২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০১:১৯:৬ অপরাহ্ন


ভূরাজনীতি ও জাতীয় স্বার্থে শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র সফর কতটা গুরুত্বপূর্ণ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৪-২০২৩
ভূরাজনীতি ও জাতীয় স্বার্থে শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র সফর কতটা গুরুত্বপূর্ণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য সফর  নানা কারণেই দেশের ভবিষ্যতের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তিনটি দেশ যুক্তরাষ্ট্র বলয়ের দেশ। তিনটি দেশই নানা কারণে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি, অর্থনীতি, ভূরাজনীতির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দেশ তিনটি বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং অর্থবহ হোক, তার জন্য ক্রমান্বয়ে প্রভাব বিস্তার করছে। যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশ চীনবিরোধী কোয়াড জোটে বাংলাদেশ যুক্ত হোক। ওরা আরো চায় বাংলাদেশ, বঙ্গোপসাগরে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানিকে গভীর সমুদ্রে গ্যাস তেল অনুসন্ধানের একক অধিকার প্রদান করুক। বাংলাদেশ কিন্তু বিগত দেড় দশক জুড়ে ভূরাজনৈতিক প্রভাব এড়িয়ে অনেকটা নিরপেক্ষ ভূমিকা বজায় রেখেছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ভারতের প্রচ্ছন্ন প্রভাব থাকলেও বাংলাদেশ কোনো জোটে যোগদান করেনি।  

বাংলাদেশের রাজনীতি বিশেষত নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের সমীকরণ এবং বিতর্ক আছে। বিগত ২০০৮ সালের ওয়ান ইলেভেনের পর সেনা প্রভাবিত নির্বাচন এবং ২০১৪ এবং ২০১৮ নির্বাচনের স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। একইভাবে বাংলাদেশের মানবধিকার, দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে অগণতান্ত্রিক উপায়ে কোণঠাসা করার নানান বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহল বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র নানাভাবে জোরালো মত প্রকাশ করে আসছে। জাপান, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশ একই ধরনের মনোভাব প্রকাশ করে আসছে। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ তিন দেশের সফর সম্পর্কের বরফ গলাবে কি না সেটি দেখার বিষয়। তিনি সম্প্রতি জাতীয় পার্লামেন্টে এই বিষয়ে তার অবস্থান সুস্পষ্ট করেছেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র  মন্ত্রীর সফরকালে নির্বাচন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সুস্পষ্ট মনোভাব এবং অবস্থান জানান হয়েছে। 

বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশের মতোই, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং জ্বালানিনিরাপত্তা সমস্যায় ভুগছে। ভুল কৌশলের কারণে ক্রমান্বয়ে আমদানিকৃত জ্বালানির ওপর ঝুঁকে পড়া বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়ে পড়েছে। নিজেদের কয়লা মাটির নিচে, জলে-স্থলে গ্যাস-তেল অনুসন্ধান সীমিত। এই মুহূর্তে সাগরে এবং স্থলভাগে গ্যাস-তেল দ্রুত উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশ যখন বিলম্বে হলেও বঙ্গোপসাগরে গ্যাস-তেল অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিয়েছে, তখন মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি এক্সন মোবিল গভীর সাগরের ১৫টি ব্লক বিনা টেন্ডারে ইজারা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। বিদ্যমান ভূরাজনৈতিক পরিবেশে বাংলাদেশ একক কোম্পানিকে বিনা টেন্ডারে গভীর সাগরে এতোগুলো ব্লক ইজারা দিলে স্বাভাবিক কারণে দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। 

জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার প্রস্তাবটি বিবেচনায় নিয়েছে। এছাড়া ১২, ১৩, ১৪ ব্লকে স্থলভাগে কর্মরত মার্কিন কোম্পানি শেভরন একই ব্লকসমূহে ইতিপূর্বে ছেড়ে দেওয়া এলাকায় নতুনভাবে কাজ করার পাশাপাশি ১১ ব্লকে কাজ করার প্রস্তাব দিয়ে নতুনভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এক্সন মোবিল বা শেভরনের বিশ্বজোড়া সুখ্যাতি অনস্বীকার্য। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিনা টেন্ডারে ব্লক আলোচনার ভিত্তিতে ইজারা দিয়ে সরকার বিতর্কে পড়বে নিশ্চিত। 

বাংলাদেশের অর্থনতিক উন্নয়নে চীন, জাপান, ভারত, রাশিয়া, কোরিয়া নানা অবকাঠামো উন্নয়নে নিবিড়ভাবে জড়িত। বিশেষত চীনের অর্থনৈতিক সহায়তায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো বা মেগা প্রজেক্টের উন্নয়নে জড়িত আছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়নে রাশিয়ার প্রভাব রয়েছে। যেহেতু সংগত কারণেই এ দুটি সেই তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের অংশগ্রহণ সীমিত। বাংলাদেশকে তাই এ ব্যাপারে রয়ে সয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া সমীচীন। 

জানা গেছে, শেখ হাসিনার সফরকালে ওয়াশিংটনে এক্সন মবিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং শেভরনের বাংলাদেশ অপারেশন প্রধান সৌজন্য বৈঠক করার সম্ভাবনা রয়েছে। শেখ হাসিনার এ সফরে আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়েও আলাপ হবে কি না জানা যায়নি। কিন্তু অয়েল মেজরদের সঙ্গে আলোচনাও নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এটা আর বলার অবকাশ রাখে না। বিশেষত গভীর সাগরে মার্কিন কোম্পানির বিশাল বিনিয়োগ সুরক্ষিত করতে, বাংলাদেশ যেন ভূরাজনৈতিক সংঘাতের চারণভূমি না হয়ে পরে সেটি বিবেচনা করা জরুরি। 

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় বলে আসছেন, বাংলাদেশ কোনো চাপের কাছে মাথা নত করবে না। কৌশলগত কারণে হলেও এ মুহূর্তে কতটা ছাড় দেবে বাংলাদেশ এখন সেটাই মুখ্য বিষয়। বাংলাদেশ কিন্তু এরই মধ্যে চীন, রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশের বিশাল দেনায় জড়িত। ফলে এসব বিষয়ও মাথায় রাখতে হচ্ছে এবং এসব বিষয়ে সবাইকে সন্তুষ্ট রেখেই গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত নেওয়াই শ্রেয়।

শেয়ার করুন