এবছর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হচ্ছে না। বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলগুলি এবিষয়ে নিশ্চিত। কিন্তু এই নির্বাচন কি আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে? বা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে? আসলে সংস্কার নিয়ে নয় রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন শঙ্কা আগামী বছরেও কি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে? এসব শঙ্কা, উদ্বেগের পাশাপাশি আরও অনেক প্রশ্নের জন্ম হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
কি বলেছে অন্তর্বর্তী সরকার?
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সর্বশেষ একটি সংবাদমাধ্যম সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। তবে তিনি এক্ষেত্রে বরাবরের মতো আরও স্পষ্ট করেন, এই সময়সীমা নির্ভর করবে সংস্কারের বিষয়ে কতটা ঐকমত্য তৈরি হয় তার ওপর। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, যদি বেশিরভাগ সংখ্যক সংস্কারের পক্ষে একমত হয়, তাহলে সময় বেশি লাগবে। যদি স্বল্প সংস্কারের দিকে যাওয়া হয় তাহলে ডিসেম্বরেও নির্বাচন হতে পারে। আর সংস্কার প্রক্রিয়ায় যদি বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে হয়তো আমরা জুন পর্যন্ত যাব। কিন্তু, জুনের পরে আর যাব না, যোগ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
সংস্কার পার্টি নিরব তাহলে কি ডিসেম্বরে নির্বাচন?
রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচনে আগেই দীর্ঘ সংস্কার ইস্যুকে দাবি করে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে সংস্কার পার্টি হিসাবে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেছে জামায়াতে ইসলামী নামে দলটি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্টে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। বর্তমানে তিনি ভারতেই আছেন। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারে প্রদান উপদেষ্টা হন অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূস। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালনের পর বিএনপি প্রথম প্রথম সংস্কারের দাবি জানালেও পরে সেই অবস্থান থেকে সড়ে যায়। দলটি ন্যূনতম সংস্কার শেষে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন দাবিতে সোচ্চার হতে থাকে। বিএনপি এমন দাবির সম্পূর্ণ বিপরীতে দাঁড়িয়ে যায় জামায়াতে ইসলামী। দলটি একেবারেই পরিষ্কার অবস্থান নেয় তারা দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার শেষে নির্বাচন চায়। এনিয়ে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে বলা চলে দীর্ঘদিন ধরে হয় বাকযুদ্ধ। কিন্তু জামায়াত ভিন্ন অবস্থানে থাকলেও এরই ফাঁকে বিএনপি’র সঙ্গে চলা ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গী মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের উদার-গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলিকে এক কাতারে চলে আসে। বলা চলে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনে শরিকরা এককাতারে চলে আসে। এমন অবস্থায় অতিসম্প্রতি লন্ডনের একটি ঘটনা ঘটে যায়। জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান গত এপ্রিলে ব্রাসেলস সফরে যান। এই সফরে তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলের নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও আমিরের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মাহমুদুল হাসান। ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তরে একাধিক বৈঠক ও সাক্ষাৎ কর্মসূচি ছিল জামায়াত আমিরের। ব্রাসেলস থেকে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের লন্ডনে যান। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। লন্ডনে খালেদা জিয়ার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় তাঁদের এ সাক্ষাৎ হয়। এ সময় তারেক রহমানও উপস্থিত ছিলেন। আর এই সাক্ষাৎকারে পর থেকে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা বলা চলে সুর পরিবর্তন করতে থাকে। এরপর থেকে আবার কিছুটা কৌশলে বক্তৃতা বিবৃতি দিচ্ছেন। তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাতের পর থেকেই যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপ সফর শেষে রাজধানীর একটি হোটেল আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী তিনটি ‘ম্যান্ডেটরি’ (বাধ্যতামূলক) দাবি পূরণ হলেই আগামী রোজার আগে নির্বাচন হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। ঠিক বিএনপি’র সাথে লন্ডন বৈঠকের কারণেই যে তিনি এমনটা বলছেন তা যেনো কোনোভাবেই বুঝা না যায় সেজন্য আরেকটু কৌশল করে ‘কয়েকটি শর্তের’ কথা তুলে ধরেন ডা. শফিকুর রহমান।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারকে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে। একথা জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হলে জনগণ কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না। জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণ করতে হবে। সেগুলো হলো- বিচার, সংস্কার ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে নির্বাচন কি তাহলে দ্রুত হতে যাচ্ছে। কারণ এখন তো অধিকভাবে সংস্কারের দাবি তোলা জামায়াতই দ্রুত নির্বাচন চাচ্ছে। তাহলে তা কি হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে ?
এখন কি ডিসেম্বরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজনে বিএনপি’র দাবি মেনে নেবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস? কারণ তিনি তো বলেছিলেন, সময়সীমা নির্ভর করবে সংস্কারের বিষয়ে কতটা ঐকমত্য তৈরি হয় তার ওপর। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, যদি বেশিরভাগ সংখ্যক সংস্কারের পক্ষে একমত হয়, তাহলে সময় বেশি লাগবে। ‘যদি স্বল্প সংস্কারের দিকে যাওয়া হয় তাহলে ডিসেম্বরেও নির্বাচন হতে পারে। আর সংস্কার প্রক্রিয়ায় যদি বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে হয়তো আমরা জুন পর্যন্ত যাব।’ তাহলে কি দ্রুত নির্বাচন হতে যাচ্ছে? বলা চলে এখন তো একটা ঐক্যমত এসেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে বেশি সংস্কার না নির্বাচনই মূখ্য।
বিএনপি’র কণ্ঠে শঙ্কা কেনো?
এদিকে বিএনপি সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড আর বক্তৃতা-বিবৃতিতে শঙ্কা দেখা দিয়েছে আসলে কি নির্বাচন সহসাই হবে? নাকি আরও দেরিতে হবে? এমন যখন শঙ্কা তখন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী একটি বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্টি করেছে তোলপাড়। তিনি বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভেতর থেকে মনে হয়, তারা নির্বাচন চায় না। তারা একটা মূলা ঝুলিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। ডিসেম্বরে, না হলে ফেব্রুয়ারিতে বা জুনে- এরকম নানা কথা বলছে। কিন্তু কেউ সুনির্দিষ্টভাবে বলছেন না অমুক মাসেই নির্বাচন হবে।’
কেনো ফখরুল একথা বলছেন?
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ফিরে আসা গণতন্ত্র উত্তরণকে সহজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ৬ মে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর হযরত শাহজাহাল বিমানবন্দরে প্রবেশের আগে সাংবাদিকদের কাছে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, এটা আমাদের জন্য, জাতির জন্য একটা আনন্দের দিন। গণতন্ত্র উত্তরণের এই সময়ে তার উপস্থিতি একটি উল্লেখযোগ্য দিক। তার ফিরে আসা আমাদের গণতন্ত্র উত্তরণে সহজ করবে। দেশকে সঠিক ও বৈষম্যহীন পথে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করবে। প্রশ্ন হচ্ছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মনে কি আশঙ্কা ছিল বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ফিরে আসা নিয়ে? আবার তার আশঙ্কাকে অমূলক হিসাবে না ধরে পারা যায় না। কেননা চার মাস পর ৫ মে লন্ডন থেকে দেশে ফেরার কথা ছিল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সাধারণ একটি ফ্লাইটে তার দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পাল্টে কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে বিএনপি চেয়ারপারসন দেশে ফিরছেন একদিন পর গত মঙ্গলবার।
এনিয়ে আলোচনা চলছে বিমানের ফ্লাইটে ফেরার সব প্রস্ত্রুতি চূড়ান্ত হওয়ার পরও কেন সিদ্ধান্ত পালটাতে হলো। একটি গণমাধ্যম প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, বিমানের ফ্লাইটের নিরাপত্তা নিয়ে শুরু থেকেই ছিল নানা শঙ্কা। যে কারণে প্রস্তুতি নিলেও বিকল্প নিয়ে ভাবছিলেন বিএনপি নেতারা। পাশাপাশি বিমানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি চলে। নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা খোঁজ নিয়ে দেখতে পান- যে ফ্লাইটে খালেদা জিয়া ঢাকা ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সেই ফ্লাইটের অন্তত ২ জন কেবিন ক্রু’র বিষয়ে সংশয় রয়েছে। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে তাদের সন্দেহের মধ্যে রাখা হয়।
কেনো আবার কূটনীতিক পাড়ায় দৌঁড়ঝাপ
এদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বিএনপি দ্রুত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বক্তৃতা বিবৃতি যুদ্ধের পাশাপাশি কূটনৈতিক মহলে বেশ সরব হচ্ছে। সম্প্রতি বিএনপির নেতাদের সাথে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার গ্রিগোরিভিচ খোজিন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনইচির সাক্ষাত অনুষ্ঠিত হয়। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সাক্ষাৎ এর সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।
তারা গণমাধ্যমে জানিয়েছেন যে, সব কূটনীতিকরাই বাংলাদেশে কবে নির্বাচন হবে রাশিয়া তা জানতে চেয়েছেন। বিএনপি নেতারা বলেন, সব কূটনীতিকদের সাথে আলাপকালে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টিও স্থান পেয়েছে। খোঁজ নিযে জানা গেছে, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছেন বিদেশী কূটনীতিকরা। বলা হচ্ছে সরকারের প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে আগামী নির্বাচন নিয়ে জানতে চাচ্ছেন এসব কূটনীতিকরা। মূলত নির্বাচনের সময় নিয়েই আগ্রহ দেখাচ্ছেন বিদেশিরা। তবে একটি সূত্র জানায় বিএনপি এখন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে দেশে বিদেশে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় দেশে অবস্থানরত বিদেশী কূটনীতিকদের দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে কূটনীতিক মহলে একধরনের আওয়াজ তুলছে।
ভূ-রাজনীতি ও শেষ কথা
দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে অবস্থান করছে। অন্যদিকে দলের একশ্রেণীর নেতাকর্মীরাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেপারোয়া হয়ে উঠঠে, একে করে বাড়ছে দুর্নাম। এমন পরিস্থিতি বিএনপি’র ধারণা একমাত্র একটি রাজনৈতিক সরকার শক্ত হাতে সব ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তারা সামাল দিতে পারবে। কিন্তু সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের খোদ প্রধান উপদেষ্টার মুখে ভিন্ন আওয়াজ লক্ষ্য করা গেছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে শঙ্কা ঢুকেছে যে, তারা যখন সবদল মতকে দ্রুত নির্বাচনের জন্য প্রায় তৈরি করে ফেলা হয়েছে ঠিক তখন প্রধান উপদেষ্টর মুখে কেনো অন্য কথা উঠে এলো? কেনো একটি আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যমে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হন্তান্তরের কথা বলছে না। তিনি এধরনের কথা বলতে গিয়ে আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি চলে যেতে এখনও বলছে না। বিএনপি’র নেতাদের এখন ধারণা প্রধান উপদেষ্টর মুখে এমন বক্তব্যের পেছনে আরও কিছু আছে, এটি রহস্যঘেরা। তাদের মতে, দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের পার্টির দাবিতে সোচ্চার জামায়াতই এখন বিএনপি’র সাথে সুর মিলিয়ে যদিও কৌশল নিচ্ছে তারপরে দ্রুত নির্বাচনই চাচ্ছে। আর ঠিক তখনই ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হন্তান্তরের কথা বলছে না। তাহলে কি সর্ষের মধ্যে ভূত লুকিয়ে আছে? তাহলে কি ধরে নেয়া যায় যে জাতীয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষ করে ভূ-রাজনীতি ইস্যুকে সামনে এনে নির্বাচনটিকে অনিশ্চয়তা নিয়ে যেতে কেউ কেউ তৎপর। তবে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা বাংলাদেশে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন-তো পরে থাক দ্রুত সেটি আয়োজন হচ্ছে কি-না তা নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ নিয়ে সাজ সাজ রব।
একিই সঙ্গে রয়েছে মিয়ানমারে ভেতরে প্রচন্ড অস্থিরতা। এর পাশাপাশি বাংলাদেশে আবারও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত, সহিংসতা ও খাদ্যসংকটের কারণে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকার খবর। আবার সন্দেহ ঠেকে যখন রাখাইনে করিডোরের উদ্যোগকে ইতিবাচক মনে করে ইইউ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার সম্প্রতি বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইনে করিডোরের উদ্যোগকে ইতিবাচক মনে করেন তিনি। অন্যদিকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরামে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই মার্কিন নাগরিককে আটকের পর মিজোরাম থেকে তাদের বহিষ্কার করে দিল্লিতে ফেরত পাঠানোর খবর। বলা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ- মিজোরামের রাজধানী আইজলে পৌঁছে তারা কেএনএ/এফ জঙ্গিদের সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা করেছিল।
তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে সক্রিয় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগাযোগেরও অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি আরও স্পর্শকারত হয়েছে আরও অন্য খবরে তাহলো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই মার্কিন নাগরিককে আটকের পর মিজোরাম থেকে তাদের বহিষ্কার করে দিল্লিতেই ফেরত পাঠানোর বিষয়টি। কারো কারো আশঙ্কা এমন সব পরিস্থিতি আসলেওই উদ্বেগ উকন্ঠার। তাদের মতে, দেশের ভেতরে রাজনৈতিক খেলার পাশাপাশি ভূ-রাজনীতির মারপ্যাচ আবার একিই সাথে পতিত আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানো ব্যাপারে তৎপরতাও একটি রাজনৈতিক ফ্যাক্টর। এসব কিছুর হিসাব মিলিয়ে বাংলাদেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কি আগামী বছরেও হতে যাচ্ছে কি-না তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো মধ্যে বিশেষ করে বিএনপি’র মতো প্রধান রাজনৈতিক দলের কাছে।