২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০২:৪২:৪৭ পূর্বাহ্ন


টি২০ বিশ্বকাপ : সূচনাতে অঘটন, কার ঘরে যাবে শিরোপা
বাজির ঘোড়া পাকিস্তান-ভারত
সালেক সুফী, অস্ট্রেলিয়া থেকে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-১০-২০২২
বাজির ঘোড়া পাকিস্তান-ভারত


অস্ট্রেলিয়ায় চলমান কোয়ালিফাইং রাউন্ড মূলত মূলপর্বে ওঠার লড়াই। আট দলের মধ্যে চলছে ওই লড়াই ভিক্টোরিয়া রাজ্যের জিলং আর তাসমানিয়ার হোবার্টে। আট দল দুই গ্রুপে ৪+৪ ভাগ হয়ে ওই  কোয়ালিফাইং রাউন্ড। বাকি ৮ দল অস্ট্রেলিয়া, ভারত, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ সরাসরি খেলবে মূল রাউন্ডে।  যখন এই প্রতিবেদন পাঠকের হাতে পৌঁছাবে তখন জানা হয়ে যাবে কোন চারটি দল মূল রাউন্ডের জন্য কোয়ালিফাই করেছে। 

২২ তারিখ থেকে শুরু হবে মূল রাউন্ডের খেলা। যা অস্ট্রেলিয়ার ৬টি মহানগরীর সাত ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে টি২০ বিশ্বকাপের অষ্টম আসর। এযাবৎ অনুষ্ঠিত ৭ বারের চ্যাম্পিয়নশিপে দুইবার জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া জিতেছে একবার করে। অস্ট্রেলিয়ায় ২০২০ সালে টি২০ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও হয়নি করোনা অতিমারির কারণে। ২০২১ প্রথমে ভারত, পরে  শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিতব্য টি২০ বিশ্বকাপ ইউআই আর ওমান যৌথভাবে আয়োজন করে। সেখানে ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে পরাজিত করে প্রথম বারের মতো শিরোপা জয় করে অস্ট্রেলিয়া। যারা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। 

এবারে কিন্তু ১৬ দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্বকাপ। যেখানে আইসিসির পূর্ণ সদস্য ১২ দলের সঙ্গে আছে নামিবিয়া, স্কটল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস এবং ইউএই চারটি অ্যাসোসিয়েট সদস্য দেশ। ওরা এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড শ্রীলংকার সঙ্গে লড়ছে দুই গ্রুপে মূল পর্বে অংশগ্রহণের জন্য। ইতিমধ্যে নামিবিয়া শ্রীলংকাকে আর স্কটল্যান্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে জমিয়ে দিয়েছে বিশ্বকাপ। ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে আরো কিছু অঘটনের। তবে হয়তো শ্রীলংকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঘুরে দাঁড়াবে। শীগ্রই পরিষ্কার হবে কোন ১২টি দল নিয়ে হবে সুপার ১২। 

টুর্নামেন্ট ফেভারিট কে? 

আপাতত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত এবং পাকিস্তান সেমিফাইনালে পৌঁছাবে।  তবে নিউজিল্যান্ড অথবা শ্রীলংকা (মূল পর্বে আসলে) সমীকরণ পাল্টে যেতে পারে। নিজের মাঠে  অস্ট্রেলিয়া যে কোনো সময় জয় সম্ভাব্য দল।  দলে আছে ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারন ফ্লিঞ্চের মতো তুখোড় ওপেনিং ব্যাটসম্যান। মার্শ, ম্যাক্সওয়েল, স্মিথ, স্টোনোইস ও ওয়াডের মতো মারকুটে ব্যাটসম্যান। পাশাপাশি স্টার্ক, কামিন্স, রিচার্ডসন, জাম্পা ও আগারের মতো ম্যাচজয়ী খেলোয়াড়ের সমাহার। তদুপরি ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া টুর্নামেন্টে টাইটেল রক্ষা করার জন্য দারুণভাবে প্রস্তুত। গ্রপে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড আছে। ইংল্যান্ড কঠিন দল হলেও নিউজিল্যান্ডকে কেন যেন নড়বড়ে মনে হচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ার পর আলোচনায় আসবে ইংল্যান্ড দল। গত কিছু দিন ধরে ইংলিশরা সব ফরম্যাটে ভালো খেলছে।  নিউজিলান্ডে জন্ম নেয়া বেন স্টোকস নেতৃত্ব নেয়ার পর পাল্টে গেছে দলের দৃষ্টিভঙ্গি। গ্রুপ পর্যায়ে বাধা হবে নিউজিল্যান্ড। বাটলার, হেলস, বেয়ারস্টো, স্টোকস, মঈন আলী, লিভিংস্টোন, মালান ও কুরান যে কোনো কেউ এককভাবে ব্যাটিং করে ম্যাচ জয় করার দক্ষতা রাখে। মার্ক উড, ক্রিস ওয়াক্স, জর্ডান, মঈন আলী, কুরান, আদিল রাশিদ সম্মিলিতভাবে শক্তিশালী বোলিং ইউনিট। আমি সেমিফাইনাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের পথ মসৃন দেখতে পাই। তবে আমি মনে করি বাজির ঘোড়া পাকিস্তান আর ভারত। দুটি দল অত্যন্ত সমৃদ্ধ। কিন্তু দুটি দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে যে দল জয়ী হবে তাদের গ্রুপের সেরা হয়ে সেমি ফাইনালে যাবার পথ মসৃন হবে। গ্রুপের ওপর শক্তিশালী দল দক্ষিণ আফ্রিকাকেও গোনায় রাখতে হবে। জাসপ্রেত ভোমরা আহত হওয়ায় ভারতের বোলিং শক্তি কিছুটা কমেছে। ভোমরার স্থলে প্রতিস্থাপক হিসাবে মোহাম্মদ সামি অবশ্যই তুখোড়। কিন্তু ভোমরা ফ্যাক্টর।  ভারতের শক্তি ব্যাটিং। রোহিত, রাহুল, কোহলি, সূর্য কুমার যাদব, প্যান্ট, পান্ডিয়া, কার্তিক,  কাকে ফেলে কাকে খেলাবে ভারত। তবে ভোমরার অনুপস্থিতে ভুবনেশ্বর কুমার, সামী, সিরাজ। পান্ডিয়া, অশ্বিন, তুলনামূলকভাবে পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা আক্রমণ থেকে পিছিয়ে থাকবে। ২০২১ বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচেই ভারতকে উড়িয়ে দিয়েছিলো পাকিস্তান। পরের ম্যাচে হেরে ছিটকে পড়েছিল ভারত। 

পাকিস্তান দল কিন্তু এখন দারুণভাবে প্রস্তুত। শাহীন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহ, হারিস রউফ অস্ট্রেলিয়ান উইকেটে আগুন ঝরাবে। শাদাব খান, মোহাম্মদ নেওয়াজ স্পিনার হিসাবেও কার্যকরি। দলে মোহাম্মদ ওয়াসিম, মোহাম্মদ হাসনাইনের মতো ব্যাক আপ বলার আছে।  বিশ্ব জানে বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান এখন বিশ্ব সেরা ওপেনিং জুটি। শেষ মুহূর্তে ফখর আযমের অন্তর্ভুক্তি টপ অর্ডারকে সংহত করেছে। সম্প্রতি শেষ হয় তিন জাতি টুর্নামেন্টের ফাইনাল জিতেছে পাকিস্তান ইফতিখার ও হায়দার আলীর নৈপুণ্যে। শ্লগ ওভার খেলার জন্য আসিফ, কুশদিল আছে। পাকিস্তান সেমিফাইনালে পৌঁছালে মেলবোর্ন শেষ হাসি পাকিস্তান হাসলে অবাক হবো না। 

কথা হলো টি২০ ফর্মেটে যেখানে সমশক্তির দুটি দলের খেলায় খেলার দিন যেই কোনো কিছুই ঘটতে পারে। স্বাভাবিক বিচারে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, ভারত সেমি ফাইনালে ওঠার কথা। ডার্ক হর্স হিসাবে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা আর নিউজিল্যান্ড। যদি পাকিস্তান- ইংল্যান্ড ফাইনাল হয় মেলবোর্নে সেটি হবে অনেকের কাঙ্খিত।  যদি হয় ভারত- পাকিস্তান তখন ক্রিকেট মহারণ দেখবে ক্রিকেট বিশ্ব একই বিশ্বকাপে দ্বিতীয় বার এমসিজিতে। 

বাংলাদেশ নিয়ে কিছু না বললে লেখাটি অপূর্ণ থাকে। আমার মনে হয় বাংলাদেশ টুর্নামেন্টে সবচেয়ে অপ্রস্তুত দল।  নানা এক্সপেরিমেন্টের মধ্যে চলছে দলটি। মেধাবী অভিজ্ঞদের অবজ্ঞা করে আনকোরা নবীনদের নিয়ে গড়া দল টুর্নামেন্টে একটি জয় পেলেও সৌভাগ্যবান ভাবতে হবে। পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে এঁটে ওঠার সম্ভব হবে না। নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ের মাঝ থেকে একটিকে পরাজিত করাও সহজ হবে না হয়তো। সাকিব, লিটন ছাড়া এই স্তরে খেলার মতো ব্যাটসম্যান নেই। এমন কন্ডিশনে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়া ছাড়াও দলে দুর্দান্ত পারফর্ম করা কোনো খেলোয়াড়ও নেই। সবই গড়পড়তা। বোলিং যুৎসই হচ্ছে না। ব্যাটিং তো একেবারেই সাদামাটা। অস্ট্রেলিয়া আসার আগে দুটি প্রস্তুতি সিরিজ খেলেছে দলটি। একটি ইউএইতে। সেটাতে বাংলাদেশের না ইউএই’র লাভ হয়েছে সেটা এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিউজিল্যান্ডের প্রতিটা ম্যাচেই ছিল সাদামাটা পারফরমেন্স। দলের কোনো খেলোয়াড়ের মধ্যে টি২০ ম্যাচের মেজাজ নেই। এ ফরম্যাট মানেই চার ছক্কার বাহারী সব মার। বাংলাদেশ দলে তো অমন হার্ট হিটার ব্যাটসম্যানই নেই। দু’তিনজন বলতে সাকিব লিটন, সৌম্য যা পারেন তাও সহযোগীদের ব্যার্থতায় উইকেট বাঁচিয়ে খেলতে হয়। সব মিলিয়ে ব্যাটিং কম্বিনেশন নিয়ে এখনও চলছে পরীক্ষা- নীরিক্ষা। প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচেও আফগানদের বিরুদ্ধে সে অবস্থা। তাহলে নিজেদের সঠিক স্থানে কবে ফিরিয়ে আনা হবে। নিজ মার্কে থেকে খেলোয়াড়রাই বা কখন সেট হবেন? এমন অবস্থায় দল জয়ের মুখ দেখে না সাধারষত। খুশি হবো যদি আমি ভুল প্রমাণিত হই।

শেয়ার করুন