২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৯:৩৬:৫১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


বিজয়ের মাস ডিসেম্বর
কাছে আসতে শুরু করেছে বিজয়ের সূর্য
ফকির ইলিয়াস
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১২-২০২৩
কাছে আসতে শুরু করেছে বিজয়ের সূর্য


একাত্তরের ডিসেম্বরের শুরু থেকেই বিশ্ববাসী আঁচ করতে শুরু করে, বাংলাদেশের বিজয় অতি নিকটে। ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশকে পুরো সমর্থন দিয়ে কাছে আসার পর পরই পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট। 

বাংলাদেশের মানুষ যখন পাকিস্তানের কাছ থেকে মুক্তির জন্য জীবনপণ লড়ছে, তখনকার পৃথিবী ছিল একেবারে ভিন্ন। দুটো ভিন্ন মেরুতে নিজেদের আবদ্ধ রেখেছিল বেশির ভাগ দেশ। আর বৃহৎ শক্তির দেশগুলো পরস্পরের সঙ্গে ঠান্ডা লড়াইয়ে যুক্ত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকে কেন্দ্র করেই।

যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন ছিল পাকিস্তানের পক্ষে, অন্যদিকে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন (যার সবচেয়ে প্রভাবশালী অংশ ছিল আজকের রাশিয়া) এবং ভারত ছিল বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পক্ষে। ডিসেম্বর মাসের তিন তারিখে ভারত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পর থেকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এবং সাধারণ পরিষদে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে।

একাত্তরের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান বিমানবাহিনী বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা ১৭ মিনিটে ভারতের অমৃতসর, পাঠানকোট, শ্রীনগর, যোধপুর, আগ্রাসহ সাতটি স্থানে অতর্কিতে একযোগে হামলা চালায়। এরপর রাত আটটায় জম্মু ও কাশ্মীরে দক্ষিণ-পশ্চিম ছামব ও পুঞ্চ সেক্টরে ব্যাপক স্থল অভিযান শুরু করে। বাংলাদেশের সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী স্থলে ও আকাশে আক্রমণ শুরু করায় ৩ ডিসেম্বর থেকে সর্বাত্মক যুদ্ধের সূচনা হয়।

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের অর্লি বিমানবন্দরে ৩ ডিসেম্বর সকালে জঁ ক্যা নামে এক ফরাসি যুবক পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের একটি যাত্রীবাহী বিমান ছিনতাই করেন। ‘সিটি অব কুমিল্লা’ নামের বোয়িং-৭২০ বিমানটি ৩ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে যাত্রা করে। প্যারিস, রোম ও কায়রো হয়ে এটির করাচি যাওয়ার কথা ছিল।

প্যারিস থেকে এটিতে পাঁচজন যাত্রী ওঠেন। নিরাপত্তাব্যুহ পেরিয়ে তাদের সঙ্গে ২৮ বছর বয়সী যুবক জঁ ক্যাও বিমানটিতে উঠে বসেন। বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে পাইলট বিমান চালু করতেই জঁ ক্যা পিস্তল বের করে তাকে ইঞ্জিন বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বলেন, নির্দেশ না মানলে বোমা দিয়ে বিমান উড়িয়ে দেওয়া হবে। এরপর তিনি বাংলাদেশের যুদ্ধরত ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের জন্য বিমানটিতে ২০ টন ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী তুলে দেওয়ার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

বিমানবন্দরে দুটি ওষুধভর্তি গাড়ি হাজির হয়। চারজন পুলিশ গাড়ির স্বেচ্ছাসেবকের পোশাকে বিমানে ঢুকে রাত ৮টায় জঁ ক্যাকে আটক করেন। ফরাসি লেখক আঁদ্রে মালরোর বক্তব্যে অনুপ্রাণিত জঁ ক্যা মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখার উপায় খুঁজতে গিয়ে জুন মাসে বিমান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেছিলেন।

পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো রাওয়ালপিন্ডিতে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পুরো ক্ষমতা দাবির শর্তে অসামরিক যৌথ মন্ত্রিসভায় বাঙালি প্রধানমন্ত্রীর অধীনে সহকারী প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণে তিনি রাজি আছেন। মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকতে ৪ ডিসেম্বর উদ্যোগ নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ আটটি দেশ জরুরি বৈঠক ডাকার জন্য অনুরোধ জানিয়ে পরিষদের সভাপতি সিয়েরা লিয়নের রাষ্ট্রদূত ইসমাইল টেলর কামারাকে চিঠি দেয়। চিঠিতে স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, ইতালি, জাপান, আর্জেন্টিনা, নিকারাগুয়া ও সোমালিয়া। জাতিসংঘে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী পরিষদের সভাপতির কাছে বৈঠকের শুরুতেই বাংলাদেশের প্রতিনিধিকে বক্তব্য পেশ করতে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।

জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট এক প্রতিবেদনে নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, ভারত-পাকিস্তানের পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।

ডেনমার্ক সফররত সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী আলেক্সি কোসিগিন এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সংঘর্ষ এড়াতে তারা সাধ্যমতো সব চেষ্টা করেছে। কিন্তু পূর্ববঙ্গে গণতন্ত্রকে হত্যা করে এ সংকট ডেকে আনা হয়েছে। ডেনিস সংবাদ সংস্থা তার এক সফরসঙ্গীর মন্তব্য উদ্ধৃত করে জানায়, এ যুদ্ধে এখনই হস্তক্ষেপ করার কোনো সম্ভাবনা আছে বলে সোভিয়েত ইউনিয়ন মনে করে না।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা কলকাতায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আত্মসমর্পণই তাদের লক্ষ্য। ভারত সরকার বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার স্থাপনে সহায়তা করতে চায়। দিল্লিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, তাদের সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে এবং মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে একযোগে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অনেক কিছুই দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ৫ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটোয় বাংলাদেশসংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়। এই প্রস্তাবে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও সেনা অপসারণের জন্য ভারত ও পাকিস্তানের কাছে আহ্বান জানানো হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি জর্জ বুশ প্রস্তাবটি পেশ করে বলেন, এ সমস্যা সমাধানে পরিষদ বলপ্রয়োগের নীতি নিতে পারে না। সোভিয়েত প্রতিনিধি ইয়াকব মালিক যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবকে একপেশে ও অগ্রহণযোগ্য বলে বাংলাদেশ নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে আরেকটি প্রস্তাব আনেন। সে প্রস্তাবে ভারত ও পাকিস্তানকে যুদ্ধ বন্ধ করতে বলার আগে বাংলাদেশে সামরিক শাসকদের অত্যাচার বন্ধের দাবিও তোলা হয়। সোভিয়েত বলে, অবস্থার অবনতির কারণ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অত্যাচার। বাংলাদেশের একজন প্রতিনিধিকে বিতর্কে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রস্তাব করে। তীব্র আপত্তি জানিয়ে চীনা প্রতিনিধি বলেন, এতে জাতিসংঘের একটি সদস্যরাষ্ট্রের ঘরোয়া ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা হবে। ভারতের প্রতিনিধি সমর সেন বলেন, বিষয়টি যথাযথ পটভূমিতে বিবেচনা করতে হলে বাংলাদেশের প্রতিনিধিকে বিতর্কে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাতে হবে। 

বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ৬ ডিসেম্বর ভারত স্বীকৃতি দেয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাদের সংসদে এ ঘোষণা দেন। পরে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে চিঠি দিয়ে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। ইন্দিরা গান্ধী সংসদে বিপুল হর্ষধ্বনির মধ্যে ঘোষণা দেন, ভারত বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ইন্দিরা গান্ধী এক বিবৃতিতে বলেন, বিরাট বাধার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রাম স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সংযোজন করেছে। সতর্কতার সঙ্গে বিচার-বিবেচনা করার পর ভারত বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমাদের মন পড়ে রয়েছে এই নতুন রাষ্ট্রের জনক শেখ মুজিবুর রহমানের দিকে।’ পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে লেখা চিঠিতে ইন্দিরা গান্ধী লেখেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে ভারত সরকার স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

হেনরি কিসিঞ্জার তার বইয়ে লিখেছেন, ইন্দিরা গান্ধীর দেওয়া সেই স্বীকৃতির ফলে রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনার সব সম্ভাবনা কার্যত শেষ হয়ে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখন ভারতকে দেওয়া সব ধরনের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়। তবে ভারতের ওপর এর প্রভাব পড়েনি বলেই চলে।

ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মানেকশর আত্মসমর্পণের বাণী আকাশবাণী থেকে বিভিন্ন ভাষায় প্রচারিত হতে থাকে। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি সেনারা পালানোর কোনো সুবিধা করতে পারবে না। চারদিক থেকে সম্মিলিত বাহিনী ঘিরে ধরেছে।’

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ গুরুত্বপূর্ণ ও ঘটনাবহুল একটি দিন। এদিন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বেতার ভাষণে বলেন, ‘ঢাকা হানাদার মুক্ত হতে আর সময়ের প্রয়োজন হবে না। খুব শিগগির ঢাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে আসবে। বাংলাদেশ এখন দিবালোকের মতোই সত্য। আমাদের প্রাণের নেতা বঙ্গবন্ধুও খুব শিগগির বাংলার বুকে ফিরে আসবেন।’

৭ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদে আর্জেন্টিনার দেওয়া এক প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। আর্জেন্টিনা প্রস্তাবে বলে, ‘সংঘাত নিরসনে দুই দেশকেই আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে আসতে হবে এবং অতিসত্বর সীমান্তে মোতায়েনকৃত সৈন্য সরাতে হবে। একই প্রস্তাব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও তোলা হয়। এই প্রস্তাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো দিলে তা বাতিল হয়ে যায়।

৭ ডিসেম্বর মুজিবনগরে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, ‘ভারতের স্বীকৃতির পর বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই মুজিবনগর থেকে বাংলাদেশ সরকারের দফতর ঢাকায় স্থানান্তর করা হবে।’

এদিন সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা লিওনিদ ব্রেজনেভ এক বিবৃতিতে বলেন, ’ভারত এবং পাকিস্তানের উচিত শান্তিপূর্ণ সমাধানে আসা। যুদ্ধ কেবল প্রাণঘাতই বয়ে আনছে। এতে কোনো সুষ্ঠু সমাধান আশা করা যায় না। আলোচনা ছাড়া যুদ্ধের অবসান ও অনুকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতি আনা সম্ভব না। ৭ ডিসেম্বর মার্কিন সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে দেওয়া অর্থনৈতিক সাহায্য বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ দিল্লিতে একজন সরকারি মুখপাত্র ৮ ডিসেম্বর বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব কোনো চাপের মুখেই ভারত মানবে না। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাংলাদেশ সরকারকে ভারত একটি বৈধ সরকার বলে মনে করে।

ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রাজনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। বৈঠকে সবাই একমত হন যে, বাংলাদেশের বাস্তব পরিস্থিতির স্বীকৃতি ছাড়া পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে কোনো যুদ্ধবিরতি মানা সম্ভব নয়। দিল্লিতে একজন সরকারি মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, ভারত উপমহাদেশে যুদ্ধ বাধার আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিক্সন নতুন কোনো প্রস্তাব করেছিলেন বলে ভারতের জানা নেই। তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য দেশকে ভারত বারবার বলেছে, রাজনৈতিক সমাধান করার একমাত্র উপায় শেখ মুজিবকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচিত সহকর্মীদের সঙ্গে তাকে আলোচনা করতে দেওয়া।

জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সমর সেন জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্টের অনুরোধে এদিন তার সঙ্গে দেখা করেন। পরে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আগা শাহিও উ থান্টের সঙ্গে দেখা করেন। উ থান্ট ভারত উপমহাদেশের পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানান। জাতিসংঘের লোকজন ও বিদেশি নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয় সাহায্যের জন্য দুই দেশের সরকারকেও অনুরোধ জানানো হয়।

এদিকে বাংলাদেশের মুক্তিসেনারা বিভিন্নভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে শুরু করেছেন। শীতের আমেজের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামে গ্রামান্তরে দেখা দিতে শুরু করেছে বিজয়ের ঊর্মিমালা।

শেয়ার করুন