২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৩:৫৪:১৪ অপরাহ্ন


২০২২ সালে ইমিগ্রেশন নিয়ে ১০ সিদ্ধান্ত
ডাকা ও টাইটেল ৪২ সমাধান না করেই কংগ্রেস অধিবেশনের ইতি
মঈনুদ্দীন নাসের
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-১২-২০২২
ডাকা ও টাইটেল ৪২ সমাধান না করেই কংগ্রেস অধিবেশনের ইতি


২০২২ সাল ইমিগ্রেশনের ইতিহাসে ইমিগ্রেশন আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে এক উত্তেজনাকর সময় ছিল। একদিকে এই বছর সবচেয়ে বেশি স্মরণীয় হবে বাইডেন প্রশাসনের বিগত ট্রাম্পের আমলের ইমিগ্রেশন-সংক্রান্ত গৃহীত ব্যবস্থা গুটিয়ে নেয়া ও অন্যদিকে টেক্সাস ও ফ্লোরিডা গভর্নরের পাবলিসিটি স্ট্যান্ট যে, বাইডেন প্রশাসন ইমিগ্রেশন আইন বলবত করতে কিছুই করছে না বলে হট্টগোল বা মিথ্যা প্রচারণা।

২০২২ সালে ইমিগ্রেশন-সংক্রান্ত অনেক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তার মধ্যে বিশেষ দশটি বিষয় নিয়ে এখানে আলোচিত হয়েছে বছরান্তে।

১. বাইডেন প্রশাসন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন-সংক্রান্ত আইন তুলে নিতে প্রচ- প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ট্রাম্প আমলের টাইটেল ৪২ তুলে দেয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। এই টাইটেল ৪২ হলো- কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়তে পারে এ অজুহাতে ইমিগ্র্যান্টদের আমেরিকায় প্রবেশের পূর্বে মেক্সিকোতে আটক রাখা সংক্রান্ত বিধি। সুপ্রিম কোর্ট গত সপ্তাহে টাইটেল ৪২ আদেশ পরিসমাপ্তি করতে হবে- এ সংক্রান্ত এক আদেশ স্থগিত করে। শুধু রক্ষণশীলরা নয়, এই টাইটেল ৪২ তুলে নিতে অনেক ডেমোক্রেটও নার্ভাস হয়ে পড়ে। ৪ জন সিনেটর বর্ডার ক্রস করে আসা ইমিগ্র্যান্টদের কীভাবে রাখবে এ সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চায়। টাইটেল ৪২ তুলে দিলে তা কীভাবে ম্যানেজ করা হবে।  এই টাইটেল ৪২ গত সপ্তাহে বুধবার উঠে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার পূর্বেই ইউএস সুপ্রিম কোর্টের চিফ জাস্টিস জন রবার্টস হস্তক্ষেপ করেন। তিনি ইনজাঙ্কশন ফ্রিজ করে দিয়ে টাইটেল ৪২-এর ওপর শুনানির কথা বলেন। বাইডেন প্রশাসন টাইটেল ৪২ বাতিলের দাবি জানিয়েছিল।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট ট্রাম্প আমলের মাইগ্র্যান্ট প্রোটেকশন প্রটোকল (এমপিপি) কর্মসূচি ক্রমান্বয়ে তুলে দেয়ার কথা বলেছে। এই এমপিপির মাধ্যমে হাজার হাজার মাইগ্র্যান্টকে দীর্ঘসময়ের জন্য মেক্সিকোতে কাটানোর ব্যবস্থা করেছিল। এই ব্যবস্থা অনেক ব্যয়বহুল বলে হোমল্যান্ড সেক্রেটারি আলেজান্দ্রো মেওরকাস উল্লেখ করেন। আরো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তারপরও শতচেষ্টা করেও ট্রাম্পের টাইটেল ৪২ কেন্দ্রিক ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা তুলে দেয়া যায়নি। 

২. স্টেট গভর্নররা মাইগ্র্যান্টদের দক্ষিণ থেকে উত্তরে নিয়ে এসে ফেডারেল ইমিগ্রেশন আইন প্রয়োগে ঘাটতির অভিযোগ করেছেন। আর তাতে মাইগ্র্যান্টদের দুঃখ ও তাদের প্রতি মানবতাহীনতা প্রকাশ পেয়েছে। এমন সব অমানবিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে যে, তাদের বাসে করে নিউইয়র্ক শহরে, ওয়াশিংটন ডিসিতে এবং ডিস্যান্টিস পাঠিয়েছে মার্থার ম্যাসাচুসেটসে অবস্থিত ভিনিইয়ার্ডে। এই ভিনিইয়ার্ড ধনী ও খ্যাতিমানদের একটি ট্যুরিস্ট এলাকা। এক মামলায় বলা হয়, মাইগ্র্যান্টদের ট্রিকস করে বিমানে উঠিয়ে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। তারা সেখানে এসে আটকে পড়েছে। এই ব্যবস্থা ছিল ফ্লোরিডায় গভর্নর ডিস্যান্টিসের পুনর্নির্বাচনের ক্যাম্পেইন। 

৩. সুপ্রিম কোর্ট ও ইমিগ্রেশন নিয়ে বলতে গেলে বলতে হয়, সুপ্রিম কোর্ট ২০২১ সালের ইমিগ্রেশন সিদ্ধান্তসমূহ পর্যালোচনা করেছে। ২০২১ সালে তেমন কোনো বড় ধরনের ইমিগ্রেশন সিদ্ধান্ত হয়নি। ২০২১ সালে কোর্ট ৫টি সিদ্ধান্ত নিষ্পত্তি করেছে। যেটুকু ভিন্ন হয়েছে তাহলো- ৫টি সিদ্ধান্তের মধ্যে ৪টি সিদ্ধান্ত এমন হয়েছে যে, তাতে ইমিগ্র্যান্টদের পক্ষের ব্যবস্থা বাদ পড়েছে। এতে মনে হয় সুপ্রিম কোর্ট একটি সুপার রক্ষণশীল কোর্ট। এই ২০২১ সালের দেয়া সুপ্রিম কোর্টের রায় বেশিদিন কেউ মনে রাখবে না বলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন।

৪. তারপর সান অ্যান্তোনিও সীমান্তে মৃত্যুর ঘটনার মর্মান্তিকতা সারা দেশকে ভাবিয়ে তোলে। ট্রাকের মধ্যে কর বয়ে আনা মাইগ্র্যান্টদের মৃত্যু পুরো জাতিকে শোকাহত করে। তাতে সমসাময়িক মাইগ্রেশন ফ্লো’র অস্বাভাবিকতা ভাবিয়ে তোলে। সান অ্যান্তোনিও মৃত্যু ঘটনা অনেক ঘটনার একটি। সীমান্তে মৃত্যু অনেকটা নিয়মিত বিষয়। অনেকে আছেন যারা সীমান্ত অতিক্রম করতে গিয়ে মরেছে, মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। এই বছর গোড়ার দিকে রিপোর্ট হয়েছে, মেক্সিকো-আমেরিকা সীমান্তে ৭৫০ জন মাইগ্র্যান্ট মারা গেছে। 

৫. মাইগ্রেশন ব্যাপারে কঠোর মনোবৃত্তির প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেছে, তিনি আবার ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। 

৬. সমগ্র বিশ্ব ইউক্রেনিয়ান রিফিউজি যারা স্বদেশ থেকে পালিয়ে এসেছে, তাদের স্বাগত জানিয়েছে। 

৭. ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উত্থান-পতন অবস্থা নতুন রিফিউজি সৃষ্টি করেছে। ভেনেজুয়েলা, নিকারাগুয়া ও কিউবা থেকে ২ লাখ ৩ হাজার লোক মাইগ্র্যান্ট হয়েছে বলে ইমিগ্র্যান্ট এজেন্টরা জানিয়েছে। নিকারাগুয়া ও কিউবা থেকে এসেছে ৫৬ হাজার। একমাত্র আগস্ট মাসেই এই হিসাব পাওয়া যায়। 

৮. ট্রাম্পের অন্যতম উপদেষ্টা স্টিভ বেনন বর্ডার ওয়াল নির্মাণে অর্থায়নের জন্য ফান্ড তোলার এক ফ্রড মামলায় গ্রেফতার হন। ২০২০ সালে একই কারণে তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে মুক্তি দেয়। 

৯. ২০২২ সালে ১৫ জুন ‘ডাকা’ পলিসি বাস্তবায়নের ১০ বছর পূর্তি ছিল। ‘ডাকা’ এক প্রধান ইমিগ্রেশন নীতি। তা ধরে রাখতে বাইডেন প্রশাসন বহুধরনের সমস্যার মোকাবিলা করে। 

১০. আরেকটি সংবাদ যেমন যুক্তরাজ্য তার অ্যাসাইলাম আবেদনকারীদের রোয়ান্ডায় ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে ধরনের সংবাদ যুক্তরাষ্ট্রে তেমন প্রাধান্য পায়নি। 

২০২২ সালের শেষের দিকে দ্বিপক্ষীয় ইমিগ্রেশন সমাধান অনেকটা অকেজো হয়ে পড়েছে।

টাইটেল ৪২ ও ডাকা সমস্যার সমাধান না করে কংগ্রেসের এ অধিবেশন শেষ হয়েছে। 

শেয়ার করুন