বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি, সাংবাদিক সমাজের প্রিয় মুখ রুহুল আমিন গাজী আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাত ৯টায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন।
বেশ কিছুদিন থেকে তিনি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। এর মধ্যে তাকে ব্যাংককে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলেও তার অবস্থার অবণতির জন্য আর সে পদক্ষেপ নেয়া সম্ভবপর হয়নি।
পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, রুহুল আমিন গাজী কিডনি সংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত ছিলেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে দীর্ঘ কারাবাসে তৈরি হয় তাঁর শারীরিক নানা জটিলতা। ব্যাক পেইন, উচ্চ ডায়াবেটিস, লবণ ঘাটতি (ইলেক্ট্রলাইট) সমস্যাসহ নানা রোগে ভুগছিলেন।
তিনি স্ত্রী, ২ মেয়ে, ১ ছেলে ও সহকর্মীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহি রেখে গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বাদ জোহর জাতীয় প্রেসক্লাবে নামাজে জানাজা শেষে শাহজাহানপুর কবর স্থানে তাঁকে দাফন করার কথা রয়েছে।
রুহুল আমিন গাজী চাঁদপুর সদরের গোবিন্দিয়ায় এক সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মৌলভী কফিল উদ্দিন এবং মা আয়েশা খাতুন। সাংবাদিকদের র্শীষ সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) চতুর্থবারের মতো সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি বিএফইউজের মহাসচিব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সাংবাদিক সমাজের দাবি আদায়ে এই বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ওয়েজ বোর্ড গঠন ও বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি আমৃত্যু দৈনিক সংগ্রাম-এর চীফ রিপোর্টার ছিলেন। সাংবাদিক সমাজের অধিকার আদায়ের নিরন্তর সংগ্রামে সম্পৃক্ত এই প্রবীণ সাংবাদিক বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের রোষাণলে পড়ে ১৭ মাসেরও বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন।
রুহুল আমির গাজীর মৃত্যুতে জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি কবি হাসান হাফিজ ও সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, ডিইউজে সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ ও সাধারণ সম্পাদক মহি উদ্দিন গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তারা পৃথক বার্তায় মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তারেক রহমানের শোক
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার ভেরিফাইড ফেসবুকে লিখেন-
‘বিএফইউজে’র সভাপতি ও সিনিয়র সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী আজ রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)।
মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী’র বলিষ্ঠ ও সাহসী ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। স্বাধীন সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী মরহুম রুহুল আমিন গাজী বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মহান ব্রতকে সামনে রেখে যেভাবে নিরলস কাজ করেছেন, সেটি তাঁর সতীর্থ সাংবাদিকরা চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে অনুসরণ করবেন বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। জেল-জুলুম সহ্য করেও মানুষের বাক-ব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে তাঁর সাহসী উচ্চারণ দেশের মানুষের নিকট প্রশংসিত হয়েছিল। বারবার রাজরোষে পড়া সত্ত্বেও রুহুল আমিন গাজী সর্বদায় গণতন্ত্রের পক্ষে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে দ্বিধা করেননি। কর্মজীবনে অগণতান্ত্রিক শক্তির হুমকির মুখেও তিনি দায়িত্ব পালনে ছিলেন অবিচল। সাংবাদিকতা জগতে তাঁর অবদান নিঃসন্দেহে অনস্বীকার্য। তাঁর মৃত্যু গণতন্ত্রকামী মানুষের হৃদয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করলো। তাঁর শূন্যতা সহজে পূরণ হবার নয়। পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করি তিনি যেন তাঁকে বেহেস্তবাসী করেন।’