২৫ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার, ১০:১৬:৩৪ অপরাহ্ন


বাংলাদেশ সেমিট্রি : স্বপ্ন নয় এখন বাস্তব
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৮-২০২৫
বাংলাদেশ সেমিট্রি : স্বপ্ন নয় এখন বাস্তব বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে কাজের উদ্বোধন


মহামারি করোনার নিশ্চয় ভুলে যাওয়ার বিষয় নয়। সে সময় মানুষের অসহায়ত্ব এখন গল্পের মতো শোনাবে। কোনো অপরাধ করলে মানুষকে বন্দি করে রাখা হয় জেলে। কিন্তু করোনার সময় প্রতিটি বাড়ি এবং ঘর ছিল একটি জেল বা কারাগার। কেউ ঘর থেকে বের হতো না। বিশেষ জরুরি আইন ঘোষণা করা হয়েছিল। সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ছিল করোনা আক্রান্ত মানুষের অবস্থা এবং তার চলে যাওয়া। করোনা আক্রান্ত পিতাকে মাতা, আবার মাতাকে পিতা, সন্তান এবং আত্মীয়স্বজন দেখতে যায়নি। মৃত্যুর পর মানুষ একা হয়ে যায়। কিন্তু করোনা আক্রান্ত জীবিত মানুষও একা হয়েগিয়েছিল। মৃত্যুর পর জানাজা তো দূরের কথা শেষ দেখাটিও ভয়ে করতে যায়নি অনেকে। একধরনের নরক বা মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল এ পৃথিবী। সবাই ব্যস্ত ছিল নিজের জীবন রক্ষায়। সে সময় নিজের জীবনকে তোয়াক্কা না করে কিছু মানবদরদী মানুষ মানুষের জন্য দাঁড়িয়েছিল। করোনায় আক্রান্ত এবং করোনায় মৃত্যুবরণকারী মানুষের সহযোগিতায় দাঁড়িয়েছেন। পরিবারের লোকজন যেখানে মৃত্যুর পর জানাজা এবং দাফনে যায়নি। সেখানে জাহিদ মিন্টুদের মতো কিছু মানুষ মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছেন। নিজে দেখেছেন সে সময় মুসলিম কবরের সংকট। বিষয়টি নিয়ে নিজের প্রাণের সংগঠন বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন কবরের জায়গা ক্রয় করার।

দীর্ঘ তিন বছরে সংগ্রাম শেষে জায়গা পেলেন। শুধু জায়গা পেলে তো হবে না, সে জায়গা ক্রয় এবং নানাবিধ কাজ শেষে করতে অনেক ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়েছে। যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন সবার সহযোগিতায় সে স্বপ্নের বাস্তবায়ন করলেন। নাম দিলেন স্কটটাউন বাংলাদেশ সেমিট্রি। এটি মনে হয় বিশ্বের সর্ববৃহৎ সেমিট্রি মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য। ১ লাখ কবরের স্বপ্ন এখন আর স্বপ্ন নয়, এখন তা বাস্তব।

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির বহুল প্রত্যাশিত ‘বাংলাদেশ সেমিট্রি’র কাজের উদ্বোধন হলো। গ্রেটার নোয়াখালী সোসাইটি ইউএসএর উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় নিউইয়র্কে লক্ষাধিক কবরের ‘বাংলাদেশ সেমিট্রি’র কাজ গত ৩১ জুলাই দুপুরে প্রকল্প এলাকায় বিশেষ দোয়া মোনাজাতের পর রংবেরঙের একগুচ্ছ বেলুন আর ‘শান্তির দূত’ কবুতর উড়িয়ে প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। এ লক্ষ্যে নিউইয়র্কের আপস্টেটে স্কটটাউনে প্রায় ১২৬ একর জমি নগদ অর্থে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর ক্রয় সম্পন্ন হয়। নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে অবশেষে বৃহৎ এ প্রকল্পের কাজ শুরু হলো। উল্লেখ্য, বৃহৎ এ প্রকল্পে কবরের ব্যবস্থা ছাড়াও ফিউনেরাল ও নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানালেন কর্মকর্তারা।

গ্রেটার নোয়াখালী সোসাইটি ইউএসএর সভাপতি নাজমুল হাসান মানিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টারের ইমাম মওলানা রহুল্লাহ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এই প্রজেক্টের স্বপ্নদ্রষ্টা গ্রেটার নোয়াখালী সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদ মিন্টু, গ্রেটার নোয়াখালী সোসাইটি ইউএসএর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হাজি মফিজুর রহমান, প্রকল্পের আহ্বায়ক এবং বাংলাদেশ সোসাইটি ও গ্রেটার নোয়াখালী সোসাইটির সাবেক সভাপতি আব্দুর রব মিয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিএনএইচ বেলাল, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী, গ্রেটার নোয়াখালী সোসাইটির কর্মকর্তাদের মধ্যে ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য খোকন মোশাররফ, সহ-সভাপতি তাজু মিয়া, বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টারের সভাপতি আবুল হাসেম, বেলাল মসজিদের ইমাম ড. আনসারুল করিম, জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার পরিচালনা কমিটির সদস্য রেজাউল করিম চৌধুরী, আল নূর সেন্টারের কর্ণধার মুফতি মোহাম্মদ ইসমাইল, গ্রেটার নোয়াখালী সোসাইটি’র সাবেক সাধারণ সম্পদক নূরুল আমীন, কোম্পানীগঞ্জ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ইউএসএর সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন সবুজ, মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুর সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খান প্রমুখ।

এছাড়াও ওই প্রকল্পে কবর ক্রয়কারী প্রবাসী বরিশাল ডিভিশন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, মুনা সেন্টার অব জ্যাকসন হাইটস, দাগনভূঁইয়া ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ইউএসএ, মানিকগঞ্জ সমিতি নর্থ আমেরিকা, নরসিংদী জেলা সমিতি ইউএসএ, বাংলাদেশ আমেরিকান কার অ্যান্ড লিমোজিন অ্যাসোসিয়েশন, ভোলা ডিস্ট্রিক্ট অ্যাসোসিয়েশন অব ইউএসএ প্রভৃতি সংগঠনের প্রতিনিধিরাও প্রকল্পের সাফল্য কামনা এবং আরো কবর ক্রয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। এ পর্ব পরিচালনা করেন গ্রেটার নোয়াখালী সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ জসিম। 

অনুষ্ঠানে ওই প্রকল্পের প্রধান উদ্যোক্তা ও প্রকল্পের সদস্য সচিব এবং পরিচালক জাহিদ মিন্টু প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন বলেন, ক্রয়কৃত ‘বাংলাদেশ সেমিট্রি’র মাটির পরীক্ষাসহ অন্যান্য কাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করা হলো। এতে পর্যায়ক্রমে লক্ষাধিক কবর তৈরি করা হবে। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস থেকে কবরে লাশ দাফন করা যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মসজিদ কমিটি, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন কয়েক হাজারের মতো কবর ক্রয় করেছেন। তিনি আরো বলেন, অযথা বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা না করে আমাদের এ শুভ কাজ সফল করতে সহযোগিতা করুন। আমরা এ প্রজেক্ট মানুষের সেবা করার জন্য করেছি। তিনি এ প্রজেক্টে শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যারা যারা অর্থ এবং শ্রম দিয়ে সহযোগিতা করেছেন এবং স্বপ্ন বাস্তায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের সবার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। ধন্যবাদ নোয়াখালীবাসী, বৃহত্তর সোসাইটির কার্যকরি কমিটি, ট্রাস্ট্রি বোর্ড, উপদেষ্টা পরিষদকে। অন্যদিকে প্রায় সব বক্তাই জাহিদ মিন্টুকে ধন্যবাদ জানান এ সুন্দর প্রজেক্টের জন্য।

আব্দুর রব মিয়া সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং এ প্রজেক্ট সমাপ্ত করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

সভাপতি নাজমুল হাসান, অনুষ্ঠানকে সফল এবং সার্থক করার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

হাজি মফিজুর রহমান এই প্রজেক্টের সঙ্গে সবার সম্পৃক্ততা কামনা করেন।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে হাফেজ রফিকুল ইসলাম ও মুফতি আব্দুল মালেক, সংগঠনের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য বাবু রমেশ চন্দ্র নাথ, উপদেষ্টা শাহ নাছের স্বপন, শাহ আলম, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য গোলাম সরওয়ার, রফিকুল ইসলাম ভূইয়া, দেলোয়ার হোসেন দেলু এবং সাপ্তাহিক দেশ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সাপ্তাহিক হককথার এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ, ফটোসাংবাদিক নিহার সিদ্দিকী, আইভিটিভির সৌরভ ইমামসহ বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক কর্মকর্তা নওশাদ হোসেন সিদ্দিকী, জামান তপন ও সাদী মিন্টু, বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মাইনুল উদ্দীন মাহবুব, মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতি ইউএসএর সাবেক সভাপতি শাহাদৎ হেসেন, গ্রেটার নোয়াখালী সোসাইটি ইউএসএর সহ-সাধারণ সম্পাদক ছালেহ আহমেদ রুবেল, দফতর সম্পাদক মিরন কিবরিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুল ইসলাম বাবু, ভারপ্রাপ্ত কোষাধ্যক্ষ জামাল উদ্দিন, তালহা, আশরাফুল হাসান, গোলাম সরওয়ার, সংগঠনের সদস্য মাহমুদুল হক ও আব্দুল মালেক খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

দোয়া মাহফিল শেষে জোহরের নামাজ অদায় করার পর জাহিদ মিন্টুর নেতৃত্বে রংবেরঙের একগুচ্ছ বেলুন আর ‘শান্তির দূত’ কবুতর উড়িয়ে প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। এ সময় প্রবাসীরা উপস্থিত থেকে ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর ধ্বনি’ তোলেন।

শেয়ার করুন