০৪ মে ২০১২, শনিবার, ১০:০৮:১২ পূর্বাহ্ন


দেশকে ড. বদিউল আলম মজুমদার
আসলে কি হবে?
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৬-২০২২
আসলে কি হবে? ড. বদিউল আলম মজুমদার/ছবি সংগৃহীত


ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, কুমিল্লা সিটি কর্পোারেশনের নির্বাচন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনের (সিইসি)’র এমন বক্তব্য পুরো জাতিকেই হতাশ করেছে। যেখানে একটি স্থানীয় নির্বাচন যার মাধ্যেম একটা সরকার পরিবর্তনও হবে না সেখানে নোটিশ দিয়েও যদি সংসদ সদস্যকে এলাকা ত্যাগে বাধ্য না করা যায়। তাহলে পুরো জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বেলায় কি হবে? এখানেই যদি ইসি কিছু করতে না পারেন তাহলে বলতে হবে আসলে কি হবে?  

কুমিল্লা সিটি কর্পোারেশনের নির্বাচনের পাশাপাশি আগামীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ড. বদিউল আলম মজুমদারের সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেছেন।  

ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশের একজন অর্থনীতিবিদ, উন্নয়নকর্মী, রাজনীতি বিশ্লেষক, স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। তিনি বাংলাদেশে সিভিল সোসাইটি বা নাগরিক সমাজের একজন নেতৃস্থানীয় প্রতিনিধি। ১৯৯৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসার আগে ড. বদিউল আলম মজুমদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। দেশে ফিরে ড. মজুমদার ‘ইউএসএআইডি’ পরিচালিত ‘পলিসি ইমপ্লিমেন্টেশন এনালাইসিস গ্রুপ’ প্রকল্পে চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর হিসেবে প্রায় দু বছর (১৯৯২-৯৩) কাজ করেন। ১৯৯৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি যুক্ত হন আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাব্রতী সংস্থা ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’-এর সঙ্গে। 

২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ড. মজুমদারকে ‘বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী’ (বার্ড)-এর বোর্ড অব গভর্নরস এর সদস্য করেন। একই বছর তিনি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান গতিশীল ও শক্তিশালীকরণ কমিটি’র একজন সম্মানিত সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি দলনিরপেক্ষ নাগরিক সংগঠন ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। 

দেশ: নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল আনুযায়ী আগামী ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশেনে নির্বাচন কমিশন যে ধরণের ব্যবস্থা নিয়েছে তাতে কি ধারণা করা যায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করা তাদের পক্ষে সম্ভব? 

ড. বদিউল আলম মজুমদার : না না এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কুমিল্লা সিটি কর্পোবেশন নির্বাচনই-বা কেমন হবে তা-ও এখনই বলা যাচ্ছে না। কিন্তু এই নির্বাচন পূর্বাভাস দেবে, ভবিষ্যৎ কেমন হবে, এই কমিশনের সক্ষমতা কতটুকু। জানা যাবে তাদের সাহসীকতা ও বলিষ্ঠততা। এবং এর পাশাপাশি ক্ষমতাসীন সরকারের আচরণ। সরকার আসলে নির্বাচন কমিশনে প্রভাব বিস্তার করতে চায় কি-না? প্রশাসন ও আইন শৃংখলা পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করে কি-না? এর মাধ্যমে বোঝা যাবে আমরা কোন দিকে যাচ্ছি। তবুও নিশ্চিত করে বলা যায় না।  

দেশ: এখন পর্যন্ত যা দেখলেন তাতে কি মনে হয়?

ড. বদিউল আলম মজুমদার : যা দেখলাম তাতে কিছুটা আশা কিছুটা হতাশাও লক্ষ্য করেছি। নির্বাচন কমিশন আগে থেকেই বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছেন,যাতে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় থাকে। এটা নি:সন্দেহে ভালো কথা। ম্যাজিস্টেট নিয়োগ করেছেন। যাতে বিশৃংলা না হয়। এর মাধ্যমে তারা শান্তি নিশ্চিত করতে চাইছে, এটা গুরুত্বর্পর্ণ। কিন্তু এটাই একমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচনের মানদন্ড নয়। এখন আবার দেখা যাচ্ছে প্রধান নির্বাচন কমিশন তাদের নিরাশা ব্যক্ত করছেন তাদের ক্ষমতা নিয়ে। যেমন একজন সংসদ সদস্যকে তারা নোটিশ দিয়েছেন এলাকা ছাড়ার জন্য। অথচ সংসদ সদস্য এখানে কর্নপাত করছে না। 

অন্যদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশন বলছেন তাদের করার কিছু নেই। তিনি এব্যাপারে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। সিইসি’র এমন বক্তব্য পুরো জাতিকেই হতাশ করেছে। যেখানে একটি স্থানীয় নির্বাচন যার মাধ্যেম একটা সরকার পরিবর্তনও হবে না সেখানে নোটিশ দিয়েও যদি সংসদ সদস্যকে এলাকা ত্যাগে বাধ্য না করা যায়  তাহলে পুরো জাতীয় নির্বাচনের বেলায় কি হবে? এটাই যদি ইসি করতে না পারেন তাহলে আসলে কি হবে?  যখন ক্ষমতার রদবদল হবে। বর্তমানে আইন শৃংখলা বাহিনী এবং প্রশাসন যাদের অতীত নানান ভুমিকা রয়েছে।  তাদের নিয়েতো অনেক নিয়ে কথা আছে অতীতে। ঔই সময় তাদের অবস্থান কি হবে? এসব-ব্যাপারগুলি মাথায় রেখেই বলতে হচ্ছে আসলে সন্দেহ দেখা দিয়েছে সিইসির এধরণের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। 

দেশ: কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয় ইসি। কিন্তু কুমিল্লা-৬ আসনের এই সংসদ সদস্য তা না মানায় সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন ইসির কিছুই করার নেই। এমন বক্তব্যের ব্যাপারে আপনি কি বলেন?

ড. বদিউল আলম মজুমদার : সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের যদি করার কিছু না থাকে তাহলে আর কার কি করার ক্ষমতা আছে?  উনারা সাংবিধানিকভাবে একটা স্বাধীন প্রতিষ্টান। ইসির দায়িত্ব হলো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা। জনগণের স্বার্থে এবং জাতীয় স্বার্থে। তাদের দায়বদ্ধতা কিন্তু এদেশের জনগণের কাছে। জনগণের স্বার্থরক্ষাই তাদের দায়িত্ব। ইসির হাত কিন্তু অনেক লম্বা। তাদের অগাধ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

এসব ক্ষেত্রে কমিশন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। সরকারি সুবিধাভোগী কেউ কারও পক্ষে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছেন-এমন প্রতীয়মান হলে ইসি প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন নিরপেক্ষভাবে পরিচালনার ব্যাপারে উচ্চ আদালতের রায় আছে। নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনে বিধি বিধানও সংযোজন করতে পারে। অন্যদিকে কেই আচরণ বিধি লংঘন করলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও বিধান আছে। এতো ক্ষমতা থাকা সত্বেও তারা যদি ব্যবস্থা না নেন তা হবে হতাশাব্যাঞ্জক। তার এধরণের বক্তব্যে আমাদের আশাবাদি হওয়াটা দুরহের। 

দেশ: তাহলে আপনি কি মনে করে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেই যদি ইসি কোনো ভুমিকা রাখতে না পারেন সেক্ষেত্রে আগামীতে তিনশ আসনে নির্বাচনে তারা আসলে কি করবেন? কতটা নিরপেক্ষ থেকে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবেন?

ড. বদিউল আলম মজুমদার : এখন যদি স্থানীয় একজন মাননীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে একটি নির্দেশ বা অনুরোধ যাই বলি তা মানাতে তারা অসমর্থ হন তাহলে আর কি বলারই আছে। সামনে তো জাতীয় সংসদ নির্বাচন আছে। জাতীয় নির্বাচনে যদি পুরো প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারি দল, বিরোধী দলসহ অন্যরা নির্বাচন কমিশনের আদেশ অমান্য করার চেষ্টা করে, তখন পরিস্থিতি সামাল দেবেন কিভাবে? তাহলে নাগরিকেরা কোথায় যাবে! তখন তাদেরকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন ইসি ?  সে ব্যাপারে তো প্রশ্ন থেকেই যায়। 


শেয়ার করুন