৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:১৭:৫৯ অপরাহ্ন


বঙ্গোপসাগরে পেট্রোলিয়াম অনুসন্ধানে কেন সাড়া নেই?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০১-২০২৫
বঙ্গোপসাগরে পেট্রোলিয়াম অনুসন্ধানে কেন সাড়া নেই? সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান


বাংলাদেশে চলছে তীব্র জ্বালানি সংকট এবং মূলত গ্যাস সংকট। বঙ্গপোসাগরে বাংলাদেশের আওতাধীন এলাকায় গভীর এবং অগভীর অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ পেট্রোলিয়াম এবং খনিজসম্পদ আবিষ্কারের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বিগত সময়ে সরকারের অনীহা এবং ভূরাজনৈতিক কারণে সাগরে পেট্রোলিয়াম অনুসন্ধানের লাগসই কার্যকরি উদ্যোগ গৃহীত না হওয়ায় দেশ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বিস্তারিত জিওলজিকাল তথ্য না থাকাসহ অন্যান্য নানা অজুহাতে সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগে আগ্রহী হয়নি পূর্ববর্তী সরকারগুলো। 

এমনকি এক্সন মোবিল, উডসাইড পেট্রোলিয়াম, দাইয়ু পস্কোর মতো শীর্ষস্থানীয় পেট্রোলিয়াম কোম্পানিগুলো নিজ উদ্যোগে পেট্রোলিয়াম অনুসন্ধানের আগ্রহ দেখালেও সরকার সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছে। অনেকের মতে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষায় সরকার এলএনজি আমদানিতেই বেশি আগ্রহী ছিল। সেখানেও উদ্যোগ নানা কারণে সীমিত সাফল্য পেয়েছে।

এমনকি তথ্যউপাত্ত সংগ্রহের জন্য মাল্টি ক্লায়েন্ট সার্ভে কার্যক্রম সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বেশ কিছু আকর্ষণীয় ইনসেনটিভ সংযোজিত করে মডেল পিএসসি সংশোধন করে নতুন করে পিএসসি বিডিং রাউন্ড ঘোষণা করে পূর্ববর্তী সরকার। কিন্তু জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতা আন্দোলনে সরকারের পতন ঘটলে প্রেক্ষাপট পাল্টে যায়। জ্বালানি বিদ্যুৎ সেক্টরের নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে থাকে। দেশে কর্মরত বিদেশি কোম্পানিসমূহ এবং বিদেশ থেকে জ্বালানি বিদ্যুৎ রফতানিকারকদের কাছে সরকারের বিপুল বকেয়ার তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

সাগরে গ্যাস অনুসন্ধান অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। বিনিয়োগকারীরা বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের পূর্বশর্ত হিসেবে চায় বিনিয়োগ ফিরে পাওয়ার জন্য অনুকূল রাজনৈতিক পরিবেশ স্থায়ী সরকারি ব্যবস্থা। সবাই স্বীকার করবেন বাংলাদেশে বর্তমানে সে পরিবেশ নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতদিন স্থায়ী হবে, জ্বালানি-বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সেক্টরে কী ধরনের সংস্কার হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। তদুপরি পিএসসির মাধ্যমে বিনিয়োগকারী নিয়োগ এবং আইওসিগুলোর সঙ্গে নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে বাংলাদেশের ট্র্যাক রেকর্ড আকর্ষণীয় নয়। এসব বিবিধ কারণে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিডিং রাউন্ডে আইওসিগুলো আদৌ সাড়া দেয়নি।

অথচ বাংলাদেশের দীর্ঘস্থায়ী জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অফশোর এবং অনশোর এলাকায় অবিলবে ব্যাপক অনুসন্ধানের জন্য দেশি-বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগ অপরিহার্য। প্রয়োজন আগ্রাসী পেট্রোলিয়াম দ্যূতিয়ালি, সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন, জ্বালানি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর বিপুল বকেয়া পরিষদ করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন এবং প্রভাবশালী বৃহৎ প্রতিবেশীর সঙ্গে শান্তিপূর্ণসহ অবস্থান সুনিশ্চিত করা। মনে হয় না গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হয় পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে।

শেয়ার করুন