২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৮:৩৯:৪৫ পূর্বাহ্ন


হঠাৎ চীনা ঋণ ছাড়ে টান
ইব্রাহিমের স্যালুট ও মিলারের মন্তব্য
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০২-২০২৪
ইব্রাহিমের স্যালুট ও মিলারের মন্তব্য সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ও ম্যাথু মিলার


ঢাকার রাজনীতিতে অনেক ঘটনা খুব নিরবে ঘটে যাচ্ছে। থেকে যাচ্ছে লোক চক্ষুর আড়ালে, অনেক কিছুরই ইঙ্গিত দেয়। জে ইবরাহিমের স্যালুট.. ৮০ জন কূটনীতিক উপস্থিতি ৩০ জানুয়ারি যাত্রা শুরু হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদের। সরকার ও বিরোধী দল, রেকর্ড স্বতন্ত্র এমপির সরব উপস্থিতির মধ্য দিয়ে ওইদিন বিকাল ৩টায় প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। ১৯৭৩-পরবর্তী দেশের ইতিহাসে বৃহত্তম সরকারি দলের পাশাপাশি ক্ষুদ্রতম বিরোধী দল নিয়ে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।


সংসদ অধিবেশনের সূচনাতেই স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার হিসেবে পুননির্বাচিত হয়েছেন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু। টানা চতুর্থ মেয়াদে স্পিকার হয়ে অনন্য নজির গড়লেন শিরীন শারমিন চৌধুরী। অধিবেশন শুরুর আগে দুপুর ১২টার পর থেকেই পুরো সংসদ ভবন নবীন-প্রবীণ সদস্যের পদচারণে মুখরিত হয়ে ওঠে। ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৩টিতে বিজয়ী হয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকারি দলের আসনে বসে আওয়ামী লীগ। আর সংসদীয় ইতিহাসে এবারই প্রথম রেকর্ড ৬২ স্বতন্ত্র সদস্য দ্বাদশ সংসদে বসেছেন। উদ্বোধনী অধিবেশন দেখতে ভিআইপি গ্যালারিসহ দর্শনার্থী গ্যালারিও ছিল পরিপূর্ণ। এই অধিবেশন দেখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউকে, ফ্রান্স, ভারত, জার্মানি, রাশিয়া, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতসহ ৮০ জন কূটনীতিক উপস্থিত ছিলেন। অধিবেশনে অনেক টুকিটাকি ঘটনা ঘটেছে।


৭ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের এমন উদ্বেগ উৎকন্ঠার মাঝ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউকে, ফ্রান্স, ভারত, জার্মানি, রাশিয়া, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতসহ ৮০ জন কূটনীতিক উপস্থিতিটিই ইঙ্গিতপূর্ণ ছিলো। 


এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন অধিবেশন শুরুর কিছুক্ষণ আগে সংসদ কক্ষে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে সংসদ অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সিটে বসার আগে প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে জড়ো হন সংসদ সদস্যরা। তারা সবাই সংসদ নেতাকে সালাম দেন। কয়েকজন এমপিকে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায় সেখানে সরকারদলীয় এমপিদের চেয়ে স্বতন্ত্র এমপিদের অংশগ্রহণই বেশি দেখা যায়।


জাতীয় পার্টির দু-একজন এমপিকেও প্রধানমন্ত্রীকে সালাম দিতে দেখা যায়। কিন্তু এর একধাপ এগিয়ে যান কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে দেখে স্যালুট দেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একে অন্য ভাবে দেখেন। তাদের মতে এই স্যালুট অনেক ইঙ্গিতপূর্ণ। সাবেক সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম এমন স্যালুট কারো কারো মতে এটি একটি সামরিক কায়দায় সম্মান বলে ধরে নিয়েছেন। কিন্তু কারো কারো মতে হয়তবা এই স্যালুট দিয়ে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম আরো অনেক কিছু বুঝিয়েছেন, দিয়েছেন রাজনৈতিক বার্তা। হয়তবা বোঝাতে চেয়েছেন যে, প্রধানমন্ত্রী আপনি বীর..সাহসী নিতে পারেন ঝুঁকি। আপনি পারলেন সাম্রাজ্যবাদ শক্তিকে মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে। হয়তবা বোঝাতে চেয়েছেন তিনি (প্রধানমন্ত্রী) তাকে (সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম) যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেটি তিনি (প্রধানমন্ত্রী) অক্ষরে অক্ষরে রেখেছেন। 



ম্যাথু মিলারে ইঙ্গিতপূর্ণ ভয়ঙ্কর সর্তকবাণী

বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, ‘নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে এমন প্রমাণ খুঁজে পাইনি।’ স্থানীয় সময় ৩১ জানুয়ারি মঙ্গলবার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এই আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগে গ্রেপ্তার করা বিভিন্ন বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তবে তার বক্তব্যে একটি জায়গা ছিল বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ। তা হলো তিনি বলেছেন, ‘আপনারা আমাকে আগেও বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগে প্রকাশ করতে দেখেছেন। আমরা নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে এমন প্রমাণ খুঁজে পাইনি।


সেই নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধী দলের হাজার হাজার সদস্যের গ্রেপ্তার নিয়েও আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছি।’ প্রশ্ন হচ্ছে আমেরিকাসহ পশ্চিমারা বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে অনেক তথ্য অনুসন্ধান করেছেন। ৩১ জানুয়ারি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারে বক্তব্যে বোঝা গেলো ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে এমন প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে তারা। আরেকটি বিষয় হচ্ছে ম্যাথু মিলার বলেছেন ওই ব্রিফিয়ে। ’আমি বাংলাদেশ ও গণতন্ত্রের প্রতি সম্মান রেখেই বলতে চাই, বাংলাদেশসহ অন্য সব দেশের জন্যই শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে গণতন্ত্র জরুরি। এটি (গণতন্ত্র) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে আছে এবং আমরা গণতান্ত্রিক নীতিগুলোকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশি সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা অব্যাহত রেখেছি। এই প্রক্রিয়া বাংলাদেশিদের জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিতের মূলমন্ত্র। প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশ যদি এই শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিতের মূলমন্ত্র যাকে তারা প্রক্রিয়া বলছেন তা যদি না নেয়া হয় তাহলে কি হবে? তার এমন বক্তব্য বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ। 


হঠাৎ টান পড়েছে চীনা ঋণ ছাড়ে

বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় পত্রিকা সংবাদ প্রকাশ করেছে সম্প্রতি। এতে বলা হয় গত ছয় মাসে চীনা ঋণের ছাড় তিন ভাগের এক ভাগ কমেছে। নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি নেই। রিপোর্টে বলা হয় যে বাংলাদেশের জন্য চীনা ঋণের অর্থ ছাড় কমে গেছে। আবার সাম্প্রতিক সময়ে কোনো প্রকল্পে অর্থায়নের নতুন কোনো প্রতিশ্রুতিও দেয়নি দেশটি। বলা হয় গত দুই অর্থবছরে চীনা ঋণের অর্থ ছাড়ে বেশ গতি ছিল। এ সময় বেইজিং থেকে পাওয়া ঋণে বড় বড় প্রকল্পও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) আগের অর্থবছরের পুরো সময়ের তুলনায় অর্থ ছাড় হয়েছে তিন ভাগের এক ভাগ। প্রশ্ন হচ্ছে কি এমন ঘটে গেলো বা ঘটেছে যে হঠাৎ টান পড়ে গেলো চীনা ঋণ ছাড়ে? বিষয়টি বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ।

শেয়ার করুন