২৮ মার্চ ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৪:১৩:৪১ অপরাহ্ন


বাংলাদেশি আমেরিকান এনওয়াইসিটির জমজমাট প্রথম বার্ষিক ফ্যামিলি নাইট
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০১-২০২৩
বাংলাদেশি আমেরিকান এনওয়াইসিটির জমজমাট প্রথম বার্ষিক ফ্যামিলি নাইট অনুষ্ঠানে এনওয়াইসিটির অনুষ্ঠানে অতিথি ও আয়োজকবৃন্দ


আমেরিকার বাণিজ্যিক রাজধানী এবং বিশ্বের সেরা ব্যয়বহুল সিটি হচ্ছে নিউইয়র্কে। এই নিউইয়র্কেই বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের মানুষের বাসবাস। প্রায় ২০০ ভাষার মানুষ এই সিটিতে বাসবাস করেন। তার মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশিরা। এই সিটির যাতায়াতের প্রধান অবলম্বন হচ্ছে নিউইয়র্ক সিটি ট্রানজিট (এমটিএ)। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাস করেন প্রায় ৮.৪৬৮ মিলিয়ন মানুষ। যার মধ্যে ট্রেন ব্যবহার করেন প্রতিদিন প্রায় ২.৪ মিলিয়ন মানুষ এবং বাস ব্যবহার করেন ১.২ মিলিয়ন মানুষ। নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সাথে নিউইয়র্কের বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করার সংখ্যাও বাড়ছে বাংলাদেশি আমেরিকানদের। নিউইয়র্ক সিটিতে যাতায়াতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাহন হচ্ছে নিউইয়র্ক সিটি ট্রানজিট। যাকে সংক্ষেপে বলা হয়ে থাকে এমটিএ। এমটিএতে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি এখন কর্মরত আছেন। এমটিএতে কতজন বাংলাদেশি বর্তমানে কাজ করছেন তার সঠিক কোনো তথ্য জানা না থাকলে জুবায়ের আহমেদ জানান, এমটিএ বাংলাদেশিদের সংখ্যা হবে প্রায় ৭৫০ থেকে ৮০০ জনের মতো। অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে বাংলাদেশি আমেরিকানরাও প্রতিদিন নিউইয়র্ক সিটির সর্বসাধারণকে সেবা দিয়ে আসছেন। মানব সেবাই বড় সেবা সেই বাক্যটিকে ব্রতী হিসেবে নিয়ে তারা প্রতিদিন কাজ করে যাচ্ছেন। যারা এমটিতে কাজ করছেন তারা একটি সংগঠন করেছেন। আর এই সংগঠনের নাম হচ্ছে- বাংলাদেশি আমেরিকান এনওয়াইসিটি এমপ্লøয়িস। অনুষ্ঠানের নাম দেয়া হয়েছে ফার্স্ট এনওয়াইসিটি ফ্যামিলি নাইট ২০২৩। প্রথম অনুষ্ঠানেই তারা সফল এবং সার্থক। কারণ এই অনুষ্ঠানে এমটিএ’র সকল উইনিয়নের সাবেক এবং বর্তমান নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন কমিউনিটির সকল শ্রেডু-পেশার লোকজন। সেই সাথে এমটিতে কর্মরত সকলের পরিবার-পরিজন। পুরো অডিটোরিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় নির্ধারিত সময়ের আগেই। বাংলাদেশি অনুষ্ঠানগুলোতে সাধারণত এই ধরনের চিত্র দেখা যায় না। অন্যান্য অনুষ্ঠানে নতুন প্রজন্মের উপস্থিতি দেখা না গেলেও এই অনুষ্ঠানে প্রবাসে জন্ম নেয়া এবং বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো।

বর্ণাঢ্য এবং জমজমাট অনুষ্ঠানটি গত ১৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় উডসাইডের গুলশান টেরেসে অনুষ্ঠিত হয়। ইভেন্ট অর্গানাইজারের মধ্যে ছিলেন আজাদ তালুকদার, রোকসানা বেগম, রুশদি হক, জুবায়ের আহমেদ, শামীম আহমেদ, সাফওয়ান চৌধুরী, সাইফ আজাদ, দীপক দাস, গোপাল দাস, এনামুল হক জনি, মোহাম্মদ মাসুম, নাজিম উদ্দিন, ফারহানা চৌধুরী এবং আহনাফ আলম। ফ্যামিলি নাইটের উদ্বোধন করেন আজাদ তালুকদার। এই সময় সব আয়োজক উপস্থিত ছিলেন। কয়েক পর্বের এই অনুষ্ঠানের তারেক আহমেদ ও আহনাফ আলমের সঞ্চালনায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টিডব্লিউ লোকাল-১০০ এর সাবেক প্রেসিডেন্ট টনি ওটানো, বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডেভিড, ইউটিএলের প্রেসিডেন্ট মারিও বুচ্যারি, ক্যানেথ বালিয়ার, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন লু, নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম এবং বাংলাদেশি আমেরিকান কাউন্সিল ওম্যান শাহানা হানিফ, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের ডেপুটি কনসাল জেনারেল নাজমুল হাসান, কুইন্স ডেমোক্রেটিক অ্যাট লার্জ ও বিশিষ্ট অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, পুশিল অফিসার লুথ্যারেন্ট কমান্ডার শামসুল হক, লুথ্যারেন্ট ফখরুল ইসলাম, লুথ্যারেন্ট মাহবুবুর খান, নিউইয়র্ক সিটির ডেপুটি পাবলিক অ্যাডভোকেট তারিক আহমেদ।

অনুষ্ঠানে কাউন্সিল ওম্যান শাহানা হানিফ বলেন, আমি আপনাদের সাথে কাজ করতে চাই। কারণ আমার কাজই হলো আপনাদের নিয়ে। আপনাদের সহযোগিতায় আমি প্রথম মুসলিম এবং প্রথম বাংলাদেশি আমেরিকান কাউন্সিলওম্যান নির্বাচিত হই। তিনি বলেন, আমি আমার বাবা-মা’র গর্বিত সন্তান। কারণ তারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন, যে কারণে আমি আজকে এখানে পৌঁছতে পেরেছি। তিনি বলেন, আমি ইতিমধ্যে ৬টি বিল পাস করিয়েছি। আগামীতে ইমিগ্র্যান্ট কমিউনিটির স্বার্থে কাজ করতে চাই। তিনি বলেন, আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা এখানেই। তারপরেও আমি বাংলায় কথা বলছি। এটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের সন্তানদেরও বাংলা ভাষা এবং বাংলা সংস্কৃতির সাথে রাখবেন, যাতে করে তারা যেন শিকড়কে ভুলে না যায়।

ডেপুটি কন্সাল জেনারেল নাজমুল হাসান বলেন, আজকে এই অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আমার কাছে খুবই ভালো লাগছে। কারণ বাংলাদেশি আমেরিকানও এই দেশের বা এই সিটির উন্নয়নে কাজ করছে। তিনি বলেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে আপনারা সত্যিকারের বাংলাদেশের প্রতিনিধি। তিনি বাংলাদেশে বৈধপথে অর্থ প্রেরণ করার আহ্বান জানান এবং সেই সাথে নতুন প্রজন্মকে বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতি শেখানোর আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, আপনাদের যে কোন প্রয়োজনে কনস্যুলেট সবসময় পাশে থাকবে।

স্টেট সিনেটর জন লু এমটিতে কর্মরত বাংলাদেশিদের অভিনন্দন জানিয়ে তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

অ্যাটর্নি মইন চৌধুরী বলেন, আজকের অনুষ্ঠানটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আমার কাছে ভালো লাগছে। তিনি বলেন, আমি একজন অ্যাটর্নি হলেও আমি একজন রাজনীতিবিদ। আপনাদের যে কোনো কাজে আমি সহযোগিতা করতে চাই। তিনি অনুষ্ঠানে আয়োজকদের পরিচয় করিয়ে দেন।

জুবায়ের আহমেদ সংগঠনের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বলেন, এটা আমাদের প্রথম প্রয়াস। আশা করি আগামীতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে। তিনি অনুষ্ঠানকে সফল এবং সার্থক করার জন্য সকার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এ কে আজাদ তালুকদার সবাইতে স্বাগত জানিয়ে অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য এবং অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

ইউনিয়ন লিডাররা বলেন, যেসব বাংলাদেশি আমেরিকান এমটিতে কাজ করছে তাদের সকল সুবিধা নিশ্চিত করা হবে এবং তাদের চাকরিও নিশ্চিত করা হবে। তারা বলেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বাড়ছে, আগামীতে এমটিতেও বাংলাদেশিদের সংখ্যা বাড়বে।

পুলিশ অফিসাররাও এমটিতে যারা কাজ করছেন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে এমটিএতে প্রথম বাংলাদেশি (পুরুষ) মোহাম্মদ আলী বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। তিনি এমটিতে ১৯৮৭ সালে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি ২০১৩ সাল পর্যন্ত এমটিতে কর্মরত ছিলেন। প্রথম মহিলা নীনা রহমানকেও ক্রেস্ট এবং সম্মাননা প্রদান করা হয়। তিনি ১৯৯৬ সালে এমটিএতে যোগদান করেন এবং ২০২১ সালে অবসরগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। পরিবেশনায় ছিলেন এনওয়াইসিটি পরিবারের সদস্যরা।

অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে সংগীত, নৃত্য, কবিতা আবৃত্তি ও কৌতুক পরিবেশন করেন গোপাল দাস, অপর্ণা রয়, সুপ্তি, সানভি, অশোক ব্যানার্জি, জামিলুর রহমান, অসীম সাহা, ইয়াসমীন রহমান, মাসতুল্লাহ, কাঞ্চন দাস, বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পী তনিমা হাদী, মিতু মাহমুদ। অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন তারেক আহমেদ।

শেয়ার করুন