সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ
করোনা মহামারীর কারণে মুসলিম উম্মাহ নর্থ আমেরিকার কনভেনশন তিন বছর বন্ধ ছিলো। মানবতার কথা বিবেচনা করেই এই কনভেনশন বন্ধ রাখা হয়। যদিও মুনার মানবতাবাদী সেবাগুলো অব্যাহত ছিলো। ২০১০ সালে মুনার এই কনভেনশন শুরু হয়েছিলো জ্যামাইকার ইয়র্ক কলেজ থেকে। আস্তে আস্তে তা বৃহৎ বিশাল আকার ধারণ করে। যে কারণে কনভেনশনটির স্থান বেঁচে নেয়া হয় পেনসিলভানিয়ার কনভেনশন সেন্টারে। মূলত হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে মুনা কনভেনশনে দ্বীনে ইসলামের কথা প্রচার করা হয়। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন নিয়ে আলোচনা করা হয়। বিশ্বের সেরা সেরা স্কলাররা এই সব আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এবারের কনভেনশনের নতুনত্ব হচ্ছে ইয়ুথ গ্রুপ অর্থাৎ নতুন প্রজন্ম। তাদের জন্য আলাদা আলাদা (তরুণ-তরুণী) অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এবারো তিন দিনব্যাপী মুনার কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে পেনসিলভানিয়ার কনভেনশন সেন্টারে। এই কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৮, ১৯ ও ২০ আগস্ট। এবারের টার্গেট ২০ হাজার মানুষের। গত ৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি হলে এক সংবাদ সম্মেলনে মুনার কর্মকর্তারা এই সব তথ্য জানান।
মুনার ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট হারুণ অর রশীদের সভাপতিত্বে এবং মুনার মজলিশ এ শুরার মেম্বার আব্দুল্লাহ আল আরিফের পরিচালায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুনার ন্যাশনাল এক্সজিকিউটিভ ডিরেক্টর আরমান চৌধুরী। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন মুনার মজলিশ এ শুরার মেম্বার এম এম মাওলা সুজন।
লিখিত বক্তব্যে আরমান চৌধুরী বলেন, সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতেই শোক জ্ঞাপন করছি বিগত দিনগুলোতে করোনা মহামারীতে যারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের প্রতি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করি যেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বিশ্ববাসীকে এই মহামারীর হাত থেকে মুক্তি দান করেন। তিনি বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে মুনা ৩ বছর বিরতির পর আগামী ১৮ ১৯ এবং ২০ আগস্ট ২০২৩ ফিলাডেলফিয়ার অবস্থিত পেনসিলভানিয়া কনভেনশন সেন্টারে বিশাল কনভেনশন আয়োজন করতে যাচ্ছে। এই কনভেনশন মুসলিম জীবনে বিশেষ করে বাংলাদেশি আমেরিকান পরিবারের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। মুনা আমেরিকার একটি দাওয়াতি ও সামাজিক সংগঠন। মানুষের ব্যক্তিগত নৈতিক ও সামাজিক মানোন্নয়নর জন্য সার্বিক প্রচেষ্টা চালানোর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে প্রতিষ্ঠিত হয়। মুনা। এই সংগঠনটি ১৯৯০ সালে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে করপোরেশনভুক্ত করা হয়। বর্তমানে মুনা আমেরিকার ৪০ এর অধিক রাজ্যে কর্মতৎপরতা পরিচালনা করছে। মুসলমানদের প্রাত্যহিক সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মকা- এবং জাতীয় নাগরিক জীবনে ভূমিকা পালনের নিমিত্তে সংগঠিত করতে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে করে এই সমস্ত ব্যক্তিরা আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণের মাধ্যমে মানবতার সেবা করে যেতে পারে।
তিনি বলেন, আপনাদের এবং কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের সার্বিক সহযোগিতায় সর্বোপরি মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে, বিগত বছরগুলোতে যাবৎ বিশাল আকারের মুনা কনভেনশন বাস্তবায়ন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। তিনদিনব্যাপী ওই কনভেনশন বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ আমেরিকান আমেরিকান মুসলিম কমিউনিটির মাঝে ব্যক্তি এবং সমাজ গঠনে প্রশংসনীয় উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। আমরা মুনা ন্যাশনাল সংগঠনের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে এবং আপনাদের মাধ্যমে গোটা বাংলাদেশি কমিউনিটিকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। এবারের কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয় এবং থিম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘আল-কোরআন গাইডেন্স ফর হিউম্যানিটি’ আল-কোরআন পথনির্দেশ করে গোটা মানবজাতিকে। কল্যাণকর ও নির্ভুল পথ পরিদর্শন করে পথভ্রান্ত দিকহারা মানবতাকে। ব্যক্তিজীবন থেকে রাষ্ট্রীয় জীবন, মানব দেহের অভ্যন্তরে লুকায়িত অন্তর বিন্দু থেকে সৃষ্টি লোকের বিশাল বিস্তৃত মানব সম্পর্কিত প্রতিটি স্তরে বিশ্ববাসীর কল্যাণে এক নির্ভুল গাইড হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে এই গ্রন্থ। এটা বিজ্ঞানময় এটা অলৌকিক পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি। এটা একজন বিশ্বাসী মানুষের বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ব্যক্তি পরিবার এবং সমাজ পরিবর্তনের একমাত্র শাশ্বত চ্যালেঞ্জিং বিধান। এটি শুধু মুসলিম তথা ইসলামে বিশ্বাসীদের জন্য নয় এটা গোটা মানব গোষ্ঠীর উন্নতি ও অগ্রগতির সোপান। এই মহাগ্রন্থের কল্যাণকর পতাকা প্রতিটি হৃদয়ে, প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছে যাক মুনা এই বিশ্বাস ধারণ করেই এবারের কনভেনশনে মূল কেন্দ্রীয় প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করেছে। এই কাজে আপনাদের এবং আপনাদের মাধ্যমে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন, মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকা (মুনা) একটি ফেইথ বেজড দাওয়াতি ও সামাজিক সংগঠন। একটি দাওয়াতি সংগঠন হিসেবে মুনা মুসলমানদেরকে আহ্বান করে তাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ইসলাম পালনের এবং অমুসলিমদের কাছে ইসলামের সঠিক শিক্ষা তুলে ধরতে। একটি অলাভজনক সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে মুনা আমেরিকা কিংবা বিদেশে কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। নিজস্ব স্বতন্ত্র সংবিধান এবং কর্মসূচি ও কর্মপদ্ধতির আলোকেই এই সংগঠনটি পরিচালিত হয়েছে জন্মলগ্ন থেকে। মুনা প্রধানত ওই সমস্ত কর্মকা- পরিচালনা করে থাকে যাতে করে একজন ব্যক্তিকে সংশোধনের মাধ্যমে সর্বাঙ্গীন সামাজিকভাবে কল্যাণকর ব্যক্তিতে পরিণত করা যায়। এ লক্ষ্যে মুনা ব্যক্তিদের আধ্যাত্মিক নৈতিক এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। মুনা চায় এমন সব প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ উন্নয়ন যারা তাদের ¤্রষ্টা ও প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালার সাথে সম্পর্কের সুসামঞ্জস্য রক্ষা করে চলে এবং একই সময়ে সমাজের সর্বক্ষেত্রে উৎপাদনমুখী ভূমিকা পালন করে। মুনা সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক ষান্মাসিক এবং বার্ষিক পরিকল্পনার ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের ও পর্যায়ের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করে থাকে; যাতে শিক্ষাদান করা হয় ইসলামের বিভিন্ন দিক ও বিভাগ এবং মানুষের দৈনন্দিন সাধারণ সামাজিক-সাংস্কৃতিক জীবন সম্পর্কিত বিষয়াবলি। মানুষের ব্যক্তিগত মানোন্নয়ন ছাড়াও মুনা স্থানীয় ও জাতীয় জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে নানা সামাজিক ও নাগরিক অধিকার সংশ্লিষ্ট কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করে থাকে। নিজেদের স্বার্থ ও সামর্থ্য অনুযায়ী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের ধাতব ও সমাজকল্যাণমূলক কর্মকা-ে প্রতিনিয়ত এরই অংশ হিসেবে ছোট ছোট কর্মসূচির পাশাপাশি ন্যাশন ওয়াইড আয়োজন করছে এই মুনা কনভেনশন ২০২৩। এবারের কনভেনশনে আমাদের টার্গেট ২০ হাজার লোকের সমাগম। এই টার্গেট বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
তিনি আরো বলেন, মুনা নিজের সদস্য ও অন্যান্য মুসলিমদের নিয়ে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিতে চায় যাতে করে তারা অন্য ধর্মাবলম্বী অভিন্ন ভাষাভাষী বর্ণ ও গোত্রের জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবেশীদের সাথে পারস্পরিক সংলাপে নিয়োজিত হতে পারে, যার মাধ্যমে অন্ত ও আন্ত সাম্প্রদায়িক বোঝাপড়া সামাজিক প্রসার ও উন্নয়ন ঘটানো যায়। মুনা মনে করে, এ প্রক্রিয়ায় এই সমাজের সৌহার্দ্য ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব। এবারের কনভেনশন এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, মুনা একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও রাজনীতি সম্পর্কে উদাসীন বেখবর কোন দল নয়। মুনা চায় রাজনৈতিক বিষয়াবলীতে নাগরিকগণ সচেতনভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং এর ফলে রাষ্ট্রীয় জীবনে সুচারু সিস্টেম বহাল থাকে। মুনা চায় বিশ্বকে নেতৃত্বদানকারী এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনশক্তি এবং অন্যান্য নাগরিকরা বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সাথে সক্রিয় যোগাযোগ রক্ষা করে চলুক যাতে করে তাদের কথা শোনা হবে এবং তাদের অধিকার রক্ষা করা যাবে এবং তাদের বৈষম্যের রাজনৈতিক জীবনের এক প্রান্তে ঠেলে দিয়ে উপেক্ষা করা হবে না। মুনা আমেরিকায় জাতীয় ভিত্তিক সংগঠন হলেও আমাদের প্রাথমিক ফোকাস হচ্ছে বাংলা ভাষাভাষী তথা, বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটি। মুনা প্রধানত বাংলা ভাষাভাষীদের মাঝে এর কর্মকা- পরিচালনা করে থাকে। এদের দুনিয়াবি ও পরকালীন কল্যাণ নিশ্চিত করতেই মুনা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই দেশে বাংলাভাষাভাষী মুসলিমরা ও অন্যরা কীভাবে এখানকার মূলধারার জীবনে অংশগ্রহণ করে নিজেদের অধিকার নিশ্চিত করবে এবং একইসাথে নিজেদের আধ্যাত্মিক নৈতিক ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের সংরক্ষণ করবে সেই বিষয়ে সচেতন। আর তাই মুনা চায় বাংলাদেশি-আমেরিকানরা কর্মতৎপরতায় বেশি বেশি করে সক্রিয় অংশগ্রহণ করুক। সাথে সাথে বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে গড্ডালিকা প্রবাহ থেকে বাঁচাতে মুনা চায় প্রতিটি বাংলাভাষাভাষী অভিভাবক তাদের সন্তানকে মুনা ইয়ূথ এবং ইয়ং সিস্টার অব মুনার সাথে সম্পৃক্ত করুক। মুনা চায় বাংলাদেশি আমেরিকানদের আমেরিকার মূলধারার মুসলিম স্কলার ও নেতৃবৃন্দের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে এবং পূর্বের বর্ণিত মুনা কর্মকা-ের কিছু প্রায়োগিক দিককে পরিচয় করিয়ে দিতে। আর এজন্য ভূমিকা রাখবে মুনার এবারের কনভেনশন ২০২৩। আমেরিকায় ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ গঠনে দিকনির্দেশনা সংবলিত আলোচনা রাখবেন বিশ্ব বিখ্যাত সুপরিচিত অভিজ্ঞ আলোচকবৃন্দ। এবারের ইংরেজি আলোচকদের সাথে সাথে থাকবেন বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশ থেকে আগত বাংলাভাষার ইসলামিক স্কলাররা। তিনি আরো বলেন, প্রতিবারের মতো এবারো রয়েছে তরুণ ছেলেমেয়েদর জন্য আলাদা ইয়ুথ কনভেনশন এবং ইয়ং সিস্টার্স কনভেনশন। আল-কোরআনের অনুসারে কল্যাণকর জীবনযাপনের বিভিন্ন দিক ও বিভাগের ওপর প্যারালাল গ্রোগ্রাম রয়েছে। আলোচনা ছাড়া থাকবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিভিন্ন ইসলামি ও অন্যান্য সামগ্রীর দোকান নিয়ে বিশাল বাজার। ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান লার্ন অ্যান্ড ফান এবং বিভিন্ন খেলাধুলা রাইডের ব্যবস্থা। এছাড়া ফিলাডেলফিয়া ভ্রমণকারীদের জন্য থাকবে আমেরিকার স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মৃতিবহুল ভ্রাতৃপ্রতিম ভালোবাসার শহর নানা দর্শনীয় স্থান পরিবহন ও পরিদর্শনের সুযোগ। সর্বোপরি পরিবার-পরিজন বন্ধু-স্বজন আর গোটা আমেরিকা থেকে আসা বাংলাভাষাভাষীদের এই সর্ববৃহৎ মিলনমেলায় অংশগ্রহণের সুবর্ণ সুযোগ।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন হারুণ অর রশীদ। তাকে সহযোগিতা করেছেন আরমান চৌধুরী।