দিলওয়র এর গবেষণাধর্মী গ্রন্থ প্রকাশ ও ফেলোশিপ প্রদানের প্রস্তাব করেন প্রধান অতিথি, বিশিষ্ট লেখক ও গীতিকবি ইশতিয়াক রুপু। গত ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার গণমানুষের কবি দিলওয়ারের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে ছড়ালোক (ছড়ার ছোট কাগজ)। সন্ধ্যায় সাহিত্য ক্যাফের কবি দিলওয়ার মঞ্চে এক আলোচনা সভা ও লেখা পাঠের আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী লেখক, গীতিকবি ইশতিয়াক রুপু।
মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি মামুন সুলতান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এনামুল মুনির। সভাপতিত্ব করেন ছড়াকেন্দ্র সিলেটের সভাপতি কবি ও প্রাবন্ধিক দুলাল শর্মা চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ছড়ালোক সম্পাদক ও শিশুসাহিত্যিক শাহাদত বখ্ত শাহেদ। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, দিলওয়ার সিলেটে জন্ম নিলেও তিনি বিশ্বমানবতার কবি। তিনি সাহিত্যের বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করে গেছেন। তিনি ছড়া, কবিতা, নাটক, ফিচার কলাম সম্পাদনা সাংবাদিকতা সর্বস্তরে তার বিচরণ ছিল। শাহেদ বলেন, কবির জীবদ্দশায় ছড়ালোক দিলওয়ার সংখ্যা প্রকাশসহ তাকে আজীবন সম্মাননা দিতে পেরে ছড়ালোক পরিবার নিজেদের ধন্য মনে করছে। কবির সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা ও তার সৃজনশীল সাহিত্য নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন।
বিশেষ অতিথি এনামুল মুনির বলেন, কবি দিলওয়ারের সঙ্গে তার সাংগঠনিক যোগাযোগ ছিল খুব বেশি। বিশেষ করে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার নির্মাণ বাস্তবায়ন কমিটি, সিলেটের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে কবি দিলওয়ার এর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পারিবারিকভাবে কবির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। সাংগঠনিক কাজে কবির বাসায় প্রায়ই আসা যাওয়া ছিল, এ সুযোগে দেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি নিয়ে বেশ আড্ডা চলতো। এনামুল মুনির দিলওয়ারকে একজন আন্তর্জাতিক মানের কবি হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
মুখ্য আলোচক কবি মামুম সুলতান বক্তব্যের শুরুতে দিলওয়ারের বই থেকে কবিতা পাঠ করেন। পরবর্তীতে দিলওয়ারের সাহিত্য নিয়ে যথোপযুক্ত আলোচনা করেন। মামুন সুলতান বলেন, মফস্বলে থেকেও তিনি বাংলাদেশ, তথা বিশ্বকে নাড়িয়েছেন। তিনি মানবতার কবি, গণমানুষের কবি, তার লেখনীতে মানবতার কথা উঠে এসেছে। সবাইকে তার সৃষ্টিকে আরো ব্যাপকভাবে তুলে ধরার কথা বলেন। দিলওয়ার যে একজন উঁচুমানের কবি তিনি তার লেখনীতে প্রমাণ করে গেছেন।
প্রধান অতিথি ইশতিয়াক রুপু তার বক্তব্যে বলেন, দিলওয়ারকে এবং তার সৃষ্টিকে জনসমক্ষে বিশদভাবে তুলে ধরার আহ্বান জানান। তার সৃষ্টি নিয়ে একজন গবেষকের মাধ্যমে তার সব কবিতার বইয়ের কবিতাগুলো নিয়ে গবেষণাধর্মী একটি বই প্রকাশের পাশাপাশি ফেলোশিপের প্রস্তাব করেন। তিনি আমেরিকায় গিয়ে কবির পরিবারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা মাধ্যমে গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশের প্রস্তাব করবেন বলে জানান। ইশতিয়াক রুপু বলেন, আমরা কবির প্রতি যে রকম সম্মান দেখানোর প্রয়োজন তা যথোপযুক্ত হয়নি। আমরা যেনতেন লোকদের নিয়ে যেভাবে ঢাকঢোল পিটাই সেক্ষেত্রে কবি দিলওয়ারের মতো গুণীদের নিয়ে কাজ করতে আমরা পিছপা হই। তিনি ছড়ালোকের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান।
বিশেষ অতিথি কবি, সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী তার বক্তব্যে কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, দিলওয়ার শুধু আমাদের সিলেটের কবি নন তিনি বিশ্বমানবতার কবি। আমরা তার সৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি ছড়ালোক তার দায়িত্ববোধ থেকে প্রতি বছর দিলওয়ারকে নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। এজন্য ছড়ালোকের মহতী কর্মকাণ্ডকে তিনি সাধুবাদ জানান।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য ও লেখা পাঠ করেন কবি ও সাংস্কৃতিককর্মী মো. সুয়েজ হোসেন, ছড়াকেন্দ্র সিলেটের সাধারণ সম্পাদক মো. রিপন মিয়া, ছড়াকার ছাদির হুসাইন, কবি ও নাট্যকর্মী সাজেদুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন কবি ও উপস্থাপক কামাল আহমেদ।