০১ জুলাই ২০১২, সোমবার, ১০:৫০:২৬ অপরাহ্ন


মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশের ক্ষতি নিরূপণে বাজেটে বরাদ্দ নেই
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৬-২০২৪
মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশের ক্ষতি নিরূপণে বাজেটে বরাদ্দ নেই সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন কাজী খলীকুজ্জমান


জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলা করার জন্য বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে একশ বছর মেয়াদী বদ্বীপ পরিকল্পনা। কিন্তু সেখানে উল্লিখিত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে হলে যে বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন, বাৎসরিক বাজেটে তার কোনো প্রতিফলন নেই। তারা বলেন, মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে পরিবেশের যে ক্ষতি হয়, তা নিরূপণ ও সংশোধনের জন্য কোনো বাজেট বরাদ্দ নেই।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, সেগুনবাগিচা, ঢাকায় ইক্যুইটিবিডি, অ্যাওসেড, কোস্ট ফাউন্ডেশন, ক্লিন ও সিএসআরএল আয়োজিত স্বনির্ভর জলবায়ু অর্থায়ন বিষয়ক সেমিনারে বিশেষজ্ঞ বক্তারা এ কথা বলেন। ইক্যুইটিবিডির চিফ মডারেটর রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় পরিচালিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারি পরিচালক আবুল হাসান। বক্তব্য রাখেন ওয়াটার কিপারস বাংলাদেশের শরীফ জামিল, ক্লিনের হাসান মেহেদী, সিএসআরএলের জিয়াউল হক মুক্তা, বিএনএনআরসির এএইচএম বজলুর রহমান, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের আমিনুর রসুল, অনলাইন নলেজ সেন্টারের প্রদীপ কুমার রায় প্রমুখ।

কোস্ট ফাউন্ডশেনের প্রকল্প প্রধান আবুল হাসান জলবায়ু অর্থায়নে তিনটি দাবি তুলে ধরেন, এতে বলা হয় বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিদেশি ঋণ নির্ভরতা কমিয়ে নীতি-পরিকল্পনা অনুসারে জাতীয় বাজেটে জিডিপির কমপক্ষে ০৩ শতাংশ জলবায়ু অর্থায়ন বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। বাস্তচ্যুতি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জাতীয় কৌশলপত্র বাস্তবায়নে জলবায়ু অর্থায়ন বিষয়ক রাজস্ব কর্মকাঠমোতে যুক্ত করে অগ্রাধিকারভিত্তিক বরাদ্দ দিতে হবে। উপকূলীয় সুরক্ষায় বাঁধ নির্মাণের জন্য গতানুগতিক বরাদ্দের বাইরে আলাদাভাবে স্থানীয় প্রয়োজনভিত্তিক পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। খুলনা অঞ্চলে কর্মরত সংস্থা ক্লিনের হাসান মেহেদী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় জাতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে আমাদের অন্তত ১০% নবায়ণযোগ্য জ্বালানি ব্যবস্থা থাকার কথা। সেখানে আমাদের এখন পর্যন্ত অর্জন মাত্র ৩%। পরিকল্পনার সাথে বাস্তবায়নে বড় ধরনের ফারাক রয়েছে।

ওয়াটার কিপারস বাংলাদেশের শরীফ জামিল বলেন, আমাদের অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের বাজেট বরাদ্দ থাকে। কিন্তু সেসব মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে পরিবেশের যে ক্ষতি হয়, তা নিরূপণ ও সংশোধনের জন্য কোনো বাজেট বরাদ্দ নেই। চট্টগ্রাম শহরে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে অনেক খাল বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতি বছর বর্ষায় শহর তলিয়ে যাচ্ছে।

সিএসআরএলের জিয়াউল হক মুক্তা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় আমাদের জাতীয় পরিকল্পনা ও খাতওয়ারি বরাদ্দ আছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে, এ বিষয়ে আমাদের কোনো আঞ্চলিক পরিকল্পনা নেই। যদিও, একেক অঞ্চলে এই অভিঘাত একেক রকম এবং জাতীয় পরিকল্পনা দিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই তা মোকাবেলা করা সম্ভব নয়।

সভাপতি হিসেবে সমাপনী বক্তব্যে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে আমাদের অনেক ভালো উদ্যোগের নজির আছে। যেমন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার নদী দখলদারের নাম প্রকাশ করেছিল। কিন্তু কমিশনের হাতে ক্ষমতা না থাকায় তাদের একজনকেও কোনোপ্রকার সাজা দেয়া বা জরিমানা করার উদাহরণ নেই।

সেমিনারের সঞ্চালক কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও ইক্যুইটিবিডির চিফ মডারেটর রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, উপকূলের মানুষের সুরক্ষায় বেড়িবাঁধ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে যুক্ত করা উচিত। আমরা ভোলার চরফ্যাশনে এই মডেলে বেড়িবাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে সাফল্য দেখেছি।

শেয়ার করুন