২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৭:০৩:০০ অপরাহ্ন


আন্তঃসীমান্ত নদী দিয়ে ঢুকছে প্লাস্টিক
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-১১-২০২২
আন্তঃসীমান্ত নদী দিয়ে ঢুকছে প্লাস্টিক অনুষ্ঠানে নেতৃবৃন্দ


প্রতিদিনই বেশ কযেকটি আন্তঃসীমান্ত নদী দিয়ে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক প্রবেশ করছে। এতে নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীই এখন হুমকির মুখে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের নদীতলা প্লাস্টিকে ভরে যাবে। এর পাশাপাশি নদ-নদীর জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে। পরিবেশে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে। 

আন্তঃসীমান্ত নদী বলতে সাধারণত সেসমস্ত নদীকে বোঝায় যেগুলি অন্তত এক বা একাধিক দেশের রাজনৈতিক সীমা অতিক্রম করে। এই সীমা একটি দেশের অভ্যন্তরস্থ বা আন্তর্জাতিক হতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৫৭টি আন্তঃসীমান্ত নদী। 

এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডো গবেষণাতে বলা হয়, ভারত ও মায়ানমার থেকে বাংলাদেশের ১৮টি আন্তঃসীমান্ত নদীতে প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার ৩৪৫ টন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক প্রবেশ করে। এর মধ্য থেকে ২ হাজার ৫১৯ টন ভারত থেকে এবং ২৮৪ টন মায়ানমার থেকে আসে। ভয়াবহ একবার ব্যবহারযোগ্য এধরনের প্লাস্টিক, যা কখনই পচে না, যা আমাদের নদী ও এর সাথে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা করতে পারে ঐতিহাসিক গ্লোবাল প্লাস্টিক চুক্তি। এটিই পারবে আমাদের নদীর করুণ পরিস্থিতিকে পরিবর্তন করতে। 

এসব তথ্য দিয়ে এসডোর গবেষণাতে আরো বলা হয়, প্রতি বছর প্রায় অর্ধমিলিয়ন টন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য আমাদের বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে। প্লাস্টিক সল্যুয়েশন ফান্ড এবং গ্লোবাল অ্যালাসেন্স ফর ইনসিনেরেশন অল্টারনেটিভস-গায়ার সহযোগিতায় এসেডো এই গবেষণাটি পরিচালিত করে। 

গবেষণার প্রধান ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ডিসেম্বর ২০২০ থেকে জুলাই ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মোট ৭ হাজার ২০ জনের সাথে জরিপ করা হয় যার মধ্যে ছিল সাধারণ পেশার মানুষ যেমন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, মাঝি, জেলে, দোকানদার ইত্যাদি। দেশের বিভিন্ন আন্তঃসীমান্ত এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে প্রায় ১১ হাজার ৭০০ ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্যরে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সংগ্রহ ও নিশ্চিত করার জন্য কাঠামোগত প্রশ্নাবলির মাধ্যমে জরিপটি পরিচালনা করা হয়। 

তিনি বলেন, এই গবেষণার জন্য বাংলাদেশের যে সকল আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোকে মূল্যায়ন করা হয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আপস্ট্রিমের ক্ষেত্রে মহানন্দা, ডাহুক, করতোয়া, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, সুরমা, কুশিয়ারা; মিডস্ট্রিমের ক্ষেত্রে গঙ্গা এবং ডাউনস্ট্রিমের ক্ষেত্রে ইছামতি-কালিন্দি এবং নাফ নদী। গত শনিবার রাজধানীতে গবেষণার চূড়ান্ত ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। এটি উপস্থাপন করেন এসডো’র সহকারী প্রোগ্রাম অফিসার হৃদিতা ফেরদৌস। 

এ ব্যাপারে এসডোর চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ। তাঁর মতে, ‘আমাদের দেশের নদীগুলো প্লাস্টিক বর্জ্যে ভরে গিয়েছে। আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নদী এবং এর জন্য আমাদের পদক্ষেপ নেয়া ও দায়িত্ব নেয়ার সময় এসে পড়েছে। উপরন্তু আসন্ন প্লাস্টিক চুক্তি আমাদের এই কাজে সাহায্য করবে।

জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয়। কিন্তু এই নদীই এখন হুমকির মুখে। এই ভয়াবহ একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, যা কখনই পচে না আমাদের নদীগুলোর ধ্বংসের জন্য দায়ী। আমরা আশাবাদী যে আমাদের সরকার আবশ্যই এই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন।

অ্যাডজান্ট ফ্যাকাল্টি, সমাজবিজ্ঞান, বিইউপি এবং সাবেক সচিব ড. মাহফুজুল হক বলেন, আমাদের নদী রক্ষার্থে শুধুমাত্র সরকারের একাই কাজ করলে চলবে না। আমাদের সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও যে সকল দেশ থেকে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকগুলো ভেসে আসছে, সে সকল দেশ এর সাথের আমাদের আলোচনা করতে হবে একটি সঠিক সমাধানের জন্য।

ড. স্টিভ ফ্লেচার, ওশান পলিসি অ্যান্ড ইকোনমি ডিরেক্টর, সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্ট রিসার্চ থিম অ্যান্ড রেভলিউশন প্লাস্টিকস, ইউনিভার্সিটি অব পোর্টস মাউথ, যুক্তরাজ্য থেকে ভাচুয়ালি অতিথি বক্তা হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তিনি গ্লোবাল প্লাস্টিক চুক্তির ওপর ফোকাস করে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক দূষণের ওপর নিজের মতামত দেন। 

এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা বলেন, এটা সত্যিই চিন্তার কারণ যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্লাস্টিক-দূষিত দেশ। প্লাস্টিক তৈরির কারণে পরিবেশদূষিত হচ্ছে। এসব সবারই জানা, কিন্তু বাংলাদেশে প্লাস্টিকদূষণ পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। কারণ এটি একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা, সমাধানটিও বিশ্বব্যাপী হতে হবে।

জ্যাকব কিন-হ্যামারসন, প্রকল্প কর্মকর্তা (জলবায়ু ও মহাসাগর অভিযান), এনভায়রনমেন্টাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (ঊওঅ), যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তিনি গ্লোবাল প্লাস্টিক চুক্তির সংক্ষিপ্ত বিবরণ, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলির ওপর জোর দেন যা আইএনসি মিটিংগুলিতে সমাধান করা উচিত। গায়া ইন্ডিয়ার কো-অর্ডিনেটর, শিবু নায়ার বলেন, আসন্ন গ্লোবাল প্লাস্টিক চুক্তি প্রত্যেকটা দেশকে সাহায্য করবে এই একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকদূষণ থেকে মুক্তি পেতে। আমাদের সকলের এখন এদিকে মনোনিবেশ করা উচিত, যাতে আমরা এই একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক থেকে রক্ষা পেতে পারি।

শেয়ার করুন