০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৯:০১:৫৪ পূর্বাহ্ন


দেশকে মফিজুল ইসলাম খান কামাল
অবশ্যই এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবো
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৯-২০২২
অবশ্যই এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবো মফিজুল ইসলাম কামাল


ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরামের প্রেসিডিয়ামের সদস্য মফিজুল ইসলাম কামাল বলেছেন যে কোনো পদ্ধতিতেই হোক না কোনো আমি এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবো। যাবোই না কেন? বর্তমান সরকারের অধীনে গণফোরাম নির্বাচনে অংশ নেবেই। 

আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে গণফোরামের প্রেসিডিয়ামের সদস্য মফিজুল ইসলাম কামাল এসব কথা বলেন। দীর্ঘদিন ধরে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরামের কমিটি নিয়ে নানান ধরনের গুঞ্জন মাঠে ছিল। অবশেষে কমিটি ঘোষিত হয় জাতীয় প্রেসক্লাবের হলরুমে এক সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমে। ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে এই কমিটিতে ১৭ সদস্যের সভাপতি পরিষদ, কোষাধ্যক্ষ, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, ১৩ সদস্যের সম্পাদকম-লী, ৮ সদস্যের স্থায়ী পরিষদ ও ৩৭ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের নাম প্রকাশ করা হয়। নতুন এ কমিটির প্রেসিডিয়ামের অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য হলেন মফিজুল ইসলাম কামাল। সংবাদ সম্মেলন শেষে মফিজুল ইসলাম কামালের সাথে সাক্ষাৎকারটি নেয়া হয়। সাক্ষাৎকারটি নেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ। 


দেশ: দেশের পরিস্থিতি কেমন বলে মনে করেন?

মফিজুল ইসলাম খান কামাল: না না (একটু অবাক হয়ে ও কিছুটা ইতস্তত হয়ে)। দেশের পরিস্থিতি কেমন আর মনে করবো? এমনই তো চলছে (দীর্ঘ রাজনৈতিক অতীত ঘটনারবলির ইঙ্গিত করে)। এখানে খালি বিরোধিতা করার খাতিরে বিরোধিতার করার অর্থ নাই। সরকারের যথেষ্ট অ্যাচিভমেন্টও আছে এবং দেশের যে মেঘা প্রজেক্টগুলো আছে, বিশেষ করে নেত্রীর ( প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা) কথাই বলবো... কেবল আমরা সমালোচনার জন্য সমালোচনা করে লাভ নেই। কারণ আমরা সবাইকেই দেখছি। যারা যারা বড় বড় দল দাবি করে, তাদের ভেতরে কি আছে? কি চারিত্রিক বৈশিষ্ট? আমরা জানি সব..আর গণতন্ত্র? আহ...(একটু শ্লেচ সূচক হেসে) বললেন..বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরে যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে..তখন কোথায় গণতন্ত্র ছিল? জিয়াউর রহমান আমলে গণতন্ত্র ছিল? এরশাদ আমলে গণতন্ত্র ছিল? সবচেয়ে বড় কথা প্রত্যেক রাষ্ট্রে একটি হত্যাকা-ের পরে একটি সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা থাকে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে হত্যার পরে তার ভাইস প্রেসিডেন্ড জনসন ক্ষমতায় আসে। আমেরকিার সংবিধানেই আছে এবং তা বাস্তবায়ন তারা করেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরেও তো আমাদেরও তো সংবিধান ছিল। সংবিধান মোতাবেকতো সৈয়দ নজরুল ইসলামকে বসিয়ে দিলেই হতো। মোশতাক আসলো কোনখান থেকে? এই যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট হলো..এটাতো ’৭৫-এর পনের আগস্টের পর থেকে। সেখান থেকে আসতে আসতে জিয়াউর রহমান ‘হ্যাঁ’, ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা করলো। শতভাগ ভোট পেয়ে যান তিনি। এরশাদও তাই করেছে। ক্ষমতায় থাকার জন্য সবাই চেষ্টা করছে। অনেকে আনসাকসেসফুল হয়েছে। শেখ হাসিনা হানড্র্রেড পারসেন্ট সাকসেসফুল হয়েছেন। কাজেই এটা নিয়ে কথা না। কথা হলো জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণকে সচেতন করতে হবে। আমি কিন্তু এলাকায় গিয়া এগুলো বোঝাই। মানুষ যেন সচেতন হয়। মানুষের মধ্যে গণসচেতনতা থাকতে হবে। আমার একটা পত্রিকাও আছে (প্রতিবেদককে লক্ষ করে বললেন, বোঝালেন তার এই পত্রিকার মাধ্যমে ভোট কারচুপির ব্যাপারে গণসচেতনতা সৃষ্টি করছেন)।

দেশ: বর্তমান সরকারের আমলে কি একটা সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করেন? সম্ভব কি একটি গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচনের?

মফিজুল ইসলাম খান কামাল: অ্যা.. (কিছুটা তাচ্ছিল্যের সুরে বর্তমান পরিস্থিতিকে মেনে নেয়ার ইঙ্গিত)। যা হবার তাই হবে। এধরনের নির্বাচনই তো হয়ে আসছে (অতীতের নির্বাচনগুলির দিকে আবারো ইঙ্গিত করে)। দুই-তিনটা ছাড়া তো সবই একই রকমের হয়েছে। এ সরকার, ওই সরকার যায় আসে না..নির্বাচন হইতে হবে। হবে..একটা নির্বাচন। আশা করবো..(নিরপেক্ষতার) এবং জনগই এটা করবে আর কেউ না। 

দেশ: এ সরকারের অধীনে তাহলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাবেন?

মফিজুল ইসলাম খান কামাল: হ্যাঁ। অবশ্যই যাবো (খুব জোর দিয়ে)। 

দেশ: এটা কি আপনাদের দলীয় সিদ্ধান্ত? গণফোরামের সিদ্ধান্ত?

মফিজুল ইসলাম খান কামাল: নির্বাচন বিমুখ না আমরা। যাবোই...জনগণ দেখতেছে। গতবার আমি আমার এলাকায় নির্বাচন করেছি। ভালো ভোট পেয়েছি। তাই বলছি নির্বাচনে যাবোই.. 

এই প্রতিবেদক যখন মফিজুল ইসলাম খান কামালের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন তখন গণফোরামের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী দাঁড়িয়ে তা শুনছিলেন। সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় মফিজুল ইসলাম খান কামাল যখন বলেন এ সরকারের অধীনেই তার দল নির্বাচনে অংশ নেবে তখন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গণফোরামের একজন কর্মীই সাথে সাথে প্রশ্ন করেন...ভাই (মফিজুল ইসলাম খান কামালকে লক্ষ করে) এ সরকারের অধীনে তো নির্বাচনে যাবেন, কিন্তু ইভিএমে ভোট হলেও যাবেন? মফিজুল ইসলাম খান কামাল তখন আরো জোর দিয়ে বলেন, হ্যাঁ যাবোই। যে কোনো পদ্ধতিতেই হোক আমরা যাবো না কেন? বর্তমান সরকারের অধীনে গণফোরাম নির্বাচনে অংশ নেবেই (প্রশ্নকারীকে উদ্দেশ্য করে)। 

এখানে উল্লেখ্য, মফিজুল ইসলাম খান কামাল যখন দেশ পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে এমন কথা বলছেন তার ঠিক একটু আগে দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেন আগামী নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। কামাল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনী ব্যবস্থাকে আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত ও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের আপত্তি সত্ত্বেও কমিশন ইভিএমে ১৫০ আসনে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে তা দেশের জন্য এক ভয়ংকর অশনিসঙ্কেত। জাতি এই দুরবস্থা থেকে পরিত্রাণ চায়।’

দেশ: মফিজুল ইসলাম খান কামাল এমন বক্তব্য দেয়ার ক্ষমতা কি আপনার আছে? এটা কি দলের সিদ্ধান্ত?

মফিজুল ইসলাম খান কামাল: আমি অথোরাইজড না..এটা আমার ব্যক্তিগত মত। তবে গণফোরাম নিশ্চয়ই এর বাইরে না..(আবারো তার বক্তব্যকে জোর দিয়ে বললেন)।

দেশ: তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আপনার দাবি...

মফিজুল ইসলাম খান কামাল: অবশ্যই দাবি থাকবে..ধন্যবাদ ধন্যবাদ...(ব্যস্ততার কারণে আর প্রশ্ন করা যায়নি)

মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলাম খান কামাল ১৯৬৩ সালে বৃহত্তর ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ১৯৬৮ সালে জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হন। স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নিয়ে মুজিব বাহিনীর জেলা কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। মফিজুল ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-৩ (মানিকগঞ্জ-সাঁটুরিয়া) আসন থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৭৮ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৮১ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯২ সালে ড. কামাল হোসেন গণফোরাম গঠন করলে তিনি দলটিতে যোগ দেন। এ দলের নির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। গণমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। এর পাশাপাশি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১, ৮২ ও ৮৩ সালে তার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলো। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে তার পরিবারের একটি সুসম্পর্ক রয়েছে। তবে মাঝে তিনি গণফোরাম থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন।

শেয়ার করুন