২৯ জুন ২০১২, শনিবার, ০৭:২০:১৮ অপরাহ্ন


বিএনপিকে ভারতবিরোধী প্রমাণে আ.লীগের তৎপরতার নেপথ্যে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৬-২০২৪
বিএনপিকে ভারতবিরোধী প্রমাণে আ.লীগের তৎপরতার নেপথ্যে


বিএনপিকে হঠাৎ করেই কট্টর ভারতবিরোধী দল হিসাবে তুলে ধরতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের প্রাণান্তকর চেষ্টা রাজনৈতিক মহলে রহস্যের সৃষ্টি করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, বিএনপি’কে কেনো তিনি এভাবে কট্টর ভারতবিরোধী দল হিসাবে পরিচিত করতে চান? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর পেছনে যেমন নানাবিধ কারণ আছে, তেমনি রয়েছে রাজনৈতিক ময়দানে আওয়ামী লীগের একক কর্তৃত্ব ও শাসন বজায় রাখার এক ধরনের প্রাণান্তকর চেষ্টার বার্তা। বুঝিয়ে দেয়া যে আওয়ামী লীগ প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশ ভারতের একমাত্র বিশ্বস্ত ও আস্থাশীল বন্ধু। এবং এর পাশাপাশি জানান দেয়া যে দেশটি তাদের ক্ষমতায় থাকার পেছনে অন্যতম নিয়ামক শক্তি। 

সম্প্রতি কি বললেন ওবায়দুল কাদের?

ভারতের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক করে বিএনপি বাংলাদেশের ক্ষতি করেছে বলে অতি সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বৈরিতা আমরা করতে চাই না। বন্ধুত্বপূর্ণ, ভারসাম্যমূলক ও সম্মানজনক পারস্পরিক কূটনীতি চাই।’ বলেছেন, জিয়া-খালেদা ভারতের সঙ্গে বৈরি সম্পর্ক করে দেশের ক্ষতি করেছেন। তাঁরা পারস্পরিক সম্পর্কে সংশয় ও অবিশ্বাসের দেয়াল সৃষ্টি করেছিলেন। খালেদা জিয়া ভারতের সঙ্গে বৈরিতা করে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রস্তুতি উপলক্ষে আয়োজিত যৌথ সভায় ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। এবারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের এ-ও বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতে চাই। সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ হলে আলোচনার টেবিলে সমস্যার সম্মানজনক সমাধান সম্ভব। ভারতের সঙ্গে কম্প্রিহেনসিভ পার্টনারশিপ করছি বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থেই। জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে কারও সঙ্গে সম্পর্ক করব না।’ আবার বলেছেন, রাজনৈতিক কোনো ইস্যু না পেয়ে বিএনপি ভারত-বিরোধিতা শুরু করেছে। 

আগে কি বলেছেন

নির্বাচন এলেই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি এবং নির্বাচন এলে ভারত বিরোধিতা বিএনপির পুরানো অকৌশল বলে মন্তব্য করেছিলেন ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর নিজ বাসভবনে ব্রিফিংকালে একথা বলেন তিনি। আবার বলেছিলেন আন্দোলন ও নির্বাচনে ব্যর্থরাই ভারতবিরোধী তৎপরতা চালায়। 

বিশ্লেষণ কি বলে

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এধরনের রাজনৈতিক কৌশল এমনতিই নেন না। ধারণা করা হয় যে, বিএনপি অতীতে তাদের অধিক মাত্রায় ভারত বিরোধিতার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধীতাকারী মৌলবাদি সাম্প্রদায়িক সংগঠন জামায়াতে ইসলামী’র সাথে সম্পৃক্ততার কারণে দেশটি (ভারত) অনেক বিরাগভাজন। এছাড়া বিএনপি’র শাসনামলে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ইস্যুতে দেশটি ক্ষুদ্ধ। কিন্তু সম্প্রতি ২০২৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি বেশ শক্ত লবি মেনেজ করে ভারতকে কব্জায় নিতে। সূত্র জানায়, ভারতের সাথে পর্দার আড়ালে বিএনপি’র যোগাযোগ বেশ জমে উঠে। এনিয়ে আওয়ামী লীগে বেশ উৎকন্ঠা দেখা দেয়। রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন মেকানিজম ঠেকাতে আওয়ামী লীগ বেশ তৎপর হয়। এজন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’কে তুলে ধরেছে একটি প্রধান কট্টর ভারত বিরোধী দল। প্রমাণের চেষ্টায় থাকে বিএনপি ভারত বিরোধী কট্টর দল। আর সে-ই দলটি ক্ষমতা এলে বা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যতম বিরোধী দল হলেও দেশটির (ভারত) জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনবে। ভারতকে আওয়ামী লীগ জানান দিয়ে যায় যে তারা বিএনপি’কে নিয়ে যেনো কোনো ধরনের রাজনৈতিক দেন-দরবারের না যায়। নির্বাচনের আগে এজন্য আওয়ামী লীগ এব্যাপারে সব্বোর্চ সতর্কতা অবলম্বন করে মাঠ গরম করে রাখে যে বিএনপি’কে কট্টার ভারত বিরোধী দল। আর অন্যদিকে এটাও করে এই ভেবে যে ভারত যেনো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে বেশি চাপে না রেখে বাড়তি কিছু আদায় করে নেয়। কেননা এবার একটি বিষয় দেখা গেছে যে, খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবর ভারতীয় বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করেছে। আবার দেখা গেছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন নিয়ে ভারতের একজন শীর্ষ নেতা ভাইরাল বক্তব্য দিয়েছেন। পাকিস্তানের প্রভাবশালী ইংরেজি পত্রিকা ডন জানায়, ভারতের পাঞ্জাবে নির্বাচনী প্রচারণার ভাষণে কেজরিওয়াল বলেছেন, রাশিয়ার পুতিন, বাংলাদেশের শেখ হাসিনা ও পাকিস্তানের মতো নির্বাচন করে নরেন্দ্র মোদি ভারতের ক্ষমতায় থাকতে চান। এবিষয়গুলি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে বেমানান লেগেছে। আর এসব ঠেকাতে বিএনপি’কে কট্টর ভারত বিরোধী প্রমান করে দলটিকে কেনো কোনঠাসা করে রাখা হয়েছে তার জায়েজ করে নেয়া। 

শেষ কথা ও আসলে কার লাভ হচ্ছে?

বিএনপি’কে একটি কট্টর ভারতবিরোধী হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে ওবায়দুল কাদের এই কাজটি করতে দেখা যায়। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে যেমন এই কাজটি করেছেন তেমনি ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগে ও পরে একিই কায়দা অনুসরণ করেছেন, ভারতের চাপ কম থাকে। সাধারণত বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এই কাজটি সুচারুভাবে করেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে বিএনপি’কে এভাবে কট্টর ভারত বিরোধী দল হিসাবে তুলে ধরতে গিয়ে এধরনের বক্তব্য তার দলের ইমেজ কোথায় গিয়ে ঠেকছে তা সময় বলে দেবে। কারণ তার ও আওয়ামী লীগের এধরনের প্রয়াস ও বক্তব্য প্রক্ষান্তরে আওয়ামী লীগকে একটি বাংলাদেশের জনসমর্থনহীন দলের কাতারে ফেলে দিচ্ছে, যেমনটা বিএনপি’র বেলায় হয়েছে। কেননা অতিমাত্রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে বিএনপি এখন চরম সঙ্কটে পড়েছে। অন্যদিকে যে কাজটি ওবায়দুল কাদের সুচারুভাবে করে যাচ্ছেন তার বিপরীতে বিএনপি কোনোভাবে ব্যাটিং করতে পারছে না। এতে করে এবং এর পাশাপাশি দিনের পর দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধীতাকারী মৌলবাদি সাম্প্রদায়িক সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর পরামর্শ বা গভীর সম্পর্কের কারণে নিরবতাও রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আর একারণে সম্ভবত পুনর্গঠিত হওয়ার পর বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির প্রথম ভার্চুয়ালি বৈঠকে ক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি প্রতিবেশী চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন নেতারা। এছাড়া সাংগঠনিক পুনর্গঠন ও রাজপথের কর্মসূচির পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশের সাথে গভীর কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নেও জোর দিতে এবার দেখা গেছে। সামনের দিনে দেখা যায় এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ভারত বিরোধীতা ইস্যুত কে কেমন ব্যাটিং করে।

শেয়ার করুন