পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের আমলে গঠিত ইউনিয়ন পরিষদ বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। দলটির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারনী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় গৃহীত এক সিদ্ধান্তে এ দাবি জানানো হয়।
জানা গেছে সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান।
ইউনিয়ন পরিষদ বাতিলের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে গৃহীত সিদ্ধান্তে বলা হয়, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলে প্রহসনের মাধ্যমে গঠিত ইউনিয়ন পরিষদ বহাল রেখে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। কারণ, প্রহসনের মাধ্যমে গঠিত বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ পতিত সরকারের হাতিয়ার হিসাবে অতীতে ব্যবহৃত হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হতে পারে।
এই সভায় গৃহীত অপর এক সিদ্ধান্তে পার্বত্য জেলাগুলোতে উদ্ভূত সংঘাতের ঘটনাগুলোতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
সভায় বলা হয়, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার সুদূর প্রসারী চক্রান্তের অংশ হিসাবে এই ধরনের সংঘাতের সৃষ্টি করা হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ রূপে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এই ঘটনা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি স্বরূপ। এসব ঘটনাকে কোনোভাবেই হালকা করে দেখার সুযোগ নেই উল্লেখ করে সভায় বলা হয়, পার্বত্য জেলাগুলোতে শান্তি স্থাপনের জন্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল, পার্বত্য জেলায় সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের একটি জাতীয় কনভেনশন আহ্বান করা জরুরী। সভায় এ লক্ষে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এছাড়াও বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় গৃহীত অপর এক সিদ্ধান্তে সম্প্রতি ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের উল্টো করে ঝুলিয়ে সোজা করা হবে’- বলে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যে হুমকি দিয়েছেন তার তীব্র নিন্দা করা হয়। একইসাথে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার অন্তরায় হিসাবে কাজ না করার জন্য ভারতীয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও নেতৃবৃন্দকে এই ধরনের মন্তব্য থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই ধরনের মন্তব্যে কঠোর সমালোচনা এবং বিরত থাকার আহ্বান জানানোয় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়।
স্থায়ী কমিটির সভায় সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যরিষ্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ^র চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম ও অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত ওই সভায় আলোচ্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে মোট ৬টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সভায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে দলের মহাসচিব সভাকে অবহিত করেন।
এছাড়াও, সভায় গৃহীত আরেকটি সিদ্ধান্তে বলা হয়, পতিত ফ্যাসিবাদ ক্ষমতায় ফিরে আসার জন্য পরিকল্পিতভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাজারে হামলা, ভাংচুর ও ‘মবলিংচিং’ এর মত ঘটনা ঘটিয়ে শিল্পাঞ্চল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
সভা মনে করে, এ বিষয়ে সরকারের উদ্যোগে সকল গণ-মাধ্যমে জন সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং সকল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচার প্রচারণা বাড়ানো প্রয়োজন। সমাজ বিরোধী এবং ঐক্য বিনাশী কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা জরুরী বলেও গৃহীত সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়।
সভা শেষে সভাপতি সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভা মুলতবী করেন।