০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:১৯:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


নিউইয়র্ক সিটি নির্বাচন
অপ্রতিরোধ্য জোহরান মামদানি : ব্যবধান মাত্র ২ শতাংশ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৬-২০২৫
অপ্রতিরোধ্য জোহরান মামদানি : ব্যবধান মাত্র ২ শতাংশ বক্তব্য রাখছেন জোহরান মামদানি


নির্বাচনের তারিখ যত ঘনিয়ে আনছে, ততই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছেন নিউইয়র্ক সিটির মেয়র প্রার্থী ইমিগ্র্যান্ট এবং মুসলিম কমিউনিটির বন্ধু জোহরান মামদানি। আজ থেকে সাত আগে যখন তিনি প্রার্থিতা ঘোষণা করেছিলেন, তখন তার অবস্থান ছিলো সবার নিচে। অর্থাৎ ১১ জন প্রার্থীর মধ্যে সর্বনিম্ন। সবাই তাকে নিয়ে তখন মন্তব্য করেছিলেন কিছু দিন থাক এবং ১৫ থেকে ২০ শতাংশ সমর্থন আদায় কর। তার ঠিক কয়েম মাস পর তার সমর্থন বাড়তে থাকে। এক সময় তিনি দ্বিতীয় স্থানে চলে আসেন। তার সঙ্গে প্রথম প্রার্থী ভোটের ব্যবধান ছিলো ৮ শতাংশ। ঠিক নির্বাচনে ১৫ দিন আগে এগিয়ে থাকা এন্ডু কুমোর সঙ্গে তার ভোটের ব্যবধান মাত্র ২ শতাংশ। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তিনি যদি নম্বর ওয়ান প্রার্থী হয়ে যান, তাহলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। কারণ তিনি যেন অপ্রতিরোধ্য। তার ব্যাপক সমর্থনের পেছনে রয়েছে নতুন প্রজন্ম এবং নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি কংগ্রেসম্যান ওকাসিওর সমর্থন। জোহরান মামদানির সমর্থনে বাংলাদেশি কমিউনিটির উদ্যোগে গত ৯ জুন জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্টুরেন্টে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশি কমিউনিটির অত্যন্ত পরিচিত মুখ, জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও মূলধারার রাজনীতিবিদ ফাহাদ সোলায়মান ও ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহানের আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জোহরান মামদানি, সম্মানীত অতিথি ছিলেন গোল্ডেন এজ হোম কেয়ার ও আজকালের প্রেসিডেন্ট শাহ নেওয়াজ, জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গিয়াস আহমেদ। অনুষ্ঠানের প্রশ্নউত্তর পর্ব পরিচালনা করেন প্রিসিলা।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাহাদ সোলায়মান ও ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোহবান। ফাহাদ সোলায়মান বলেন, আমাদের প্রার্থী জোহরান মামদানি নতুন ইতিহাস তৈরি করতে যাচ্ছেন। আমাদের সাদা প্রার্থীর জন্য, আফ্রিকান কালো প্রার্থীর জন্য কাজ করেছি। এবার ব্রাউন প্রার্থীর জন্য কাজ করি। কারণ আমিসহ আমরা দক্ষিণ এশিয়ানরা ব্রাউন। তিনি জোহরানকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে জোহরান মামদানি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আজ থেকে সাত আগে যখন আমি যখন প্রার্থিতা ঘোষণা করি, তখন আমার অবস্থান ছিল সবার নিচে। অর্থাৎ ১১ জন প্রার্থীর মধ্যে সর্বনিম্ন। সবাই আমাকে নিয়ে তখন মন্তব্য করেছিলেন কিছু দিন থাক এবং ১৫ থেকে ২০ শতাংশ সমর্থন আদায় করো। তার ঠিক কয়েম মাস পর আমার সমর্থন বাড়তে থাকে। এক সময় আমি দ্বিতীয় স্থানে চলে আসি। আমার সঙ্গে প্রথম প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান ছিল ৮ শতাংশ। ঠিক নির্বাচনে ১৫ দিন আগে এগিয়ে থাকা এন্ডু কুমোর সঙ্গে আমার ভোটের ব্যবধান মাত্র ২ শতাংশ। আশা করছি আগামী দিনে আপনাদের সহযোগিতায় আমরা নতুন ইতিহাস তৈরি করবো। তিনি বলেন, ইসলাম হচ্ছে শান্তি এবং সৌন্দর্যের ধর্ম। সেই ধর্মের মানুষ আমরা। তিনি বলেন, আমি নির্বাচিত হলে বাস ফ্রি করে দেবো, বাড়িভাড়া কমাবো, বাড়িওয়াদের জন্য ট্যাক্স কমাবো, পানির বিল কমাবো। আমি শিশুসহ সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবো। নতুন নতুন আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলবো। দুর্নীতি বন্ধ করবো। তিনি বলেন, আসুন আমরা ২৪ জন নতুন ইতিহাস তৈরি করি।

নিউইয়র্ক মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানিকে সমর্থন এওসির, কুওমোকে ‘না’ বলার আহ্বান

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ (এওসি) অবশেষে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানিকে তার প্রধান পছন্দ হিসেবে সমর্থন জানিয়েছেন। গত ৫ জুন সকালে ঘোষিত এই বহুল প্রতীক্ষিত সমর্থন নির্বাচনী রাজনীতিতে এক নতুন মোড় সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে যখন প্রাথমিক ভোটগ্রহণ শুরু হতে বাকি মাত্র ৯ দিন। জোহরান মামদানি, একজন গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক ও কুইন্সের রাজ্য অ্যাসেম্বলি সদস্য, বর্তমানে ভোটার জরিপে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছেন। এওসির এই সমর্থন তার প্রচারে নতুন গতি আনতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। নিজের সমর্থকদের প্রতি বার্তায় এওসি ভোটারদের উৎসাহ দিয়েছেন মামদানিকে প্রথম, তারপর ক্রমানুসারে আদ্রিয়েন অ্যাডামস (২), ব্র‍্যাড ল্যান্ডার (৩), স্কট স্ট্রিঙ্গার (৪) এবং সেলনর মাইরি (৫) হিসেবে ভোট দেওয়ার জন্য। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে, সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোকে কোনো র‌্যাঙ্কেই রাখা উচিত নয়।

নিউইয়র্ক সিটির রাজনীতিতে এওসির সমর্থনকে অনেকেই এক ‘প্রগ্রেসিভ কিংমেকার’ হিসেবে দেখছেন। এর আগেও ২০২১ সালে তিনি যখন ব্র‍্যাড ল্যান্ডারকে সিটি কম্পট্রোলার হিসেবে সমর্থন করেছিলেন, তখনই ল্যান্ডার ভোটে বড় ধরনের লাফ পেয়েছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়েছিলেন। একইভাবে, মেয়র পদপ্রার্থী মায়া উইলিকেও তিনি সমর্থন করেছিলেন, যা প্রচারণার শেষ দিকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় গতি এনে দিয়েছিল। সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের রাজনৈতিক বিশ্লেষক জন মলেঙ্কপফ বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সমর্থন ভোটারদের সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা রাখে না, তবে কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজের মতো একজন জাতীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে সেটা ভিন্ন হতে পারে বিশেষ করে এমন একটি টাইট রেসে।

এই নির্বাচনে র‌্যাংকড-চয়েস ভোটিং ব্যবহৃত হচ্ছে, যার মাধ্যমে ভোটাররা তাদের পছন্দের পাঁচজন প্রার্থীকে ১ থেকে ৫ নম্বর পর্যন্ত র‌্যাঙ্ক করতে পারবেন। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদ্ধতিতে ভোটের প্রতিটি ধাপেই প্রার্থীর সমর্থন বাড়ানোর সুযোগ থাকে, এবং শেষ মুহূর্তের সমর্থন অনেক বড় পরিবর্তন আনতে পারে। মায়া উইলির ক্যাম্পেইন ম্যানেজার মায়া রুপার্ট বলেন, যদি এওসির মতো প্রভাবশালী কেউ বলে ‘আমি এই মানুষটিকে বিশ্বাস করি,’ তাহলে সেটা অনেক ভোটারের কাছে সিদ্ধান্ত পাল্টানোর মতো গুরুত্ব পায়।

নিউইয়র্কে স্থানীয় নির্বাচনে টার্নআউট ঐতিহাসিকভাবে কম। ২০২১ সালে মাত্র ২৩ শতাংশ ভোটার মেয়র প্রাইমারিতে ভোট দিয়েছিলেন। তবে রুপার্ট মনে করেন, এওসির সমর্থন বিশেষ করে তরুণ, সংখ্যালঘু ও প্রগতিশীল ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াতে পারে। যদি আপনি ভাবেন, ‘অ্যান্ড্রু কুওমো তো জিতেই যাবেন,’ তাহলে আপনি হয়তো ভোট দিতেই যাবেন না। কিন্তু যদি কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ বলেন, ‘এই প্রার্থী পারেন,’ তখন অনেকেই ভোট দিতে আগ্রহী হবেন। কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ-এর সমর্থন মামদানির প্রচারে একটি বড় ধাক্কা দিতে পারে। যদিও চূড়ান্ত জয় নির্ভর করবে মামদানির নিজ প্রচারণা ও নীতিগত অবস্থানের ওপর, তবে এই সমর্থন তাকে এই শেষ সময়ে নির্বাচনী দৌড়ে একধাপ এগিয়ে দিতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

আগাম ভোটগ্রহণ শুরু হচ্ছে ১৪ জুন এবং মূল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৪ জুন। এখন দেখার বিষয়, কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজের এই ‘স্ট্যাম্প অব অ্যাপ্রুভাল’ আদৌ মামদানিকে মেয়র পদে নিয়ে যেতে পারে কি না।

শেয়ার করুন