প্রবাসের অন্যতম আঞ্চলিক সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন। এ সংগঠন বৃহত্তর সিলেটের একমাত্র আমব্রেলা সংগঠন হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু জালালাবাদ ভবন ক্রয়কে কেন্দ্র করে ঐতিহ্যের এ সংগঠন দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। মূলত কিছু মুরব্বি টাইপ মোড়লের কারণে এ বিভক্তি। ইগোর কারণে এ অচলাবস্থা। সবাই যেন গিরিঙ্গিতে ব্যস্ত, কেউই সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে অচলাবস্থা নিরসনে এগিয়ে আসেন না। দুই গ্রুপের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে ফায়দা লোটার চেষ্টায় তারা ব্যস্ত। মামলাও হয়েছে। তা আদালতে বিচারাধীন। এখন দুটি কমিটি। একটি কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন বদরুল-রোকন। আরেক গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন মইনুল-আসাদ। সেই মইনুল-আসাদ গ্রুপের নবনির্বাচিত কমিটির বর্ণিল অভিষেক অনুষ্ঠিত হয়েছে। হলভর্তি অডিটোরিয়ামে শত শত মানুষের কলতালির মধ্যে নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যরা শপথবাক্য পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে নবনির্বাচিত কার্যকরি কমিটির সদস্যরা জালালাবাদ ভবনকে পেইডআপ করার প্রতিশ্রুত ব্যক্ত করেন।
গত ২২ সেপ্টেম্বও রোববার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের কুইন্স প্যালেসে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনকের কাযর্করি কমিটি ২০২৪-২০২৭-এর অভিষেক অনুষ্ঠান ও জালালাবাদবাসীর মিলনমেলা সম্পন্ন হয়। এ অনুষ্ঠানটি ছিল মূলত তিন পর্বে বিভক্ত। প্রথম পর্বে ছিল নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক, দ্বিতীয় পর্বে ছিল আলোচনা সভা এবং শেষ পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
প্রথম পর্বে সংগঠনের বিদায়ী সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহীন কামালীর সভাপতিত্বে ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলামের সঞ্চালনায় শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাওলানা কাজি কাইয়্যুম। বাংলাদেশ এবং আমেরিকার জাতীয় সংগীতের পর শহিদদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর পরই দেশ এবং প্রবাসের সবার সুখ, সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি মাওলানা সাইফুল আলম সিদ্দিকী। প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মেদ আব্দুল কাইয়্যুম অসুস্থ থাকায় নির্বাচন কমিশনার ও সাবেক সভাপতি সৈয়দ শওকত আলী নবনির্বাচিত সভাপতি মইনুল ইসলামকে শপথ পাঠ করান। শপথ নেওয়া সভাপতি মইনুল ইসলাম কার্যকরি কমিটির সবাইকে শপথবাক্য পাঠ করান। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুর রহমান মুক্তা (সিলেট), ইঞ্জিনিয়ার ফজলুর রহমান (হবিগঞ্জ) এবং সৈয়দ জুবায়ের আলী (মৌলভীবাজার)।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট আইন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট মহসিন আহমদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট শিল্পপতি জহিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়া, বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম এ আজিজ, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাসিব মামুন, নির্বাচন কমিশনার বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান সাবু এবং কমিশনার প্রফেসর আমিনুল হক চুন্নু, উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজ ও প্রধান সমন্বয়কারী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বেলাল চৌধুরী।
অধিবেশনের ২য় পর্বে সভাপতিত্ব করেন নবনির্বাচিত সভাপতি মইনুল ইসলাম এবং পরিচালনা করেন নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আতাউল গণি আসাদ। দ্বিতীয় পর্বে কমিউনিটির গণ্যমান্য ব্যক্তির মধ্যে বক্তব্য রাখেন-জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, হুমায়ুন চৌধুরী, দরুদ মিয়া রোনেল, ইফজাল চৌধুরী, জাকারিয়া চৌধুরী (পেনসিলভানিয়া), মাশুক খান (পেনসিলভানিয়া), মোহাম্মদ মহসিন (নিউ জার্সি), আনোয়ার চৌধুরী পারেখ (নিউ জার্সি), মুজিবুর রহমান মুজিব (পেনসিলভানিয়া), ফজলুর রহমান, মনসুর চৌধুরী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এ এফ মিসবাউজ্জামান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আকিব হোসাইন, বাংলাদেশ সোসাইটির আসন্ন নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী রুহুল আমিন সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জাহিদ মিন্টু প্রমুখ। নতুন কমিটির কোষাধ্যক্ষ মইনুজ্জামান চৌধুরী ও মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজসহ বক্তারা জালালাবাদ ভবনের পক্ষে তাদের সুদৃঢ় অবস্থান তুলে ধরেন এবং দীর্ঘ ৩৮ বছরের প্রত্যাশাকে প্রাপ্তিতে রূপান্তরের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আগামী দিনের সংগঠনকে পরিচালনা করার জন্য সবার অব্যাহত সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে জালালাবাদবাসী মহিলাদের সরব উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটির গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। এছাড়াও বিপুলসংখ্যক জালালাবাদবাসী পেনসিলভানিয়া, কানেকটিকাট, নিউ জার্সি, ও নিউইয়র্কের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অংশগ্রহণ করেন।
তৃতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ধামাইল নৃত্য পরিবেশিত হয় শুরুতে। মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সবাই উপভোগ করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সংগঠনের সাবেক মহিলা সম্পাদিকা সুতিপা চৌধুরী শম্পা।
সবার শেষে সভাপতি মইনুল ইসলাম সবাইকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অনুষ্ঠান সমাপ্তি ঘোষণা করেন।