২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০১:৪৮:১১ অপরাহ্ন


টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা অনিশ্চিত
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-১২-২০২৩
টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা অনিশ্চিত


প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহ সংকট ঘনীভূত হতে থাকায় টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দেশের গ্যাস, দেশের কয়লা জরুরিভিত্তিতে অনুসন্ধান করে জ্বালানি মিক্সে অবদান নিশ্চিত না করা হলে কোনোভাবে জ্বালানি খাতকে হাবুডুবু খাওয়া অবস্থা থেকে রক্ষা করা যাবে না। ২০০৫ আগস্টে প্রবাসী হওয়ার সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি মিক্সে দেশীয় জ্বালানির অবদান ছিল ৯০ শতাংশ। ২০২৩ অপরিণামদর্শী কৌশলে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে দেশীয় জ্বালানির অবদান দাঁড়িয়েছে ৫৫ শতাংশ। 

টালমাটাল বিশ্ব জ্বালানি বাজার থেকে তেল, এলএনজি, তরল জ্বালানি উঁচু মূল্যে কেনার সামর্র্র্থ্য নেই বাংলাদেশের। প্রমাণিত গ্যাস মজুদ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। গ্যাসের সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উঁচু মূল্যের আমদানিকৃত ফার্নেস অয়েল নির্ভরতা বাড়ছে। উঁচু মূল্যের কারণে কয়লা আমদানি বিঘ্নিত হচ্ছে। অথচ আমলা নিয়ন্ত্রিত পেট্রোবাংলা না পেরেছে কয়লা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে, না পেরেছে জলেস্থলে গ্যাস অনুসন্ধান করে গ্যাসের মজুত বাড়াতে। এখন দেখছি বিদেশ থেকে পাইপলাইনে গ্যাস এবং ভাসমান টার্মিনাল ব্যবহার করে এলএনজি আমদানির তোড়জোড়। এমনিতেই তহবিল কূন্য থাকায় পেট্রোবাংলা আইওসির গ্যাসের মূল্য এবং এলএনজি সরবরাহকারীদের এলএনজি মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না। পেট্রোবাংলা কোম্পানিগুলো বিপিডিবি এবং বিসিআইসি থেকে গ্যাস বিক্রি বাবদ অর্থ পাচ্ছে না। পেট্রোবাংলার আন্তঃসংস্থা লেনদেনের একই অবস্থা। এমনি অবস্থায় বিদেশ থেকে পাইপলাইনে গ্যাস আমদানি এবং আমদানিকৃত এলএনজি নির্ভরতার দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জ কীভাবে সামাল দিবে পেট্রোবাংলা?

বাংলাদেশের গ্যাস সেক্টরের বয়স, কিন্তু দেশের ৫২ বছর থেকেও বেশি। অনেক মেধাবী গ্যাস সেক্টর কর্মকর্তা এখনো দেশে-বিদেশে পেশাদার কাজে সম্পৃক্ত আছে। তাদের অনেকেই গ্যাস সেক্টরে সম্পৃক্ত হয়ে গ্যাস সেক্টরের সংকট মুহূর্তে অবদান রাখতে পারেন। নির্বাচনের পর নতুন সরকারের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সেই কাজ সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত আমলাদের দিয়ে অর্জন অসম্ভব। বর্তমান সরকারের ১৫ বছর সময়ে অতিরিক্ত আমলা-নির্ভরতা পেট্রোবাংলা এবং গ্যাস সেক্টরকে পঙ্গু করে ফেলেছে। কয়লা উত্তোলন হয়নি, জলেস্থলে গ্যাস অনুসন্ধান উত্তোলন হয়েছে সীমিত। ভারত থেকে গ্যাস আমদানির পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে দেশের প্রাথমিক জ্বালানি অনুসন্ধান অবজ্ঞা করা হয়েছে অভিযোগ করা হলে জোরেশোরে খ-ানো যাবে না। কেন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো? কি বলবেন দেশপ্রেমিক বোদ্ধা গোষ্ঠী? 

আমি সুপারিশ করবো পেট্রোবাংলা এবং কোম্পানিসমূহে প্রাক্তন অভিজ্ঞ কারিগরি কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করার। পেট্রোবাংলা এবং কোম্পানি বোর্ডসমূহে মন্ত্রণালয়ের আমলাদের রেখে কি অর্জন হয়ে গত ১৫ বছরে? কেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এবং কয়েকজন পরিচালক পদে মন্ত্রণালয় থেকে কর্মকর্তা পাঠাতে হবে? পেট্রোবাংলা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর দর্শন থেকে কেন সরকার বিচ্যুত? আগামী সরকার যদি সত্যিকার অর্থেই গতিশীল গ্যাস সেক্টর দেখতে চায়, তাহলে অবিলম্বে পেট্রোবাংলা এবং কোম্পানি পরিচালকম-লীসমূহে প্রাক্তন অভিজ্ঞ গ্যাস সেক্টর পেশাদারদের সম্পৃক্ত করা জরুরি। না হলে দেশের কয়লা এবং দেশের গ্যাস মাটির নিচে রয়ে যাবে। পেট্রোবাংলা এবং কোম্পানিসমূহ নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবে।

শেয়ার করুন