২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ১০:৪২:৫৪ পূর্বাহ্ন


বাইডেনে চাঙ্গার পর ব্লিঙ্কেনে হতাশ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৪-২০২২
বাইডেনে চাঙ্গার পর ব্লিঙ্কেনে হতাশ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সাথে আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক : ছবি ইউএস অ্যাম্বাসী ঢাকা, ওয়েবসাইট


যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লেখা চিঠির খবরে সরকার ও তাদের দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বেশ চাঙ্গা অনুভব করলেও পরক্ষণে র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা তুলতে দীর্ঘ প্রক্রিয়া পার হতে হবে বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের মন্তব্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। 

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা খবর আসে গত বছর ডিসেম্বরে। এমন খবরে দেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে যেমন তেমনি সরকারি দলে দেখা দেয় নানান ধরনের হতাশা। চারিদিকে নানান ধরনের গুজবের ডালপালা মেলে। রাজনীতিতে এক ধরনের গুমোট ভাব দেখা দেয়। আর এমন পরিস্থিতিতে দেশের অন্যতম বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্যরা বেশ মাঠ দাবড়িয়ে বেড়ায়। তবে অন্যদিকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় বিষয়টিকে নিয়ে তাদের নেতাকর্মীদের নানানভাবে বুঝিয়েছে দলের সভানেত্রী সব সমস্যার সমাধান করে ফেলবেন। কিন্তু তারপরেও নানান শঙ্কা বিরাজ করে সরকার ও দলের ভেতরে ও রাজনৈতিক অঙ্গনে।

 তবে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) তাদের ‘বৈশ্বিক প্রতিবেদন ২০২২’ প্রকাশ করে। সেখানে বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে বলা হয়, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন ও গুমের বিষয়ে ২০২১ সালে জাতিসংঘ, দাতা দেশ এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর উত্থাপিত উদ্বেগ খারিজ করে দিয়েছে। বলা হয়েছে সরকার ২০২১ সালে এটা পরিষ্কার করে দিয়েছে যে এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো ইচ্ছাই তাদের নেই। 

মোট কথা সরকারের পক্ষ থেকে টু-শব্দ হয়নি। এমন খবরে সরকারের ভেতরে বাইরে আবারো নানান ধরনের শঙ্কা বিরাজ করে। এমনি সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাদ দিতে ১২টি সংস্থা জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে ল্যাকবুয়াকে দেয়া চিঠিতে তোলপাড় শুরু হয। 

সব মিলিয়ে বলা যায় সরকারি দলের ভেতরে বাইরে একের পর শঙ্কা আর হতাশা দেখা দেয়। রাজনীতির অঙ্গনে এক ধররনের গুমোট পরিস্থিতি চলতেই থাকে। জানা গেছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে প্রথমে সরকার গুরুত্ব দেয়নি। নিয়েছিল বেশ হালকাভাবেই। পরে সরকার বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে দৌড় ঝাপ শুরু করে। 

শোনা যায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে সরকার। এ জন্য প্রতি মাসে ২০ হাজার ডলার (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসেবে ১৭ লাখ টাকা) খরচ হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এ তথ্য জানিয়েছিলেন গণমাধ্যমে। এতেই বোঝা যায় সরকার বিষয়টিকে প্রথমে পত্তা না দিলেও পরে কতোটা গুরুত্ব দিয়েছে। এরপর ওসরকার যুক্তরাস্ট্রের মন গলাতে নানান ধরণের পদক্ষেপও নেয়। 

এর মধ্যে সর্বশেষ ছিল ইউক্রেনের পক্ষে বাংলাদেশের ভোট দেয়ার সিদ্ধান্তটিও আলোচনায় আসে। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার জেরে সৃষ্ট মানবিক সংকট নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রশ্নে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আনা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রস্তাবটি ১৪০ ভোটে পাস হয়েছে। সরকারের এমন পদক্ষেপে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বেশ চাঙ্গা বোধ করে যে তারা সহসাই আবারো যুক্তরাষ্ট্রের নেক নজরে পড়ছেন। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার ও তার দলের নেতাকর্মীরা আরো চাঙ্গা হয়ে উঠে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লেখা চিঠির খবরে। চিঠিতে বলা হয় আগামী ৫০ বছরে ওয়াশিংটন ও ঢাকার মধ্যে অংশীদারিত্ব আরও বাড়ানোর ব্যাপারে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০ বছরের মাইলফলক পালন উপলক্ষে লেখা ওই চিঠিতে তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে আমাদের অংশীদারিত্ব আগামী ৫০ বছর এবং তার পরও বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। অন্যদিকে, কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষে এক ভিডিও বার্তায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক আরও গভীর হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনকে একটি চিঠিও দিয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন আওয়ামী লীগ ও সরকারে ব্যাপক তোলাপাড় সৃষ্টি করে। 

এনিয়ে বিএনপি’তেও দেখা দেয় হতাশা। কারণ বিএনপি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা খবরের পর স্বপ্নে বিভোর তারা রাজনীতিতে বেশ ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। তারা খুব তাড়াতাড়ি সরকারের ক্ষমতাসীন হতে যাচ্ছে। অনেকে হাসি তামাশা করে বলতে শোনা যায় বিএনপি মন্ত্রী পরিষদও গঠন করে ফেলেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লেখা চিঠির খবরে তাদের মধ্যেও হতাশা দেখা দেয় যে আওয়ামী লীগ সরকার সব ম্যানেজ করে ফেলেছে।

 অন্যদিকে আওয়ামী লীগে দেখা দেয় ফুরফুরে ভাব। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে গত ৪ এপ্রির এমন খবরে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বলতে শোনা গেছে সরকার আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে তাদের শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। তবে পরের দিন অথ্যাৎ ৫এপ্রিল পরিস্থিতি পাল্টে যায় আরেক খবরে। এতে বলা হয় র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা তুলতে দীর্ঘ প্রক্রিয়া পার হতে হবে। ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কের সাথে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। 

এর পাশাপাশি জানানো হয় যে দায়িত্ব পালনকালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) জবাবদিহি নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দুই দেশের কূটনৈতিক সর্ম্পকের ৫০ বছর পূর্তিতে গত ৪ এপ্রিল সোমবার দুপুরে পররাষ্ট্র দপ্তরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে আমি খুশি হব । এর জবাবে    অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, বলেছি। প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটা একটি প্রক্রিয়াগত বিষয়। 

শেষ কথা

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা খবরে স্বস্তি আসে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মধ্যে। তারা ধরে নেয় এখন আর কথায় কথায় তাদের মিছিল মিটিংয়ে আইন শংখলা বাহিনী কঠোর হতে পারবে না, চালাতে পারবে না গুলি। আবার রাতের আধারেও ধরে নিতে বিপত্তি আছে তাদের। ফলে র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা তুলতে দীর্ঘ প্রক্রিয়া পার হওয়ার খবরে তারা চাঙ্গা। 

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে আশার আলো দেখা দিয়েছিল সরকার সব ম্যানেজ করে নিতে পারবে। র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা তুলতে দীর্ঘ প্রক্রিয়া পার হতে না সরকারকে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা তুলতে দীর্ঘ প্রক্রিয়া পার হতে হবে বলে প্রকাশিত এমন খবরটি রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। সামনের দিনে দেখা যাবে এমন খবরের রাজনৈতিক অঙ্গনে আসলে কি হতে যাচ্ছে। 


শেয়ার করুন