২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০১:৫১:৫২ অপরাহ্ন


জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বক্তারা ॥ আ.লীগের অনুষ্ঠান ছিলো না
শেখ কামালের অবদান চিরস্মরণীয়
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৮-২০২২
শেখ কামালের অবদান চিরস্মরণীয়


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হয়। শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কোনো অঙ্গসংগঠন অনুষ্ঠান করেনি। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা এখন বাংলাদেশে রয়েছেন। তারা নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত।

দলের কোনো কর্মসূচির প্রতি তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এই নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠন কোনো অনুষ্ঠান না করলে ওয়াশিংটন বাংলাদেশ দূতাবাস, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থানীয় মিশন এবং নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী পালন করেছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিলো শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় বক্তরা বলেন, শেখ কামাল ছিলেন তারুণের অহংকার এবং অনুকরণীয় একজন মানুষ। তার অবদান বাংলাদেশে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

ওয়াশিংটন বাংলাদেশ দূতাবাস

ওয়াশিংটন ডিসিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী গত ৫ আগস্ট যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়।সমাজ ও জাতির উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের ক্রীড়া ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে শহিদ শেখ কামালের অসামান্য অবদানের স্মরণে দূতাবাস বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন মিনিস্টার (ইকোনোমিক) মো. মেহেদি হাসান এবং মিনিস্টার (পলিটিক্যাল) দেওয়ান আলী আশরাফ। পরে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনায় অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. সহিদুল ইসলাম মহান মুক্তিযুদ্ধ ও  যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন এবং দেশের ক্রীড়া ও সংস্কৃতির উন্নয়নে শহিদ শেখ কামালের অসামান্য অবদানের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।রাষ্ট্রদূত ইসলাম বলেন, শেখ কামাল ছিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী এবং একজন তারুণ্যের রোলমডেল। তিনি বলেন, খেলাধুলা, সংগীত, নাটকসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে শহিদ শেখ কামালের অবদান দেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

রাষ্ট্রদূত ইসলাম আশা প্রকাশ করেন, শহিদ শেখ কামালের আদর্শ অনুসরণ করে দেশের তরুণ প্রজন্ম ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যাবে।

আলোচনায় আরো অংশ নেন ডেপুটি চিফ অব মিশন ফেরদৌসি শাহরিয়ার, মিনিস্টার (ইকোনোমিক) মো. মেহেদি হাসান ও মিনিস্টার (প্রেস) এজেডএম সাজ্জাদ হোসেন। কাউন্সেলর এবং হেড অব চ্যান্সেরি মো. মাহমুদুল ইসলাম অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।

আলোচনা শেষে শেখ কামালের জীবন ও কর্মের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে শহিদ শেখ কামাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তাদের পরিবারের শহিদ সদস্যদের এবং অন্যদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।এর আগে রাষ্ট্রদূত শহিদ শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তার প্রতিশ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ মিশন

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে গত ৫ আগস্ট যথাযোগ্য মর্যাদায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে জাতির পিতার পরিবারের সকল শহিদ সদস্যদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ এবং শেখ কামালের জীবন ও কর্মের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠানটিতে মূল বক্তব্য প্রদান করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত। তিনি বলেন, শেখ কামাল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল এবং আধুনিক একজন বাঙালি। তিনি ছিলেন সাধারণের মধ্যে অসাধারণ। অমায়িক ব্যবহার, মানবিক গুণাবলি এবং সাংগঠনিক দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি অসংখ্য সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তিনি ছিলেন আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা, ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, স্বাধীন বাংলাদেশে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন আন্দোলনের একজন পুরোধা। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই ক্ষণজন্মা তরুণ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে দেশের যুবসমাজকে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন।

স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশে যে অসামান্য অগ্রগতি সাধন করেছে, তার মধ্য দিয়েই বাস্তবায়িত হচ্ছে স্বপ্নদর্শী তরুণ শেখ কামালের স্বপ্ন।রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, নিজস্ব চিন্তাধারা, সৃজনশীলতা, মেধা ও রুচির সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটিয়ে জাতি গঠনে শহিদ শেখ কামাল যে অনন্য ভূমিকা রেখে গেছেন তা যুবসমাজের জন্য অনন্তকাল ধরে অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবে।

উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে মিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বক্তব্য রাখেন। শহিদ শেখ কামালের জীবন ও কর্মের নানাদিক উঠে আসে উন্মুক্ত আলোচনায়। শেখ কামালের আদর্শ ধারণ করে দেশের যুবসমাজ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে আরো উচ্চতর আসনে তুলে ধরবে মর্মে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বক্তারা।

বাংলাদেশ কনস্যুলেট

নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটেগত ৫ আগস্ট যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শহিদ শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করে। অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সামাজিক, সাস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং বাংলাদেশ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম উপস্থিত সকলকে নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেন। অনুষ্ঠানে শহিদ শেখ কামালের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্রপ্রদর্শন করা হয়। জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য শহিদ সদস্যসহ সকল শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এবং দেশের অব্যাহত সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। কনসাল জেনারেল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ শেখ কামালের জীবন সম্বন্ধে আলোচনাকালে কনসাল জেনারেল মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের ক্রীড়া ও সংস্কৃতির উন্নয়নে তিনি অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেন বলে তিনি যোগ করেন। কনসাল জেনারেল আরো বলেন, বহুমুখী প্রতিভার  অধিকারী শহিদ শেখ কামালের কর্মময় জীবন ও আদর্শ সবসময় আমাদের কাছে, বিশেষ করে যুবসমাজের কাছে অনুপ্রেরণার এক অবিরাম উৎস হয়ে থাকবে। কনসাল জেনারেল শেখ কামালের কর্মময় জীবন ও বাংলাদেশের ক্রীড়া, শিল্প-সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে তাঁর অবদান সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে অবহিত করার জন্য উপস্থিত সকলকে আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত শহিদ শেখ কামালের স্ত্রী শহিদ সুলতানা কামালের বড় বোন খালেদা রহমান টেলিফোনে সংযুক্ত হয়ে স্মৃতিচারণ করেন। অন্যান্য বক্তারা শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের আলোকিত জীবন ও কর্মের ওপর স্মৃতিচারণ ও আলোচনা করতে গিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনে তাঁর অবিস্মরণীয় অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।

 

শেয়ার করুন