২৯ জুন ২০১২, শনিবার, ০৭:১০:৫৭ অপরাহ্ন


বিএনপিতে আচমকা রদবদল নিয়ে নানা গুঞ্জন
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৬-২০২৪
বিএনপিতে আচমকা রদবদল নিয়ে নানা গুঞ্জন


দল পুনর্গঠনের আওয়াজ তুলে বিএনপিতে আচমকা রদবদল নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, কোনো ধরনের খোঁজ-খবর না নিয়ে দোষ চাপানো হচ্ছে মাঠের ত্যাগি নেতাকর্মীদের ওপর। কারো কারো মতে, দলের হাই-কমান্ডের ভুল পরিকল্পনা ও সরকার বিরোধী আন্দোলনে অধিক মাত্রায় বিদেশী নির্ভরতার পাশাপাশি ভূ-রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে ব্যর্থতার দায়ভার কাধে না নিয়ে এভাবে আচমকা সংস্কারে নেমেছে। ইমো-হোয়াটস অ্যাপে’র পাশাপাশি ড্রয়িং রুমে বসে মাঠের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ণ না করে রাতের আধারে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে এ-কমিটি। কারো কারো অভিমত, এমন আচমকা অপরিকল্পিতভাবে কমিটি গঠন ও সস্কারের ফলে বড় আন্দোলন দূরে থাক- ভবিষ্যতে দলকে নিয়ন্ত্রণে রাখাই কঠিন হবে বলে মনে করেন। তাদের মতে, এতে করে দলের ভেতরে চাপা হতাশা বাড়বে, অন্যদিকে রাগে ক্ষোভে সাংগঠনিক কর্মকান্ড থেকেই দূরে সরে যাবে অনেকে। 

অপরিকল্পিত পদক্ষেপ

সম্প্রতি চিরকুটের পাশাপাশি রাতের আধারে গণম্যাধমে প্রেস রিলিজ ইস্যু করে বিএনপি’র কমিটি গঠনের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হয় দেশ প্রতিনিধির। জানা গেছে, যারা বঞ্চিত এমনকি যারা কমিটিতে স্থান পেয়েছেন তারাও এমন আচমকা থোষণাকে স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। তারা মনে করে ঈদের আগে দলের নেতাকর্মীরা যখন ব্যস্ত একটু মুক্ত পরিসর পেয়েছে তখন আচমকা সংস্কারে তারা হোঁচট খেয়েছে। একজন বিএনপি’র নেতা বলেন, ঈদের আরো পরে এধরনের সংস্কারের আগে আরেকটু রাজনৈতিক পরিস্থিতির মাঠ দেখে এবং সবার মতামত নিয়ে হাই কমান্ড পদক্ষেপ নিতে পারাতো। তিনি বলেন, এমন কিছু হয়ে যায়নি যে কালই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। তার মতে, আসলে অপরিকল্পিভাবেভাবে দলকে পরিচালনার সর্বশেষ পদক্ষেপ হচ্ছে এমন আচমকা পদক্ষেপ। ধারণা করা হচ্ছে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে গোজামিল রির্পোট দিয়ে দীর্ঘ পনের বছর ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে পরিক্ষিত খাঁটি বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাই কমান্ডকে বিভ্রান্ত করে এধরনের কমিটি গঠনে উৎসাহিত করা হয়েছে। কারো কারো মতে, জামায়াত-শিবির নির্ভর বিএনপি করা হচ্ছে। আবার যেসব কমিটি করা হয়েছে সেগুলোতে অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপস্থিতিও কম লক্ষ্য করা গেছে। এমনকি নতুন ঘোষিত ছাত্রদলের কমিটিতে হাতে গোনা কয়েকজন নারীকে স্থান দেয়া হয়েছে। অথচ বিএনপি’র বিভিন্ন কর্মসূচিতে মাঠ দাপিয়ে বেড়ায় নারী কর্মীরা। অন্যদিকে ৯০’র গণঅভুথ্যানে ভূমিকা রেখে যে সংগঠনটি একটি অসাম্প্রদায়িক ছাত্র সংগঠনের পরিচিতি লাভ করেছে সেই ছাত্রদলের নতুন কমিটিতেও অন্য সম্প্রদায়ের হাতে গোনা কয়েকজনকে স্থান দেয়া হয়েছে। ছাত্রদলের কমিটিতে নেই নারীদের দৃঢ় অবস্থান এর পাশাপাশি অন্য ধর্মের কর্মীদের ভালো পদে রাখা হয়নি। 

ব্যর্থতার দায়ভার কেনো মাঠ পর্যায়ের?

কারো কারো মতে, এমন আচমকা কমিটি করা হয়েছে দল পুনর্গঠনের জন্য। কেউ কেউ বলছেন বা বিশেষায়িত করেছেন বিএনপি’তে একটি শুদ্ধি অভিযান হিসাবে। কিন্তু দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাদের প্রশ্ন হচ্ছে শুদ্ধি অভিযানে কেনো তৃণমূল বা মাঝারি গোছের নেতারা টার্গেট হবে? কেনো হাইকমান্ড দায় দায়িত্ব নিচ্ছে না? কেনো ২০২৩ সালে সরকার বিরোধী আন্দোলনকে তুঙ্গে নেয়া হয় চটকদার বক্তব্য দিয়ে। কেনো এমন পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল যে, পশ্চিমারা বিএনপি’কে এইবার ক্ষমতায় বসিয়েই ছাড়বে? কেনো তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায়ে ধারণা দেয়া হয় পশ্চিমাদের পাশাপাশি প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশকে বিএনপি ম্যানেজ করে ফেলেছে? কেনো আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন একেবারে হাই কমান্ড থেকে উঁচু স্বরে বারবার বলা হয়েছিলো যে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পতন এখন সময়ের ব্যপার? প্রশ্ন উঠেছে কেনো দলের হাই কমান্ড বুঝেনি ভূ-রাজনৈতিক কৌশল? এর পাশাপাশি শুধু পশ্চিমাদের আশায় এত্তোবড়ো ঝুঁকি নেয়া হলো কেনো? কার পরামর্শ বা গ্যারান্টি ছিল এতে? মাঠ পর্যায়ের নেতাদের অভিযোগ এধররের বক্তৃতা-বিবৃতিতে উৎসাহিত হয়েছে বিএনপি’র অনেক সাধারণ সমর্থকও। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সহিংসতার পর থেকে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপি’র হাজার হাজার নেতা–কর্মীর পাশাপাশি অনেক সাধারণ সমর্থকও গ্রেপ্তার করা হয়, ঠুকে দেয়া হয় কঠোর মামলা। নির্বাচনের পর তাঁদের বেশির ভাগই জামিনে মুক্তি পেলে আবারও অনেকে হাজিরা দিতে গিয়ে জেলে চলে যাচ্ছে। তাদের মতে, যানবাহনে অগ্নিসংযোগসহ সহিংসতার অজুহাতে অনেক মামলায় বিচার প্রক্রিয়াও তাদের বেকায়দায় ফেলা হচ্ছে, এমন সময়ে হাইকমান্ড দূরে কোনো পর্যায় থেকেই কোনো ধরনের সহায়তা মিলছে না। সেক্ষেত্রে তাদের পাশে না দাঁড়িয়ে আচমকা সংস্কারের নামে কমিটি পুনর্গঠন দলে বিভেদ সৃষ্টি করবে বলে কারো কারো অভিমত। 

কার স্বার্থ উদ্ধার হবে?

মাঠ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতাদের সাথে কথা বলে তাদের মনে একটি কঠিন প্রশ্ন উঁকিঝুকি দিচ্ছে বলে জানা গেছে। এখন একটি বড় জিজ্ঞাসা চলে এসেছে সামনে এই বলে যে, দল পুনর্গঠনের আওয়াজ তুলে বিএনপিতে আচমকা রদবদলে কারা লাভবান হবে? তারা মনে করে, দল পুনর্গঠনের আওয়াজ তুলে বিএনপিতে আচমকা রদবদলে স্পষ্ট হয়ে উঠছে বিএনপি’তে এখন চরম অস্থিরতা। একজন আওয়ামী লীগ নেতা এসব বিষয়ে নিয়ে আলাপকালে তার মন্তব্য ছিল বিএনপি’র রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন ভিন্ন প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা-টক-শো’র ব্যবস্থার সুযোগ করে দিল। তার মতে, জাতীয় নির্বাচন থেকে নিয়ে উপজেলা নির্বাচন ছাড়াও দেশে ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে যখন সবদিক থেকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে, ঠিক তখন বিএনপি হয়ে আছে দুর্বল, বির্তকিত। বিএনপি রাজনৈতিক বার্তা দিচ্ছে তারা কোমড় সোজার করার পাশাপাশি দল পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে? এমন আওয়াজ- তো দিবে হাইকমান্ড তাদের আচমকা রদবদলের নেপথ্যে? এই বার্তাই তো দিবে রাজনৈতিক মাঠে যে বিএনপি’র এখন মাঝা-ভাঙ্গা! তাহলে এমন বার্তায় লাভবান কে? রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন প্রশ্ন কৌতুহল আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশাপাশি সব মহলেই।

শেয়ার করুন