২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০১:২৮:৫৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :


দেশকে সৈয়দ শাহীন শওকত
বিএনপি সরকারের পাতা ফাঁদে পা দেবে না
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-১১-২০২২
বিএনপি সরকারের পাতা ফাঁদে পা দেবে না সৈয়দ শাহীন শওকত


বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ শাহীন শওকত বলেছেন, সমঝোতার কথা বলা হলে বলবো আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা বা এ সরকারের আমলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। বিরোধীদল অংশ নেবে না। কারণ তারা ছলচাতুরি করে কোনোভাবে আবার একটা নির্বাচন করে পার পেয়ে যেতে চায়। কিন্তু বিএনপি ও অন্য বিরোধীদল সরকারের এ ধরনের পাতা ফাঁদে পা দেবে না। তাদেরকে জনগণ বিশ্বাস করে না। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ।  

সৈয়দ শাহীন শওকত রাজশাহীতে বিএনপির একজন ত্যাগী-পরীক্ষিত নেতা হিসেবে নানান ঘাত-প্রতিঘাতে দলকে সামনের দিকে নিয়ে গেছেন। তিনি একটি সম্ভ্রান্ত ও ধনাঢ্য পরিবারে ১৯৬১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম সৈয়দ আব্দুস সামাদ একজন উচ্চপদস্থ ব্যাংক কর্মকর্তা হিসেবে অবসরগ্রহণ করেন। মা মরহুমা প্রফেসর ড. শওকত আরা তৎকালীন সময়ে একমাত্র পলিটিক্যাল সাইকোলজিস্ট ছিলেন। তার পিএইচডি থিসিসের বিষয় ছিলো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উত্থানপতন, বিশেষ করে ছাত্ররাজনীতি। তার এই থিসিস বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার হয়। তিনি একাধারে একজন কবি, প্রবন্ধকার ও তিনি সমাজবিজ্ঞানের ওপর বই লিখেছেন। এছাড়াও তার লিখা সমাজবিজ্ঞান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদসহ অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের গবেষণাপত্র পৃথিবীর বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি তার কর্মজীবনে ১০-এর অধিক ছাত্রছাত্রীকে পিএইচডি করিয়েছেন এবং ৫০-এর অধিক ছাত্রছাত্রীকে এমফিল করিয়েছেন। উনি নিজে অন্তরে জাতীয়তাবাদী চেতনা ধারণ করতেন। তিনি কেন্দ্রীয় জিয়া পরিষদের  মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ছিলেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া পরিষদের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং রোকেয়া হলের প্রভোস্ট ছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষপদে ছিলেন। পিএসসিতে মনোবিজ্ঞনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এবং সার্ক-এর মনোবিজ্ঞান অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। অন্যদিকে সৈয়দ শাহীন শওকত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে এমএ করেছেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত পদার্থবিদ্যা এবং ইলেকট্রনিক্স বিভাগে এমএসসি করেছেন। আবার তিনি এলএলবি করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। রাজনীতিতে আসেন ১৯৮১ সালে ছাত্রদলে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার সভাপতি (১৯৮৮-১৯৮৯) ছিলেন তিনি।  ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি (১৯৮১-১৯৯৩) দুইবার সদস্য ছিলেন। ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটি (১৯৯৩-১৯৯৬) সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি হন (১৯৮৯-১৯৯৪) বিএনপির রাজশাহী জেলা কমিটির উপদেষ্টা হন।  দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির  সদস্য হন। তার মরহুমা স্ত্রী দিলরুবা শওকত একটি সম্ভ্রান্ত ও শিক্ষিত পরিবারের পারিবারিক ঐতিহ্য বহন করেন। দিলরুবা শওকত রাজনৈতিক জীবনে রংপুর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদিকা এবং পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুন্নুজান হলের নির্বাচিত সভানেত্রী ছিলেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেন এবং পরে এলএলবি করেন। পরে তিনি একজন সফল মহিলা ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। তিনি ২০২০ সালে দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। সৈয়দ শাহীন শওকত ও দিলরুবা শওকতের বিবাহিত জীবনে তারা এক পুত্রসন্তান ও এক কন্যাসন্তানের জনক। তাদের পুত্র মালয়েশিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করে এমবিএতে অধ্যয়নরত এবং কন্যা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। 

দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সৈয়দ শাহীন শওকতের সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো- 

দেশ: দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন বলে মনে হচ্ছে? 

সৈয়দ শাহীন শওকত: দেশের ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে একটি স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম হয়ে আছে। আমরা ছোটবেলায় স্বল্পসময়ে একটা বাকশালী শাসনব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছি। সেটারও একটা রূপ ছিলো। এখন যে অবস্থা বিরাজ করছে দেশে তা বাকশালের চাইতেও ভয়ংকর। আরো বেশি স্বৈরতান্ত্রিক। এখানে গণতন্ত্রের মুখোশ পড়ে সম্পূর্ণ এক ব্যক্তির শাসন কায়েম করা হয়েছে। যারা সারা দেশে মানুষের মৌলিক অধিকার, বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেয়া নিয়েছে। মানুষের কথা বলার অধিকার সম্পূর্ণ ভূলুণ্ঠিত করে এরা একধরনের চরম স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে। তাদের এধরনের শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা বললে জেলে নেয়া হয়, করা হয় নির্যাতন। এ থেকে সাংবাদিকরাও রেহাই পাচ্ছে না। সাংবাদিক, সুশীলসমাজ কূটনীতিবিদ কেউ বাদ যাচ্ছে না। কেউ এ সরকারের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। সারা দেশে শ্মশানের মতো অবস্থা বিরাজ করছে। প্রতিটি সেক্টরকে তারা নির্লজ্জভাবে দলীয়করণ করে ফেলেছে। সে অবস্থা থেকে মানুষ রেহাই পেতে খাঁচায় বন্দি পাখির মতো মানুষ ছটফট করছে। 

দেশ: শুধু কি এমন অবস্থা আওয়ামী লীগ আমলেই দেখা গেছে। এমন অবস্থা কি বিএনপির আমলে দেখা যায়নি? এর চেয়েও কি বিএনপি দেশে ভয়াবহ অবস্থার তৈরি করেনি?

সৈয়দ শাহীন শওকত : বিএনপির আমলে বেশ ভালো ছিল আর এখন আওয়ামী লীগ আমলে বেশ খারাপ ছিল এ ব্যাপারটি আমি তুলনা করছি না। শুধু বললো বিএনপি আমলে হয়তোবা খারাপ ছিল। তবে বিএনপি আমলে মানুষের ন্যূনতম মৌলিক অধিকারগুলিতো ছিল। বাকস্বাধীনতা তো ছিল এবং তা রক্ষার জন্য তখনকার নেতৃবৃন্দ কাজ করেও গেছেন। এমন শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তো বজায় ছিল না বিএনপি আমলে। সব ধরনের গণমাধ্যম নির্দ্বিধায় কথা বলতে পারতো। কোনো মিডিয়ার বিরুদ্ধে সেন্সরশিপ নেমে আসতো না। খড়গ নেমে আসতো না। টেলিফোনে হুমকি বা থ্রেট দেয়া হতো না, বাকস্বাধীনতা ছিল। কিন্তু বর্তমানে দেশে যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে করে দেশ একটি চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। এখানে ভোটাধিকারহরণ করা হয়েছে ভিন্ন পন্থায়। ২০১৪ সালে একভাবে ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে, ২০১৮ সালে ভিন্ন কায়দায়। দিনের ভোট হয়ে গেছে রাতে। যেভাবেই বলেন না কেন তারা ভোটাধিকার হরণ করেই ক্ষমতায় টিকে আছে। 

দেশ: আপনি যেভাবে এ সরকারের সমালোচনা করছেন, তা কি জনগণ বোঝে না। তারা তো আপনাদের কথায় ভোটাধিকার ফিরে পেতে বা বাকস্বাধীনতা ফিরে পেতে রাস্তায় নেমে আসতো। তা কি হচ্ছে? সে ধরনের আন্দোলন হচ্ছে না কেন?

সৈয়দ শাহীন শওকত: কেন? আপনি কি দেখছেন না কিছু? মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয়সহ সমস্ত জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। মাছ, মাংস, সবজি সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। তাছাড়া মানুষের নিরাপত্তার চরম অভাব দেখা দিয়েছে। 

দেশ: আপনার অভিযোগের সত্যতা মাঠে দেখা যাচ্ছে না। মানুষ ফুসে উঠছে না তো? আপনাদের কথায় তো তারা রাস্তায় নেমে আসছে না। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। সরকারের এমন দাবিও তো আছে। 

সৈয়দ শাহীন শওকত: আপনি মনে হয় সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির সভা-সমাবেশগুলোর প্রতি নজর দেননি? দেখেননি গণজোয়ার? পর্যবেক্ষণ করেননি? অবলোকন করতে পারেননি। মানুষ এখন শত বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে বিএনপির ডাকা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে। বিএনপিসহ অন্যসব বিরোধীদলের ডাকে সাড়া দিয়ে তারা নেমে গেছে। চট্টগ্রাম, খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপির তো মহাসমাবেশ হয়ে গেছে। লোকে লোকারণ্য হয়ে যাচ্ছে। মামলা-হামলা করেও জনগণের গণজোয়ার রোধ করা যাচ্ছে না। লক্ষ করবেন, এমন সমাবেশ যেন ভালোভাবে না হতে পারে, সেজন্য অঘোষিতভাবে সবকিছু বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। বিএনপি সমাবেশ ডাকলে চারপাশে কারফিউয়ের মতো অবস্থা তৈরি করা হচ্ছে। বলা যায়, শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা কিন্তু তারপরও হাজার হাজার মানুষ সমাবেশে আসছে। জনগণ এসব বাধা উপেক্ষা করে বিএনপির সমাবেশে আসছে। তারা সরকারের জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে বেপরোয়া হয়ে গেছে। তারা শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে চায়। 

দেশ: কিন্তু জনগণ তো দেখে এ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা বাস্তবায়ন করেছে। সারাদেশে যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। বিভিন্ন ধরনের মেগাপ্রকল্প নেয়া হয়েছে এবং বাস্তবায়নও হয়েছে। তাই কেন বলছেন জনগণ দেশের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে বেপরোয়া। 

সৈয়দ শাহীন শওকত: শোনেন, আপনি জানেন কতগুলো মেগাপ্রকল্প এ সরকার নিয়েছে আর তা কতটা সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। আর এ সমস্ত মেগাপ্রকল্পে কত চুরি আছে। মেগা চুরির ব্যাপার তো আপনারা শুনেছেন। যে পদ্মা সেতু ১০ হাজার কোটি টাকায় হওয়ার কথা ছিল তা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকায়। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার যে কিছু করেনি তা আমরা বলি না। পদ্মা সেতুর মাধমে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন অবশ্যই হয়েছে। এ নিয়ে আমরা সমালোচনা করবো না। কিন্তু মেগাপ্রকল্পের নামে মেগা চুরি, লুটপাট, কমিশন বাণিজ্য, টাকা লুটপাট- এগুলি অতীতের সব ইতিহাসকে ম্লান করে দিয়েছে। তাছাড়া লক্ষ করবেন এ সরকার কতগুলি মেগাপ্রকল্প নিয়েছে তা কতোগুলি বাস্তবায়ন করেছে? বা চালু হয়েছে। কার্যকরভাবে কাজ করছে? 

দেশ: একটি রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে সরকারের কাছে আপনাদের পরামর্শ কি? সংকট থেকে রেহাই পেতে সরকারের কাছে আপনার পরামর্শ কি?

সৈয়দ শাহীন শওকত: আমি বলবো, এ সরকার যদি জনগণের পালস বুঝতো তাহলে সরকার তার ইজ্জত-সম্মান নিয়ে চলে যেতো। বাংলাদেশের মানুষ এখন এই আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে মুক্ত হতে চায়। তারা নিরাপদ ভবিষ্যৎ চায়। তারা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের কথা বলে কুইক রেন্টালের মাধ্যমে কোটি টাকা লুটপাট চায় না। তারা এখন পদত্যাগ করে সরে যাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি..

দেশ: না, আমি জানতে চাইছিলাম আপনার পরামর্শটা কি....

সৈয়দ শাহীন শওকত: আমার পরামর্শ চাচ্ছি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো তৈরি করে তারা যেন ক্ষমতা থেকে সরে যায়। 

দেশ: রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি সমঝোতার গুঞ্জন চলছে.. এ ব্যাপারে আপনি কিছু শুনেছেন নাকি?

সৈয়দ শাহীন শওকত: সমঝোতার কথা বলা হলে বলবো আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা বা এ সরকারের আমলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। বিরোধীদল অংশ নেবে না। কারণ তারা ছলচাতুরি করে কোনোভাবে আবার একটা নির্বাচন করে পার পেয়ে যেতে চায়। কিন্তু বিএনপি ও অন্য বিরোধীদল সরকারের এ ধরনের ফাঁদে পা দেবে না।

শেয়ার করুন