আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব (এবিপিসি) ‘অবৈধ অভিবাসীদের বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে আয়োজন করেছিল ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি সেন্টারে। সেমিনারে প্রতিপাদ্য বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ লিখেন মিডিয়া কর্মী ও অভিনেতা শামীম শাহেদ এবং প্রবন্ধটি পাঠ করেন সাংবাদিক দর্পণ কবীর। আলোচ্য বিষয়ের ওপর প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ইমিগ্রেশন বিষয়ক বিশিষ্ট অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার। সেমিনারে বক্তব্য রাখেন- মূলধারার রাজনীতিবিদ গিয়াস আহমেদ, প্রবাস পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, মানবাধিকার কর্মী রাসেল আহমেদ, ট্রাভেলস ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম, প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি মনজুরুল হক মন্জু প্রমুখ। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি শওকত ওসমান রচি এবং সভা সঞ্চালনা করেন প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক।
সেমিনারের প্রবন্ধে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন যাবৎ অভিবাসন দ্বারা গঠিত এক জাতি। এরপরও এর নির্বাসন ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত নীতিগুলো গভীরভাবে বিতর্কিত। যেখানে এখন অবধি ৩০ লক্ষাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে, সেখানে নতুন করে গ্রেফতার অভিযান পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক করে তুলছে। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ব্যবস্থা বিভিন্ন সময়ে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে।
প্রবন্ধের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ইমিগ্রেশনবিষয়ক অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার বলেছেন, এ সংক্রান্ত নতুন কোনো আইন হয়নি। প্রচলিত আইনেই আইস (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্নমেন্ট) গ্রেফতার করছে। তবে আইনের প্রয়োগ জোরালো এবং কঠোরভাবে করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আনডকুমেন্টেড যারা রয়েছেন, এখন তাদের সতর্ক ও নিরাপদে থাকতে হবে। আইসের আগ্রাসী গ্রেফতার অভিযান একটা সময় স্থিমিত হয়ে আসবে বলে মনে করি। তবে অভিবাসীদের সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে তারা যেন ছোট বা বড় কোন ধরনের অপরাধ কাজে লিপ্ত না হন। অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার আরো বলেন, যারা স্থায়ীভাবে বাসবাসের জন্য গ্রিনকার্ড পেয়েছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রে অল্পদিন থেকে নিজের দেশে অধিকাংশ দিন থাকাটা শর্ত ভঙ্গের শামিল। এসব বিষয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আগে উপেক্ষা করতো, এখন কঠোর ভূমিকার অবতীর্ণ হয়। তিনি বলেন, যে কোনো বন্দর দিয়ে প্রবেশ করার সময় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ অভিবাসীদের সব বিষয় দেখতে পান। অপরাধ করে থাকলে এখন ওই বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার অভিবাসীদের যে কোনো পরিস্থিতিতে ভুল তথ্য না দেওয়ার প্রতি অনুরোধ করেন। এছাড়া (রাজনৈতিক আশ্রয়) মামলা করার আগে বিষয়টি যথাপোযুক্ত কি না এবং অ্যাটর্নির ওপর ভরসা রেখে উদাসীন না থাকার কথাও বলেন তিনি। অভিবাসীদের অফিসিয়াল কাজে এক ঠিকানা ব্যবহার করে অন্য ঠিকানায় বাস করার বিষয়টি এড়িয়ে চলার কথাও তিনি বলেন।
মানবাধিকার কর্মী (ড্রামের প্রতিনিধি) রাসেল আহমেদ বলেন, এখন বৈরী সময়। এই সময়ে কমিউনিটির সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কেউ যেন কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ বা বিষেদগার না করেন। এ ধরনের কর্ম নিজেদের ক্ষতি ডেকে আনে। এছাড়া আনডকুমেন্টেড অভিবাসীদের অ্যাসাইলাম করার ফাঁদে না পড়ার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, মামলার ম্যারিট না থাকলে মামলা করবেন না অ্যাটর্নির পারামর্শে। মামলার বিষয় নিয়ে গভীরভাবে ভাববেন। তিনি আইসের হাতে আটক হলে চুপ থাকার কথাও বলেন। তিনি অবৈধ অভিবাসীদের উদ্দেশ্যে জোর দিয়ে বলেন, নিজেকে সুরক্ষা করাটাই প্রধান কর্তব্য।
মার্কিন মূলধারার রাজনীতিবিদ গিয়াস আহমেদ বলেন, আজকের পরিস্থিতির জন্য ডেমোক্র্যাটরা দায়ী। একটা সময় যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত খুলে রাখা হতো। অবাধে লাখ লাখ অভিবাসী প্রবেশ করেছে। এটা মার্কিনিরা পছন্দ করে না। ফলে ট্রাম্প প্রশাসন কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে এখানে বাস করতে হবে। আর মিথ্যা তথ্য দেওয়া চলবে না। বিপদগ্রস্তরা কমিউনিটির নেতা ও সংগঠনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বাংলাদেশ ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের কারো ক্ষতি হয়, এমন কাজ থেকে সবাই যেন বিরত থাকি-এই আহ্বান জানান।
প্রবাস পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, পারিবারিক কলহ, পার্কিংয়ের টিকেট ভায়োলেশন থেকেও বিপদ আসতে পারে। নিজেদের জীবনকে অপরাধমুক্ত রাখতে হবে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি কমিউনিটির সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
ট্রাভেলস ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, ভয়ভীতি ছড়ানো হচ্ছে। যা ঘটছে, এরচেয়ে বেশি প্রচারণা করা হচ্ছে। এতে আমাদের ট্রাভেলস ব্যবসায় মন্দা শুরু হয়েছে। আপনারা সঠিক তথ্য পরিবেশন করুন। গ্রিনকার্ড নিয়ে দেশে গিয়ে অনেকে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন। আমরাও বিপাকে পড়েছি।
সভাপতির ভাষণে আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সভাপতি শওকত ওসমান রচি বলেন, এক ধরনের দায়বদ্ধতা থেকে প্রেস ক্লাব এই সেমিনারের আয়োজন করেছে। অভিবাসীদের কাছে সঠিক তথ্য ও আইনি পরামর্শ পৌঁছে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। আমরা বিভিন্ন সময় এ ধরনের সেমিনারের আয়োজন করবো।
সেমিনারের শেষ পর্বে ছিল প্রশ্ন-উত্তর। উপস্থিত সমবেতদের একাধিকজন প্রশ্ন করেন। এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার বলেন, স্টুডেন্ট ভিসায় আসতে ভয় ও বাধা নেই। তবে এই ভিসা প্রদানের আগে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক হতে পারে। এ বিষয়টি ছাত্রছাত্রীদের লক্ষ্য রাখতে হবে। এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মী রাসেল আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বসবারত স্টুডেন্টরা কোনো আন্দোলনে জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইস বা অন্য কোনো সংস্থার জেরার মুখে পড়তে পারেন। ইতিমধ্যে কিছু ছাত্রছাত্রী এই হেনস্তার শিকার হয়েছে বলে তিনি জানান।