৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১০:০৩:২২ পূর্বাহ্ন


বন-কৃষিজমি উজাড় ও জলাশয় ভরাট অভ্যাসে পরিণত হয়েছে- সৈয়দা রিজওয়ানা
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-১২-২০২৪
বন-কৃষিজমি উজাড় ও জলাশয় ভরাট অভ্যাসে পরিণত হয়েছে- সৈয়দা রিজওয়ানা


বন ও কৃষিজমি উজাড় করা এবং জলাশয় ভরাটকে আমরা অভ্যাসে পরিণত করেছি। বিগত সময়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে এই অভ্যাসগুলো তৈরি হবার সুযোগ যদি না দেয়া হতো তাহলে আমরা পরিবেশগত বিপর্যয়ে পড়তাম না। বিভিন্ন প্রতিকূলতা এবং দখলদারদের বাধা সত্ত্বেও বেদখল হওয়া বনভূমি উদ্ধার কার্যক্রম চলমান রাখা হয়েছে এবং অ্যাকশন প্লান তৈরি করে নদী দখলমুক্ত করার কাজ শুরু করা হবে। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে "বাংলাদেশে এনডিসি’র (ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন) আলোকে কৃষি, বন ও অন্যান্য ভূমির ব্যবহার থেকে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ" শীর্ষক এক জাতীয় সেমিনারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ অল্প পরিমাণে কার্বন নিঃসরণ করে এবং ন্যাশনাল ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি) নীতি প্রণয়নের কাজটি ভলান্টারি বা ঐচ্ছিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন করে এনডিসি প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে ভূমির পাশাপাশি বন ও জলাভূমিকে অন্তর্ভূক্ত করা হবে এবং এটি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলকে যুক্ত করা হবে। এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে আগ্রহীদের আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করারও অনুরোধ জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, আমাদের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহার ব্যক্তি পর্যায়ে কমানো প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সবাইকে সাশ্রয়ী হবার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

 

এএলআরডি চেয়ারপার্সন ও নিজেরা করি-র সমন্বয়কারী খুশী কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ সেন্টার ফর এডভান্স স্টাডিজ এর সম্মানিত ফেলো ড. দ্বিজেন মল্লিক। মূল প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, বৈশ্বিক জলবায়ু চুক্তি-২০১৫ এর আওতায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি) পলিসি বৈশ্বিকভাবে প্রদান করেছে। সর্বশেষ ২০২১ সালে বাংলাদেশ এনডিসি হালনাগাদ করেছে। এই হালনাগাদ পলিসিতে বাংলাদেশ এনার্জি সেক্টর, কৃষি, বন ও অন্যান্য ভূমি থেকে কার্বন নিঃসরণের হার উল্লেখপূর্বক ২০৩০ সালে কার্বন হ্রাসের কর্মপরিকল্পনা প্রদান করেছে। বাংলাদেশে কৃষি, বন ও অন্যান্য ভূমি থেকে কার্বন হ্রাসের সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে কৃষিতে জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি, রাসায়নিক সারের ব্যবহার হ্রাস, অধিক বনায়ন এবং ভূমির উপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রিণ হাউস গ্যাস হিসেবে পরিচিত মিথেন গ্যাস, ক্লোরোফ্লুরো কার্বন (সিএফসি) এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ইত্যাদি ক্ষতিকর গ্যাসের নিঃসরণ হ্রাস করা সম্ভব। এর পাশাপাশি এই কৃষিক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শ্রম প্রদানকারী গ্রামীণ নারীদের কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া সম্ভব হলে এবং নারীদের ভূমিতে পূর্ণ অধিকার ও প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা গেলে এই কার্বন নিঃসরণের যৌথ কর্মউদ্দ্যোগে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

 

সেমিনারে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন খন্দকার মাঈনউদ্দীন, সিনিয়র ফেলো, বাংলাদেশ সেন্টার ফর এডভান্স স্টাডিস (বিসিএএস); ফেরদৌস আরা বেগম, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড); ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান খান, সহযোগী অধ্যাপক, ইন্সটিটিউট অব ডিজাস্টার এন্ড ভালনারেবল স্টাডিস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ড. নাজিম উদ্দীন, সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিএআরআই); গাজী মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী, গবেষক, সেন্টার ফর নলেজ (সিএফকে); এ.কে.এম. আজাদ রহমান, প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর, লোকাল গভর্মেন্ট ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (লজিক), ইউএনডিপি, বাংলাদেশ।

প্যানেল আলোচকগণ তাদের বক্তব্যে বলেন,

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জীবাশ্ম জ্বালানি ভিত্তিক সার ও সেচ নির্ভর কৃষি এবং মনোকালচারের চর্চা থেকে সরে এসে জৈব কৃষি চর্চার ক্ষেত্র বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে যে ভর্তুকি দেয়া হয় সেটির একটি অংশ জৈব কৃষিতে প্রণোদনা ও ভর্তুকি হিসেবে দেয়া যেতে পারে। কৃষি ও বন ব্যবস্থাপনায় লোকায়ত জ্ঞানের লালন বাড়াতে হবে। কৃষিতে কৃষকদের বিশেষত নারীদের লোকায়ত জ্ঞানের প্রয়োগ এবং যুব সম্পৃক্ততা বাড়ানোর মাধ্যমে এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ত্বরান্বিত করা সম্ভব হবে। এসএমই নীতি , জাতীয় কৃষি নীতি, জীববৈচিত্র্য নীতিসহ রাষ্ট্রীয় নীতিসমূহে এনডিসির বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ভোগবিলাসের চর্চার বদলে আমাদের সবাইকে প্রকৃতি-পরিবেশ সংবেদনশীল জীবন যাপন পদ্ধতি ও সম্পদ ব্যবহারের চর্চা বাড়াতে হবে। নতুন প্রযুক্তির ফাঁদে পড়ে আমরা যেন চিরায়ত পরিবেশ বান্ধব চর্চা থেকে আমরা যেন সরে না আসি।‌

 

সভাপতির বক্তব্যে খুশী কবির বলেন, বাণিজ্যিক কৃষির ফলে আমাদের কার্বন নিঃসরণ বেশি হচ্ছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। লোকায়ত কৃষিতে কার্বন নিঃসরণ কম হলে আমাদের ভর্তুকি দিয়ে হলেও লোকায়ত জ্ঞান ও জৈব কৃষির চর্চাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি ও প্রণোদনা দিতে হবে। যে জিডিপির বৃদ্ধির ফলে বৈষম্য বৃদ্ধি পায়, পরিবেশ-ইকোলজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেই জিডিপি বৃদ্ধির বদলে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে মানুষের চাহিদা পূরণ, বৈষম্য হ্রাস ও পরিবেশ সংরক্ষণের ওপর। টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের সুযোগ নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় প্রকৃতি ভিত্তিক সমাধানকে সামনে আনতে হবে এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাস ও জলবায়ু ঝুঁকি প্রশমনে কৃষি, বন ও ভূমি ব্যবহারকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।

শেয়ার করুন