২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৫:৪৮:৪৫ অপরাহ্ন


জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে শালি
পানিতে ডুবে শালা-দুলাভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৯-২০২২
পানিতে ডুবে শালা-দুলাভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু পানিতে ডুবে শালা-দুলাভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।


অবকাশ যাপনে গিয়ে লেকের পানিতে ডুবে প্রাণ হারালেন দুই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি। এ ঘটনায় আরেকজন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। তারা সবাই একই পরিবারের। মারা গেলে শালা এবং দুলাভাই। শালি এখনো মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। জানা গেছে, নিউইয়র্ক আপস্টেটে বেথেল টাউনের হোয়াইট লেকে (সমুদ্র সংলগ্ন) স্থানীয় সময় গত ২৮ আগস্ট দুপুরে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন যুক্তরাষ্ট্রস্থ কুমিল্লা জেলার বড়োরা উপজেলা এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা নিউইয়র্ক সিটির বেলরোজের বাসিন্দা রুহুল আমীনের (পেড্ডা গ্রাম অধিবাসী) জামাতা আফরিদ হায়দার (৩৪) ও ছোট ছেলে বাছির আমীন (১৮)।  ঘটনাস্থল থেকে রুহুল আমিনের ছোট মেয়ে নাসরিন আমীনকে (২১) গুরুতর অবস্থায় নিকটস্থ গারনেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আফরিদ হায়দার বাবা মায়ের এক সন্তান। তিনি এস্টোরিয়া নিবাসী আরজু হায়দারের ছেলে। মাত্র কয়েক মাস তিনি বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু নিয়তির কী নির্মম পরিহাস, নব বধূকে রেখেই তিনি চলে গেলেন।

নিউইয়র্ক সিটি থেকে ১২০ মাইল দূর সুলিভান কাউন্টি দমকল বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৩ ব্যক্তি ডুবে যাবার সংবাদ জানার পরই ডুবুরিরা উদ্ধার অভিযান চালায় এবং তিনজনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। চিকিৎসকরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েও আফরিদ এবং বাছিরকে বাঁচাতে পারেননি।

পরিবার- পরিজন নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন তারা। ঐ পরিবারের বড় ছেলে ফারুক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, আমি, আমার স্ত্রী, আমার বাবা, বা, আমার বোন, তার স্বামী, আমার ছোট ভাই এবং ছোট বোন সবাই এক সাথে গিয়েছিলাম। লেকের পাড়ে একটি বাড়ি আগে থেকেই ভাড়া করে রেখেছিলাম। আমরা ২৭ আগস্ট সেখানে যাই। পরদিন অর্থাৎ ২৮ আগস্ট রোববার সকালে নাস্তা গ্রহণের পর নৌকা নিয়ে লেকে নামি। আমার দুলা ভাই, আমার বোন ও ভাই একই নৌকায় ছিলেন। তারা ২০ থেকে ২৫ মিনিট দূরত্বে যায়। আমি আমার স্ত্রীসহ অন্য একটি নৌকায় ছিলাম। তাদের থেকে ১০-১৫ ফিট দূরত্বে। আমার দুলা ভাই আফরিদ হায়দার পানিতে নামেন। বুক পর্যন্ত পানি ছিলো। কিছুক্ষণ পর আমার বোন চিৎকার করতে থাকে এবং আমাকে ডাকতে থাকে। আমি চেষ্টা করছি তাদের কাছে যাওয়ার জন্য। আমি পৌঁছার আগেই আমার ছোট ভাই বাছির আমিন পানিতে ঝাম্প করে। সে সাঁতার জানতো না। কিন্তু কীভাবে সে ঝাম্প দিলো তা আমার মাথায় ঢুকছিলো না। এরই মধ্যে আমার ছোট বোন নাসরিন আমিনও পানি ঝাপ দেয়। সেও সাঁতার জানে না। আমি অনেক কষ্টে তাদের কাছে আসি। আমি পানি ডুব দিয়ে একজনকে উঠানোর চেষ্টা করি কিন্তু আমি নিজেও যেন ডুবে যাচ্ছি। এক সময় আমি শ্বাস নেয়ার জন্য উপরে আসি। শ্বাস নিয়ে আবারো চেষ্টা করি কিন্তু তাদের কাউকেই উঠাতে পারলাম। আমি অনেক চেষ্টা করেছি। হেলফ হেলফ বলে সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার করতে থাকি। আমার বাবা মাও চিৎকার করতে থাকে। কোথাও তাদের দেখা যাচ্ছে না। পাশের বাড়ির একজন মহিলাও এগিয়ে আসেন। উদ্ধারকারী দল আসার পর প্রায় ৫০ মিনিটের মধ্যে সবাইকে উদ্ধার করা হয়। তাদের স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা অবস্থায় আমার ছোট ভাই এবং দুলা ভাই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আমার বোনকে আরেকটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। সে এখনো জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে।

সর্বশেষ সংবাদ অনুযায়ী নিহত ভগ্নিপতি ও শ্যালকের জানাজা স্থানীয় সময় গত ২৯ আগস্ট বাদ এশা এস্টোরিয়ার আল আমিন মসজিদে প্রথম জামাত এবং ৩০ আগস্ট মঙ্গলবার বেলা দেড়টায় জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। এরপরই দাফন করা হয় লং আইল্যান্ডে ওয়াশিংটন মেমরিয়্যাল মুসলিম গোরস্থানে। এই মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে পুরো বাংংলাদেশী কম্যুনিটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে।

শেয়ার করুন