসছে।

সরকারপ্রধান চীন সফরের আগে দুইবার ভারত সফর করলেন। বাংলাদেশে ভারত চীনের প্রভাবে ভারসাম্য সৃষ্টির চাপে সরকার প্রধান বোঝাই যাচ্ছে। মায়ানমার সীমান্তসংলগ্ন সেন্টমার্টিন দ্বীপ ঘিরেও সংঘাতপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। জানি না এহেন মুহূর্তেও ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে সরকার কেন দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা করার উদ্যোগ নিচ্ছে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে কারো জন্যই মঙ্গল হবে না। সরকারকে, দেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে কোনো বিদেশি শক্তি এগিয়ে আসবে না। যত বড় বিপর্যয় আসুক দেশপ্রেমিক সব দলই দেশের স্বার্থে এগিয়ে আসবে এটাই বাস্তবতা। 

সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিলে কোনো দেশপ্রেমিক প্রশ্ন তুলবে না। বরং সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতাই করবে। একইভাবে বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার কার্যক্রমে জনগণকে সম্পৃক্ত করলে সবাই সহায়তা দেবে। একইভাবে জ্বালানি-বিদ্যুৎ সংকটের সময় সব পর্যায়ে কৃচ্ছ্রতা সৃষ্টির বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিলে সাড়া মিলবে।

এ কথা বলতেই হবে, আমলা নিয়ন্ত্রিত দুর্নীতি দমন সংস্থা দারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে। অনেক দুর্নীতিবাজকে ‘অল ক্লিন’ তকমা দিয়েছে বিভিন্ন সময়। পেট্রোবাংলার একজন দুর্নীতির সম্রাটের কথা অনেকেই জানেন। সমগ্র গ্যাস সেক্টরকেই একসময় দুর্নীতিগ্রস্ত করেছিল তিনি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাকে না থামালে হয়তো এতোদিন পেট্রোবাংলার শীর্ষপদ দখল করতো। তার দাপটে অনেক সৎ নীতিবান গ্যাস সেক্টর কর্মকর্তার জীবনে নেমেছে সংকট। পেট্রোবাংলা পিছিয়ে পড়েছে জ্বালানি আহরণ এবং উন্নয়ন কাজে। শুনেছি দুর্নীতি দমন কমিশন তাকে অবমুক্তি দিয়েছে সব অভিযোগ থেকে। অবশ্য ধর্মের ঢোল বাজতে শুরু করেছে। সরকার সমাজের সব স্তর থেকে দুর্নীতির শেকড় তুলতে আন্তরিক না হলে অচিরেই বিপদে পড়বে।

আশা করি, সরকারপ্রধানের আন্তরিক চেষ্টার প্রতিফলন ঘটবে সর্বক্ষেত্রে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর গঠিত এবারের সরকারে বেশ কয়েকজন চৌকষ মন্ত্রী রয়েছেন। যাদের সক্রিয় সহযোগিতা থাকলে দেশের অনেক ক্রাইসিস মুহূর্ত সামাল দেওয়া সহজতর হতে পারে। জনগণ ওইসব মন্ত্রীর সক্রিয় কার্যক্রম দেখার প্রতীক্ষায়।

শেয়ার করুন