২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ১১:৩৮:০২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


রাসুল (সা.)-এর চন্দ্রমাসের ১৫ তারিখের ইবাদত
শবেবরাতের ইবাদত
ড. এম এম আদেল
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০২-২০২৪
শবেবরাতের ইবাদত


চন্দ্রের ১৩, ১৪, ও ১৫ তারিখে রোজা রাখার তাগিদ

প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখা বড় পুণ্যের কাজ। আবুজর গিফারী বর্ণনা করেছেন: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ও আবুজর, তুমি যদি রোজা রাখো চন্দ্র মাসের যে কোনো অংশে, তারপর রোজা রাখো মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে।’ (Narrated by al-Tirmidhi (761); al-Nasai (2424)।

আয়েশা (রা.) উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে, মাসের যে কোনো অংশে (প্রথম, মধ্য বা শেষে) একনাগাড়ে বা ফাঁক ফাঁক দিয়ে তিনটি রোজা রাখা যেতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) কোন নির্দিষ্ট সময়ের কথা বলেননি। তবে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা উত্তম। Narrated by Muslim, (1160).

আবুজর গিফারী বলেছেন: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখবে, সে যেন সারাটা বছর রোজা রাখলো। তারপর আল্লাহপাক কোরআনে এরশাদ করেছেন প্রতিটা সৎ কর্মের জন্য ১০টি নেকি।’ (Ibn Majah and at-Tirmithi)

সহজ হিসাবে বোঝা যায় যে, তিনটি রোজায় ৩০টি নেকি মিলবে আর ১২ মাসে ৩৬০টি নেকি জুটবে। 

জারির ইবনে আব্দুল্লাহ বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: মাসে তিনটি রোজা রাখা সারাজীবন রোজা রাখার মতো, আর আইয়্যাম আল-বিড হচ্ছে মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ। Narrated by al-NasaaÕi, 2420; classed as sahih by al-Albaani in Sahih al-Targheeb, 1040)

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন: আমার কাছের বন্ধু (রাসুলুল্লাহ (সা.)) আমাকে উপদেশ দিয়েছেন তিনটি জিনিস করতে যা আমি মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত করবো: প্রতি মাসে তিনটি রোজা রাখা, দুহা নামাজ আদায় করা, আর বেতেরের নামাজের পর ঘুমান। (Narrated by al-Bukhaari, 1124; Muslim, 721)

দুহা নামাজ ফজর ও জোহরের মধ্যবর্তী সময়ে পড়তে হয়। সময় শুরুর প্রথমে পড়লে এটাকে ইশরাক নামাজ বলা হয়। এটা ঐচ্ছিক নামায়। এটা গুনাহ মাফ করে আরেক ধরনের সদকার কাজ করে থাকে।

শাবান মাসের মর্যাদা

হাদিসে প্রচলিত আছে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে, শাবান তার মাস, রজব আল্লাহর মাস, আর রমজান তার উম্মতের মাস, শাবান প্রায়শ্চিত্যের মাস আর রমজান বিশুদ্ধিকরণের মাস। 

হাদিসের কার্যকারিতা ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শাবানে কর্মব্যস্ততা বিচার না করে একে কেউ কেউ দুর্বল হাদিস মনে করেন। কারণ এই হাদিসের বর্ণনাকারীদের মধ্যে রয়েছেন আবু বকর ইবনে আল-হাছান, যিনি বানোয়াট বা জালিয়াতের মধ্যে গণ্য ছিলেন। আরো এই যে এর মধ্যে একজন অপরিচিত আল-কিসাই রয়েছেন যার নাম Al-La'ali' fy Al-Mawdu`at [reference book about fabricated Hadiths]. (Part No. 3; Page No. 208)-তে উল্লেখ রয়েছে।

আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) রোজা রাখতেন ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা মনে করতাম উনি রোজা রাখা বন্ধ করবেন না আর উনি (সা.) রোজা রাখতেন না যতক্ষণ আমরা মনে করতাম উনি রোজা রাখবেন না। আমি ওনাকে (সা.) রমজান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে সম্পূর্ণ মাস ধরে রোজা করতে দেখিনি আর শাবান মাসের মতো এতো বেশি রোজা অন্য কোনো মাসে রাখতে দেখিনি। (Narrated by al-Bukhari, 1868; Muslim, 1165) 

আবু সালামাহ বর্ণনা করেছেন যে, আয়েশা (রা.) বলেছেন: রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের মতো এতো বেশি রোজা অন্য কোনো মাসে (রমজান ছাড়া) রাখতেন না; কোনো কোনো সময় শাবানের গোটা মাস রোজা রাখতেন। আর ভালো কাজ করার উপদেশ দিতেন এই বলে যে, আল্লাহ তায়ালা আমাদের পুরস্কৃত করতে ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ আমরা ক্লান্ত না হই। নাছোড়বান্দা হয়ে ইবাদত করা তার কাছে প্রিয় ছিল, সে ইবাদত যতই ছোট হোক। যখন তিনি ইবাদত করতেন, তিনি এমন করেই লেগে থাকতেন। (Narrated by al-Bukhari, 1869; Muslim, 782) 

যে মাসে রাসুলুল্লাহ এতো ইবাদত করেছেন ও করার তাগিদ দিয়েছেন, সেই মাসকে আমরা যথাযথই বলতে পারি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাস। উনি (সা.) যদি না-ও বলে থাকেন (হাদিস হিসেবে গণ্যের জন্য), আমরা তাকে (সা.) কাজে তা করতে দেখেছি। উনার (সা.)-এর কাজকর্মকেও হাদিসরূপে নিতে পারি, শুধু মৌখিক তাগাদাই কেন হাদিস হবে?

উনি (সা.) রমজান মাসকে উম্মতের মাস বলেছেন। উম্মতের মাস তিনটি অংশ আছে, প্রথম ১০ দিন, দ্বিতীয় ১০ দিন ও তৃতীয় ১০ দিন। 

প্রথম ১০ দিন হচ্ছে রহমত ও বরকতের। প্রথম তৃতীয়াংশের দোয়া হচ্ছে: হে আমার প্রভু! ক্ষমা করুন ও করুণা করুন; আপনিই শ্রেষ্ঠ অনুকম্পশীল। (Quran 23:118)

দ্বিতীয় তৃতীয়াংশ হচ্ছে ক্ষমা প্রার্থনার। দোয়া হচ্ছে আমি আল্লাহর কাছে আমার পাপসমূহের মার্জনা চাই। তিনিই আমার প্রভু আমি তার দিকেই মনোনিবেশ করেছি।

শেষ তৃতীয়াংশ হচ্ছে দোজখ থেকে মুক্তি। এই মুক্তির দোয়া সব মুসলমানকেই করতে হবে। এই অংশেই পড়ে লায়লাতুল কদর। এই অংশে এতেকাফ করা হয়। 

এক সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) খুতবা দিতে মিম্বারে উঠতে ছিলেন। এমন সময় জিবরাইল (আ.) এসে তাকে (সা.) জানান, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে রমজান মাস পাওয়া সত্ত্বেও ক্ষমা অর্জন করতে পারলো না। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জবাবে ‘আমিন’ বলেছিলেন। এই বরকতপূর্ণ মাস বান্দার মঙ্গলের জন্য। অতএব এটা অবশ্যই একটা শক্তিশালী হাদিস।

রমজান মাসকে আল্লাহর মাস বলা হয়ে থাকে। কারণ এই রমজান মাসেই রাসূলুল্লাহ (সা.)কে আল্লাহর মহিমা দেখানোর জন্য স্বর্গীয় বাহক বোরাকে করে জিবরাইল (আ.) সমভিব্যাহারে মহাশূন্যের উচ্চতম স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে অতীতে মানুষের পদচারণা ঘটেনি আর ভবিষ্যতেও ঘটবে না। ২৭ রজব তারিখ মানব জাতির ইতিহাসের একটা অবিস্মরণীয় দিন। আল্লাহ তায়ালা আর কাউকে নিয়ে এমন অদ্বিতীয় ঘটনা ঘটাননি ও ঘটাবেন না। আল্লাহই শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। 

শাবান মাস প্রায়শ্চিত্তের মাস। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে, আল্লাহ তায়ালা ইসলামকে বিশেষ গুণে ও কর্মে সুশোভিত করেছেন। এগুলো হচ্ছে-আল্লাহকে ভয় করা, সামাজিক জীবনে আদান-প্রদান করা, উত্তম কাজ করা, মিষ্টি কথা বলা, উত্তম ব্যবহার করা, খাদ্যদান করা, সালাম প্রদান করা, অসুস্থের (পাপী হোক বা পূণ্যবান হোক) সেবা করা, জানাজায় অংশগ্রহণ করা, মুসলিম ও অমুসলিম প্রতিবেশীর যত্ন নেওয়া, দাওয়াত গ্রহণ করা, ক্ষমা করা, নিজেকে সংশোধন করা, দান করা, উদার মনের হওয়া, সালাম আদান-প্রদানে প্রথম হওয়া, ক্রোধ সংবরণ করা, সত্যবাদী হওয়া, সত্যবাদীকে মিথ্যা প্রমাণ না করা, পাপীজনের অনুগত না হওয়া, অব্যবহারে কোনো জমি নষ্ট না করা, ওয়াদা রক্ষা করা, অসাধুতা বর্জন করা, এতিমকে দয়া করা, কোরআনের জ্ঞান অর্জন করা, ইমান মজবুত করা, পরকালের চিন্তা করা, পাপকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া, জনসাধারণের সম্মুখে কৃত পাপকর্মের জনসাধারণের সম্মুখে ক্ষমা চাওয়া, উত্তম চরিত্রবান হওয়া। এই সমস্ত কর্মই আল্লাহর পুণ্যবান বান্দাদের। রমজান মাসে এসব ইবলিসি কর্মের কোনোটাই আমরা চিন্তা করতে পারি না। তাই এগুলো না করতে অভ্যস্ত হতে হবে রমজানের প্রস্তুতি শাবান মাসে। কৃত পাপকর্ম স্মরণ করে অনুশোচনা করা আর পুনরাবৃত্তির দৃঢ়সংকল্প নেওয়া এই শাবান মাস। এসব অনুশীলনে সফলকাম হলেই রমজানে বিশুদ্ধি অভিযান ফলপ্রসূ হয়ে থাকবে। 

১৫ শাবান অত্যন্ত বরকতপূর্ণ রাত। আলী (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ১৫ শাবান হলে রাতে ইবাদতের জন্য দাঁড়াও আর দিনে রোজা রাখ। এই দিনের পর আল্লাহ প্রথম আসমানে অবতীর্ণ হন আর বলেন: ক্ষমা চাওয়ার কেউ আছে, যাকে আমি ক্ষমা করতে পারি? কেউ ভরণপোষণের অনুসন্ধান করছে কি, যার ভরণপোষণ আমি করতে পারি? কেউ কি মানসিক ও শারীরিক কষ্টে আছে, যার কষ্ট আমি দূর করতে পারি? কেউ কি এমন, অমন আছে? এমনটা ফজর পর্যন্ত চলতে থাকে (Ibn Majah). 

এক সময় দেশে শবেবরাত উদযাপিত হতো বড়ই আনন্দের মধ্যে। সন্ধ্যার পর গ্রামের প্রতিটা পরিবার হালুয়া-রুটি ও তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে গ্রামের মোড়লের বহিরাঙ্গনে জমা হতো। সবাই একসঙ্গে বসে হালুয়া-রুটি ভাগাভাগি করে খেতো ও বাড়িতে নিয়ে যেতো। আবার কোনো পরিবার বহিরাঙ্গনে চাঁদোয়া খাটিয়ে সারারাত জেগে নফল নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করতো। ফরজ ও সুন্নত ইবাদতের পর নফল ইবাদত করা আল্লাহর নৈকট্য লাভের মধ্যে ধরা হয়। 

ইদানীং কালের মদিনা ফেরত আলেমরা শবেবরাত উদ্্যাপনের বিপক্ষে বলে থাকেন। সব মাসেরই ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে নফল ইবাদতের তাগিদ রয়েছে। তবে শাবান মাসের ১৫ তারিখের ঐচ্ছিক ইবাদতে মদিনায় শিক্ষিত আলেমরা কেন নিরুৎসাহিত করে থাকেন? 

মরমী কবি গোলাম মোস্তফা বাংলার মুসলমানদের উন্নতির জন্য প্রার্থনা করতে বলেছেন। মুসলমানদের অতীত ত্যাগ উল্লেখ করেছেন। কাব্যরসের খাতিরে অনেক কিছুই উল্লেখ করেছেন। যেমন হচ্ছে, ‘দাবি করা দান’। আমাদের দাবি করা কোনো দান নেই। আমাদের দান অর্জনের যোগ্য হতে হবে। 


শবেবরাত

গোলাম মোস্তফা


সারা মুসলিম দুনিয়ায় আজি এসেছে নামিয়া ‘শবেবরাত’

রুজি-রোজগার-জান-সালামত বণ্টন করা পুণ্য রাত।

এস বাংলার মুসলেমিন

হৃত বঞ্চিত নিঃস্ব দীন,

ভাগ্যরজনী এসেছে মোদের, কর মোনাজাত পাতো দু’হাত।

ভান্ডার দ্বার খুলেছে আজিকে দয়াময় রহমান রহিম,

বিশ্ব দানের উৎসব আজি চিরপবিত্র মহামহিম।

শত ফেরেশতা দলে দলে

দিকে দিকে আজি ওই চলে,

নিখিল বিশ্বে এ কি কলরোল এ কি প্রীতি প্রেম স্নেহ অসীম!

আকাশ তোরণে রশন চৌকি উৎসব নিশি আলো জ্বালা,

ঝালর ঝোলানো ঝাড় লণ্ঠন পূর্ণিমা চাঁদ সুধা ঢালা।

নীল ফিরোজার গালিচা গায়ে

কারুকলা আঁকা কোটি তারায়,

আসন বিছানো সে মহাসভায় বসিয়াছে খোদ খোদা তায়ালা।

রহমত আজি যেতেছে লুটিয়া কোটি ফেরেশতা ভারে ভারে

খোদার শিরনি ফিরনি বাঁটিয়া ফিরিতেছে ওই দ্বারে দ্বারে।

মলয় সমীর সুরভি তার

নহে এ গন্ধ ফুল বালার,

বেহেশতি সেই খোশবু যেন গো ভেসে আসে আজ বারে বারে।

ওরে হতভাগা নাদান মূর্খ, তন্দ্রা অলস মোহ বিভল,

গাফিল হইয়া রবি কি আজিকে? মহা রজনী যাবে বিফল?

রাজার প্রাসাদে মহাদানের

উৎসব আজি আলো গানের।

রিক্ত কাঙ্গাল যাবি না কি সেথা? পড়ে রবি হেথা চিরটি কাল?

আয় আয় ওরে উঠে আয় সবে, দলে দলে তোরা আয় ছুটে,

ভাগ্য সভায় যেতে হবে আজ শত নিয়ামত নেব লুটে।

নেব নাকো দান খয়রাতি

ভিক্ষুক সব হাত পাতি

দাবি করা দান লইব আমরা একসঙ্গে আজি সব জুটে।

বলিব আমরা এ খোদা! মোরা কাফের নহি তো মুসলমান

সারা দুনিয়ায় যুগে যুগে মোরা তোমার মহিমা করেছি গান

তোমারে বল তো চিনিত কে?

চিনায়েছি মোরা লোকে লোকে।

মোরা দলে দলে সৈন্য সাজিয়া উড়ায়েছি তব জয় নিশান।

তোমার বারতা প্রচার করিতে ছেড়েছি আমরা সুখ এলেম,

ধরায় ধুলায় আসন পেতেছি ছাড়ি বেহেশতি হুর হেরেম।

হয়েছি তোমার প্রতিনিধি

মানিয়া চলেছি তব বিধি,

তোমার নামের বিনিময়ে মোরা চাহিনি মুকুট মুক্তা হেম!

পুত্রেরে মোরা কোরবানি দিছি, ফেলিনি অশ্রুবিন্দু তায়,

দান্দান ভেঙ্গে লহু ঝরিয়াছে লুকায়ে ফিরেছি গিরি গুহায়।

সহিয়া কত না অত্যাচার

মুক্তি এনেছি ‘খানে কাবার’

পশু সীমারের হস্তে আমরা শহীদ হয়েছি কারবালায়।

শত নিপীড়ন তীব্র দহন মৃত্যুর নাহি করি খেয়াল

তোমার কলেমা ঘোষণা করেছে আজান দিয়েছে শত বেলাল।

শবেবরাত

ছুটেছি আমরা দিকে দিকে

‘কোহ কাফে’, অতলান্তিকে

হস্তে লইয়া তলোয়ার আর খঞ্জর নব আল-হেলাল।

ভ্রান্ত পথিকে দেখায়েছি মোরা তব ‘সেরাতুল মোস্তাকিম’

‘বোৎপরস্তী দূর করি’ সবে তোমার মন্ত্রে দিছি তালিম।

আলোকের জয় অভিযানে

যুঝেছি আমরা মনে প্রাণে,

তোমারি হুকুম তামিল করেছি, দীন-দুনিয়ার ওগো হাকিম!

আজিও তোমার সুধার সওদা বিশ্বে আমরা করি ফেরি,

ওই শোন আজি দিকে দিকে তাই তোমার নামের বাজে ভেরী।

জ্বেলেছি নূরের নব শিখা

এশিয়া ইউরোপ আমেরিকা,

আমাদেরি হাতে সারা ধরণীর মুক্তি আসিছে নাহি দেরি।

এত সেবা আর এত প্রাণপাত সকলি কি আজ বৃথা হবে?

প্রতিদান কিছু পাব না আমরা? বঞ্চিত হয়ে রব সবে?

হয়ে থাকি যদি অপরাধী

তাই বলে এত বাদাবাদি?

সবাই মোদের মেরে যাবে আর তুমি দূর হতে চেয়ে রবে?

হবে না প্রভু হবে না তা আজি এ মহাদানের শুভরাতে

আমাদের পানে চাহিতে হইবে করুণ কোমল আঁখিপাতে।

করে যারা তব অসম্মান

তাহাদের দাও কত না দান।

আমাদের কি গো নাই অধিকার তব প্রেম সুধা করুণাতে?

বল, কথা দাও, সাড়া দাও আজি, জবাব দাও এ প্রার্থনার,

যদি নাহি দাও খাবো না আমরা আজি এ ফিরনি রুটি তোমার।

না জাগে আজিকে যদি এ জাত

মিথ্যা তোমার ‘শবেবরাত।’

মিথ্যা তোমার ভুবনে ভুবনে এত আয়োজন দান করার।

শবেবরাতের রাত্রিতে আজি, চাহি নাকো শুধু ধন ও মান,

সবার ভাগ্যে দিও যাহা খুশি জাতির দিও গো মুক্তি দান।

জাগরণ লিখো নসিবে তার,

দিও সাধ প্রাণে বড় হবার,

নব গৌরবে বিশ্বে আবার দাঁড়ায় যেন এ মুসলমান।


অধ্যাপক, আরকান-ছ বিশ্ববিদ্যালয়-পাইন ব্লাফ

শেয়ার করুন