২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৫:০২:১৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


নিষেধাজ্ঞা হালকাভাবে নেয়ায় আ.লীগে ক্ষোভ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-১০-২০২৩
নিষেধাজ্ঞা হালকাভাবে নেয়ায় আ.লীগে ক্ষোভ


যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের হালকা বক্তব্যের পাশাপাশি দায়সারা গোছের কথাবার্তায় অসন্তুষ্ট আওয়ামী সব পর্যায়েরই নেতাকর্মীরা। দলের শীর্ষ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মতো বিষয়টিকে কিভাবে এতো হালকাভাবে নিচ্ছে তা তাদের কাছে বিস্ময় লাগছে, পদে পদে হচ্ছেন বিব্রত। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে ক্ষুব্ধ নেতাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরামর্শ দিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। সুষ্ঠু নির্বাচনে কেউ বাধা দিলে তাকে ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র-এটাও বলে আসছে বেশ কয়েকদিন আগে থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে বর্তমানে খবর হলো ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ শুরু। নির্বাচনকে বাধা দেয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি ঘোষণার প্রায় চার মাসের মাথায় এই ভিসা নীতি প্রয়োগের ঘোষণা জানান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। তার ওই বিবৃতিতে উঠে এসেছে যে ভিসা নীতির আওতায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। 

এনিয়ে কে কি বলছেন?

এর আগে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে খোদ সরকারের শীর্ষ পদে আসীন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়ে দেন যে, ভিসা এবং নিষেধাজ্ঞার মতো বিষয়গুলো নিয়ে তারা চিন্তা করতে চান না। এতে বলা হয়, “কে আমাদের ভিসা দেবে না, কে আমাদের স্যাংশন দেবে, ওনিয়ে মাথাব্যথা করে কোন লাভ নেই। বলা হয়, “বিশ ঘণ্টা প্লেনে জার্নি করে, আটলান্টিক পার হয়ে, ঐ আমেরিকায় না গেলে কিচ্ছু আসে যায় না। পৃথিবীতে আরো অনেক মহাসাগর আছে, অনেক মহাদেশ আছে। সেই মহাদেশের সাথে মহাসাগরেই আমরা যাতায়াত করবো আর বন্ধুত্ব করবো। 

এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আমেরিকায় কয়জন মানুষ যায়। তারা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কি করবে। যারা গুলশান বনানীর বড় লোকের ছেলেরা তারাই আমেরিকায় যায়। তারা না গেলে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হবে না। দু-একজন মন্ত্রী না গেলেও ক্ষতি হবে না।

হালকা বক্তব্যের জবাবে অন্যরা যা বললেন

সম্প্রতি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকলে বর্তমানের বহু এমপি নির্বাচন করতে চাইবে না- এমন উক্তি করে বসেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান সাবেক এমপি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। আমেরিকার এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন সাবেক এই এমপি। এই প্রসঙ্গে তিনি একটি গণমাধ্যমে জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুশির বন্যা বয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ যে, এত আমেরিকার বিরুদ্ধে কথা বলছে, এত কথা না বলে রাস্তায় নামুক। আওয়ামী লীগের যদি এতই শক্তি থাকে, তা হলে মিছিল করুক। এটা তো করতে পারছে না। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো স্টেটমেন্টও দিতে পারছে না। শুধু প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। পার্থ আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর যাদের নিশিরাতের ভোটে এমপি হওয়ার ইচ্ছা ছিল, সে স্বপ্ন নষ্ট হয়ে গেছে। কারণ তারা বুঝতে পেরেছে, নিষেধাজ্ঞায় সারাদেশের ডিসি ও ইউএনওরা চিন্তায় পড়েছেন। শুধু তাই নয়, অনেক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা চিন্তায় পড়েছেন তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। 

‘বাইডেনের সঙ্গে সেলফি কেন’ 

সম্প্রতি বন্ধু ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য নিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বাইডেনের ওপর কি স্যাংশন দিতে পারেন? যা মনে হয় তাই বলেন। কয়েক দিন আগে কাদের বললেন ‘তলে তলে আপস’ হয়ে গেছে। মানে কী? আপস করে কি স্যাংশন র‌্যাবের ওপর থেকে উঠে গেছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞা কি ওঠে গেছে। বলছেন আপস হয়ে গেছে। আবার বলছেন, আমরাও স্যাংশন দেব। এগুলো বলতে লজ্জা করে না তার। তিনি আরও বলেন, তারা বলল আমেরিকা ভারতকে ছাড়তে পারবে না। আর আমরা ভারতের সঙ্গে আছি। তা হলে আমার প্রশ্ন-ভারতের সঙ্গে থাকলেই যদি কাজ হয়, তা হলে বাইডেনের সঙ্গে কেন সেলফি তোলা লাগে? কেন বাইডেনের সঙ্গে সেলফি তুলতে হয়- এটি আমার প্রশ্ন। 

একটি খবর ও বলির পাঠা কারা হচ্ছেন?

সম্প্রতি একটি দৈনিকের খবর হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অর্থ যারা পাচার করেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে দেশটি। বাংলাদেশের পাঁচ শীর্ষ ব্যবসায়ীসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অংশ হিসেবে তাদের সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। এর মধ্যে এক জনের ব্যাংক হিসাব ও তিনটি বাড়ি জব্দ করা হয়েছে। আয়ের বৈধ উৎস জানাতে না পারায় যুক্তরাষ্ট্রের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের আওতায় এসব সম্পদ জব্দ করা হয়। পর্যায়ক্রমে এই তালিকা লম্বা হতে পারে বলে সংশিলিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। খবরে বলা হয় যে ১৫ ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফবিআই তদন্ত করেছে, তাদের মধ্যে এক জন সাবেক আমলা রয়েছেন। তিনি স্ত্রীর নামে একাধিক বাড়ি কিনেছেন নিউইয়র্কে। যুক্তরাষ্ট্রে তার একাধিক বাড়িসহ বিভিন্ন সম্পদ রয়েছে। তার এই সমস্ত অর্জিত সম্পদ নিয়ে এফবিআই তদন্ত করছে। বর্তমানে চুক্তিতে থাকা এক জন পদস্থ কর্মকর্তারও একাধিক বাড়ির বিষয়টি এফবিআই তদন্ত করছে বলে জানা গেছে। যদিও এই কর্মকর্তা দাবি করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার কোনো সম্পদ নেই, যা আছে সেগুলো তার পুত্র ও স্ত্রীর। সেখানে বড় ধরনের চাকরি করেন এবং তাদের সম্পদ থাকতেই পারে। কিন্তু এফবিআই এ বিষয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান চালাচ্ছে বলেও নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক দুই কর্মকর্তা রয়েছেন এই ১৫ জনের তালিকায়।

আর এর বাইরে একটি পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে যে, মূল্যস্ফীতি, প্রবাসী আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, খেলাপি ঋণ, রপ্তানি, রাজস্ব কোনো সূচকের অবস্থাই সন্তেষজনক নয়। গত এক থেকে দেড় বছরে প্রায় প্রতিটি সূচকের শক্তিশালী অবস্থান দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়েছে। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অর্থনীতির বেশির ভাগ সূচকের আরও অবনতি হয়েছে। সব মিলিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এখন হুমকির মুখে। আবার চলতি অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর-এই তিন মাস জাতীয় নির্বাচনের সময়। রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে। নির্বাচনের সময়ে এমনিতেই ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি শ্লথ থাকে। দেখা দেয় নানা ধরনের অনিশ্চয়তা। সব মিলিয়ে অর্থনীতির বেসামাল অবস্থার দ্রুত উন্নতির আশা দেখছেন না অর্থনীতিবিদেরা। কিন্তু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহলের মতে, এতোসব নেতিবাচক খবরের পরেও সরকারের শীর্ষ কি করে বলে বসেন, আমেরিকায় কয়জন মানুষ যায়। তারা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কি করবে? কিংবা যারা গুলশান বনানীর বড় লোকের ছেলেরা তারাই আমেরিকায় যায়। তারা না গেলে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হবে না? একারণেই এখন শীর্ষ নেতাদের মতে প্রশ্ন উঠেছে দলের কয়েকজন শীর্ষরা এসব কথা বলে আসলে কাকে সন্তুষ্ট করতে চাইছেন? কেনো এসব বলছেন? পদ-পদবির আশায় না-কি দলের কফিনে শেষ পেরেকটি মারার জন্য-এমন প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে আ.লীগের নেতাকর্মীদের মনে? তারা মনে করেন  নিষেধাজ্ঞার তালিকায় কি কেবল দু’একজন ব্যবসায়ী, শিল্পপতি বা আমলা রয়েছেন? তারপরেও প্রশ্ন হচ্ছে ভিসা নীতির আওতায় আসা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের যেসব সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন তারা কারা? অতীতে তারা তো যা যা করেছেন সবই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্বার্থেই। তাই প্রশ্ন উঠেছে খোদ আওয়ামী লীগ এখন বিপদে পড়ে তাদের একসময়ের ঘনিষ্ঠদের বলির পাঠা করতে চাইছে?

শেয়ার করুন