৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:৩৪:৫৯ অপরাহ্ন


রাষ্ট্র সংস্কার প্রসঙ্গে তারেক রহমান
স্বৈরাচারের সঙ্গে লড়াইয়ে সময় বিএনপি সংস্কারের কথা বলেছে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৪-২০২৫
স্বৈরাচারের সঙ্গে লড়াইয়ে সময় বিএনপি সংস্কারের কথা বলেছে তারেক রহমান


‘বড় বড় জায়গায় বসে, এয়ারকন্ডিশনের ভেতরে বসে, বড় বড় দামি দামি অফিসে বসে তারা সংস্কারের কথা বলছে। আজকে যারা সংস্কারের কথা বলছে, এরা সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে অর্থাৎ সরকার তাদের গাড়ি দিচ্ছে, তাদেরকে বেতন বোনাস, ভাতা দিচ্ছে, তার ওপর তারা বসে সংস্কারের কথা বলছে,’ কথাগুলো বলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিএনপি ঘোষিত ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখার ৩১ দফা ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এ কথাগুলো বলেন। সংস্কার আগে ও নির্বাচন পরে যারা এ কথা বলছেন, তাদের সমালোচনা করে ওই বক্তব্য দেন তারেক রহমান। বিএনপি সংস্কার করবে কি না, সেই সন্দেহ সংশয়ের কথা যারা বলছেন, তাদের সেই সংশয় নাকচ করেছেন তিনি। 

নিজের এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিএনপি এসব সুবিধার ভেতর থেকে সংস্কারের কথা বলেনি। বিএনপি যখন সংস্কারের কথা বলেছে, তখন বিএনপি রাজপথে স্বৈরাচারের সঙ্গে যুদ্ধ করছে একদিকে, আন্দোলন করছে আর আরেক দিকে বিএনপি দেশ গঠনের চিন্তা করছে।’ এখন যারা আগে সংস্কারের কথা বলছেন, তাদের মধ্যে কতজন স্বৈরাচার শেখ হাসিনার চোখে চোখ রেখে কথা বলেছেন, সেই সময় রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলেছেন, সেসব প্রশ্নও তুলেছেন তারেক রহমান।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং দেশজুড়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী যখন কারাবন্দি, লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা এবং তারা যখন হয়রানির শিকার হচ্ছেন, সেই সময় বিএনপি রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান।

তাই বিএনপি ক্ষমতায় এলেই জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে দেশে সংস্কার করা হবে বলে উল্লেখ করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেছেন, ‘হতে পারে আমাদের ভুলত্রুটি আছে, হতে পারে আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে, হতে পারে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ কোনো কোনো অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বড় ক্রেডিট হচ্ছে, কেউ যদি অন্যায় করে থাকে, তাহলে আমরা কোনো ডিনায়ালের (অস্বীকার) মধ্যে নেই।’

এ প্রসঙ্গে তারেক রহমান আরো বলেন, ‘আমরা এখনো দেখছি, অনেক রাজনৈতিক দল আছে, কারো নাম বলব না, তাদের বিভিন্ন জনের বিভিন্ন বিষয়ের খবর, তাদের সদস্যদের আপনারা দেখছেন, আকাশে বাতাসে কান পাতলেই আমরা শুনতে পাচ্ছি। বাট, কাউকে কি দেখেছেন, যারা অন্যায় করেছে, অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে? তারা তাদের অন্যায়কারী সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।’ 

সেখানে বিএনপি অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে যারা দলের ভেতরে থেকে অন্যায় করছে, যেটা সামনে আসছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চেষ্টা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা ডিনায়ালে নেই। কারণ, আমরা বলেছি, অন্যায়কারী কোনো দলের সদস্য হতে পারে না। অন্যায়কারীর পরিচয় সে অন্যায়কারীই। অন্যায়কারীর সঙ্গে আমরা সম্পর্ক রাখতে চাই না।’ 

বিএনপির লক্ষ্য এই দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা, এ কথা উল্লেখ করে দলীয় নেতা কর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘এই দেশের জন্য বেটার (আরো ভালো) কিছু করা। কিন্তু দল একা পারবে না। আপনাদের সকলকে নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। কাজেই আপনারা প্রত্যেকটি মানুষ যখন এগিয়ে আসবেন, তখনি আমাদের পক্ষে সম্ভব ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা।’ 

এর পর পহেলা নববর্ষ এ তারেক রহমান এক বাণীতে বলেন, 

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাণী দিয়েছেন। সেই বাণীতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘নানা ঘটনা ও দুর্ঘটনার সাক্ষী ১৪৩১ সাল অতিক্রম করে ১৪৩২ সালের প্রভাতে অজানা কাল-প্রাঙ্গণের সীমানায় আমরা উপস্থিত হয়েছি। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান ভেসে যাচ্ছে রক্তে-বিস্ফোরণ।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘বিশ্বে শান্তি আনতে সমাধানহীন এক প্রহেলিকার মধ্যে থাকলে হবে না। স্বার্থ কখনো সমাধান নয়। আমরা নিঃস্বার্থ সমাধান চাইলে রক্ত ঝরবে না, শান্তির জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে না। আমাদের গত বছরের ক্লান্তি, হতাশা ও গ্লানিকে অতিক্রম করে নতুন উদ্যমে অগ্রসর হতে হবে।’

যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের সই করা বাণীতে তারেক রহমান বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ ১৪৩২, বাংলাদেশি জাতিসত্তার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নববর্ষ উদ্যাপন। বাংলা নববর্ষ বাংলাদেশিদের হৃদয়ে তার প্রকাশ অনন্য ভিন্নরূপ। আমি এই উৎসবমুখর দিনে দেশ-বিদেশের সব বাংলাদেশিদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।’

বাণীতে তারেক রহমান বলেন, ‘আবহমানকাল ধরে নানা রূপ ও বৈচিত্র নিয়ে জাতির জীবনে বারবার ঘুরে আসে পহেলা বৈশাখ। নববর্ষের উৎসবের সঙ্গে যেন ভরে ওঠা প্রকৃতি ও প্রাণের যোগ আবহমানকাল ধরে বিদ্যমান। আমাদের হৃদয়ে সঞ্চারিত হয় স্বজাতির অতীত গৌরব ও ঐশ্বর্য। আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সুদূর অতীতকাল ধরে নির্মীয়মাণ বিশালত্ব এক শক্ত ভিত্তি লাভ করে। ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মনুষ্যত্বের বাণী একত্রিত হয়ে গঠন করে এক সুগ্রন্থিত জাতি। জাতির আত্মপরিচয়ে পহেলা বৈশাখ এক উজ্জ্বল উপাদান। প্রতি বছর নববর্ষ পেছনের আলোকের দীপ্তিতে উৎকর্ষতা ও অগ্রগতির পথে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে প্রেরণা দেয়।’

‘এখন আমাদের প্রাণবন্ত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের উদার দৃষ্টিভঙ্গির যে সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং প্রবণতা রয়েছে তার ভিত্তিতে বহুমত ও পথের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার চিরস্থায়ী কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।’ বলেন তারেক রহমান।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলা সন-তারিখ আমাদের প্রাত্যহিক জীবন, দৈনন্দিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অপরিহার্য অনুষঙ্গ, তাই এটি জাতীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ, বিদগ্ধজনের মানসিক আশ্রয় ও মননের পরিচর্যার উৎসস্থল। সুপ্রাচীনকাল ধরে গড়ে ওঠা ভাষা ও কৃষ্টির নিবিড় বন্ধন ভেঙ্গে ফেলার জন্য বিদেশি আধিপত্যবাদী প্রভুরা সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারের জন্য মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। আমাদের এ সম্পর্কেও সচেতন ও সদা জাগ্রত থাকতে হবে।’

বাণীতে বলা হয়, নববর্ষের প্রথম দিনে আমি সবার কল্যাণ ও শান্তি কামনা করছি। বৈশাখের বহ্নিতাপে সমাজ থেকে মুছে যাক অসত্য, অন্যায়, অনাচার ও অশান্তি। চারদিকে প্রবাহিত হোক শান্তির সুবাতাস, সুশীলা নদী, সমস্ত জগত হোক অমৃতময়। 

শেয়ার করুন